ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শাকিল আহমেদ মিরাজ

ঘোর সঙ্কটে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট

প্রকাশিত: ২৩:৩৮, ৭ অক্টোবর ২০২০

ঘোর সঙ্কটে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট

বেশ কিছুদিন ধরেই ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকার (সিএসএ) অভ্যন্তরে সঙ্কটের কথা শোনা যাচ্ছিল। সেটি এবার বিস্ফোরণে রূপ নিয়েছে। সম্প্রতি সিএসএ ভেঙে দিয়েছে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার। পাশাপাশি বোর্ডের কর্মকর্তাদের সরে দাঁড়াতে বলা হয়েছে। আর সিএসএ-এর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রীড়াঙ্গনের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংসস্থা দক্ষিণ আফ্রিকা স্পোর্টস ফেডারেশন এ্যান্ড অলিম্পিক কমিটি (এসএএসসিওসি)। ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার নিষিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসির নিয়ম হচ্ছে, কোন দেশের সরকার কোন অবস্থাতেই ক্রিকেট বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে না। এর আগে জিম্বাবুইয়ে সরকার বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ নেয়ায় তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। মূলত ২০১৯ সাল থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটে চলে আসা অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগ এনে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে অলিম্পিক কমিটি। এর আগে দুর্নীতির অভিযোগে গত মাসে বোর্ডের (সিএসএ) প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় থাবাং মুরকে। এসএএসসিওসি এখন একটি টাস্ক টিম গঠন করবে। সেই টাস্ক টিম বোর্ডের দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করবে। তাদের এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। এসএএসসিওসির বোর্ড সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বোর্ড (সিএসএ) ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সিএসএকে পাঠানো এক চিঠিতে এসএএসসিওসি জানায়, ক্রিকেট বোর্ডে অনেক অপশাসন ও অপকর্ম চলছে, তাতে ক্রিকেটের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। বোর্ডের শীর্ষ কর্তাদের কর্মকা মোটেও সন্তোষজনক নয়। তাদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে দেশের মানুষ, খেলোয়াড়, স্পন্সর ও সংগঠকরা। এসবের বিরুদ্ধে তদন্ত করতেই দায়িত্ব নিচ্ছে এসএএসসিওসি। কিন্তু এসএএসসিওসির এমন সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি বোর্ড (সিএসএ)। তারাও আইনী পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছে। গত বছর বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়া প্রোটিয়াদের মাঠের ক্রিকেটের অবস্থাও ভাল নয়। এরপর কোচিং ও ম্যানেজমেন্টে ব্যাপক হৃদবদল আনা হয়েছিল। এছাড়া কিছুদিন আগেই দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে শেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ কোটা প্রথার অভিযোগ পেয়েছে আইসিসি। সেটি তদন্ত করে দেখতে চাইছিল সংস্থাটি। তার মধ্যে হঠাৎই বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিল প্রোটিয়া সরকারের অলিম্পিক কমিটি। সব মিলিয়ে দেশটির ক্রিকেটে নেমে এসেছে ঘোর অমানিশার অন্ধকার। উল্লেখ্য, আগে বর্ণবাদের কারণে ১৯৭০ থেকে ১৯৯১ সালের নবেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী কোন দেশের ক্রিকেট বোর্ডের ওপর সেই দেশের সরকার হস্তক্ষেপ করলে ওই দেশকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষদ্ধ করা হয়। সম্প্রতি যেমনটা করা হয়েছিল জিম্বাবুইয়েকে। আইসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিষটির ওপর তীক্ষè নজর রাখা হচ্ছে। প্রোটিয়া ক্রিকেটেও নিষেধাজ্ঞা নেমে আসবে কি না, তৈরি হয়েছে সেই শঙ্কা। তবে এসএএসসিওসি দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়েছে তাদের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকান সরকার, এমনকি ক্রীড়া মন্ত্রণালয়েরও কোন সম্পর্ক নেই। তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন। অবশ্য দুর্নীতির বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে আইনী পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলছে সদ্য বিলুপ্ত প্রোটিয়া বোর্ড (সিএসএ)। এমনিতে করোনার কারণে আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে প্রোটিয়া ক্রিকেট। দক্ষিণ আফ্রিকার স্পোর্টস কনফেডারেশন এ্যান্ড অলিম্পিক কমিটি লিখিত পত্রের মাধ্যমে ক্রীড়ামন্ত্রী নাথি ম্যাথেথাকে জানিয়েছে ক্রিকেটের বিষয়গুলো নিয়ে তদন্তের চেষ্টা করতে গিয়ে তাদের ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকার (সিএসএ) কঠিন প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়েছে। সেই কারণে সিএসএর বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তা এবং নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে খেলার গৌরব ফেরানোর অনুরোধ জানানো হয়। এই কারণে আইসিসিতে সিএসএর সদস্যপদ হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ আইসিসির সংবিধানে সদস্য দেশগুলোর কমিটিতে সরকারের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে বলার কথা বলা রয়েছে। সিএসএ এখন পর্যন্ত ২০২০/২১ মৌসুমের জন্য কোন ঘরোয়া বা আন্তর্জাতিক সূচী ঘোষণা করেনি। সাধারণত অক্টোবরে শুরু হয় আফ্রিকান ক্রিকেটের মৌসুম। এবার কি হবে কেউ জানে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল কোভিড-১৯। তার সঙ্গে এখন প্রশাসনিক সমস্য যুক্ত হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার অভিজাত ক্রীড়া ফেডারেশনের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হচ্ছে স্যাসোক। সংস্থাটি এই মাসের শুরুতে ঘোষণা দিয়েছে যে, সিএসএর আর্থিক ও প্রশাসনিক কর্মকা নিয়ে তারা তদন্ত করতে চায়। এর মূল বিষয় ছিল আট মাসের তদন্ত শেষে যে রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাহী থাবাং মোরেকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত হয়েছে সে রিপোর্টটি আরও যাচাই-বাছাই করা। কিন্তু এর চরম বিরোধিতা করে সিএসএ। স্যাসোক মনে করে শুধুমাত্র মোরেকে উদ্দেশ্য করে এই রিপোর্টটি প্রণীত হয়েছে। বর্তমানে সিএসএর কোন সভাপতি ও স্থায়ী কোন প্রধান নির্বাহী নেই। চলতি মাসের শুরুতে যে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল সেটিও অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এই ঘটনায় পৃষ্ঠপোষকরা তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে ঘোর সঙ্কটে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট।
×