ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মেডিক্যাল বর্জ্য

প্রকাশিত: ২০:৪২, ৮ অক্টোবর ২০২০

মেডিক্যাল বর্জ্য

মহামারী করোনাভাইরাসের দুঃসহ সংক্রমণে সারাদেশ বিপন্ন এবং ঝুঁকিতে। আক্রান্ত, মৃত এবং সুস্থতার হিসাব বাদ দিয়েও বলা যায় রোগটির কারণে হরেক রকম দুর্বিপাক চারপাশের মানুষদের বিচলিত করে রাখছে। বহুল সংক্রমণ এই ব্যাধিটিকে ঠেকানোর জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ আসছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং অধিদফতর থেকে। আক্রান্ত হওয়ার চাইতেও বেশি জরুরী রোগ-বালাই থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা। ফলে প্রয়োজন হয়ে পড়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবহারবিধি। সঙ্গত কারণেই উঠে আসে মাস্ক, পিপিই, গ্লাভস এবং গগলস ব্যবহার ছাড়াও পরিবেশ দূষণকেও যথাসম্ভব ঠেকানো। একবার ব্যবহারযোগ্য এমন সব স্বাস্থ্য পণ্য বর্জ্য হিসেবে পরিণত হয়ে আশপাশের নির্মল প্রতিবেশকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। চিকিৎসা পণ্যের বর্জ্য সব থেকে বেশি দৃশ্যমান হয় হাসপাতালগুলোতে। যেখানে শুধু রোগীরাই নয়, চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদেরও সুরক্ষা পণ্য ব্যবহার করতে হয় সংক্রমণ প্রতিরোধে। পরে তা বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেয়া হলেও ব্যবস্থাপনার চরম গাফিলতিতে সিংহভাগ বর্জ্যই পারিপার্শ্বিক দূষণ প্রক্রিয়াকে বিপন্ন অবস্থায় নিয়ে যায়। এমন তথ্য উঠে এসেছে ব্র্যাকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে। ব্র্যাক বলছে, কোভিড-১৯ এর কারণে উৎপাদিত চিকিৎসা পণ্যের যে বর্জ্যস্তূপ তার ৯০ ভাগই অব্যবস্থাপনার যাঁতাকলে পড়ে পরিবেশকে সমূহ ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। আবার অনেকের বাসা বাড়িতেও স্বাস্থ্য সুরক্ষার যে বর্জ্য তৈরি হচ্ছে তা সিটি কর্পোরেশনের আবর্জনার স্তূপের সঙ্গে মিলে-মিশে যাচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশ দূষিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা সতর্ক এবং সাবধান করছেন সবাইকে। করোনাকালীন সময়ে হাসপাতাল ও বাসা বাড়িতে প্রায় সমপরিমাণ মেডিক্যাল বর্জ্য তৈরি হয়। কিন্তু তা স্বাস্থ্যসম্মত বিধিতে নিরাপদ দূরত্বে নিঃশেষ করে দেয়ার চিত্র দৃশ্যমান নয়। অব্যবস্থাপনার আবর্তে পড়া মেডিক্যাল বর্জ্যকে যথার্থ উপায়ে নির্মূল করার বিধিও অতি আবশ্যিকভাবে পালন করতে হবে। তা না হলে জনস্বাস্থ্যঝুঁকিকে মারাত্মক অবস্থায় নিয়ে যেতে সময় লাগবে না। সাবধান করা হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবার মান অক্ষুণ্ণ রাখতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপরও নীতিমালা প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরী। এ ব্যাপারে ব্র্যাকের কিছু পরামর্শ ও নির্দেশনা এসেছে বর্জ্যকে যথাযথভাবে নিঃশেষ করার স্বাস্থ্যসম্মত বিধি। যেমন, সব বর্জ্যই কোভিড-১৯ এর মেডিক্যাল বর্জ্য নয়। সুতরাং প্রথমেই তাদের আলাদা করে চিহ্নিত করে মেডিক্যাল বর্জ্যকে সরিয়ে ফেলতে হবে। মনে রাখা সঙ্গত সাধারণ বর্জ্য কিন্তু খুব বেশি মারাত্মক হয় না। কিন্তু কোভিডের মতো অন্য সংক্রামক রোগের বর্জ্য পরিবেশের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতির কারণ হতে পারে, যা স্বাস্থ্য সুরক্ষার মানকে নিম্নগামী করে দেবে। কোন বর্জ্যই নিরাপদ নয়। এসব বিবেচনায় রেখে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আরও আধুনিক এবং শৃঙ্খলাবোধের অনুবর্তী হয়ে শতভাগ স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে পদ্ধতিগত কিছু বৈজ্ঞানিক কার্যবিধি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সংযুক্ত করা সময়ের দাবি। কারণ করোনা সংক্রমণের এমন দুর্যোগে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ ব্যাপারে ব্র্যাকের সুপারিশ হলো- পৃথককরণ, অটোক্লেভিং, রাসায়নিক নির্বীজন, পোড়ানো এবং স্যানিটারি ডিসপোজাল। সতর্ক থাকতে হবে সিটি কর্পোরেশনের সাধারণ আবর্জনার সঙ্গে মেডিক্যাল বর্জ্য যেন মিশে না যায়। বাসা বাড়ি থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী হাসপাতাল পর্যন্ত মেডিক্যাল বর্জ্যরে ব্যাপারে নিয়মিত নজরদারি রাখতে হবে। মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা পদ্ধতিগতভাবেই সুরাহা করা আবশ্যক। দেশের জনগণও তেমন প্রত্যাশা করে।
×