ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আয়ান আব্রাজ

শুরু থেকেই তারকা পতন

প্রকাশিত: ২৩:৩৮, ৭ অক্টোবর ২০২০

শুরু থেকেই তারকা পতন

করোনাভাইরাসের প্রকোপে পুরোপুরি ওলট-পালট হয়ে গেছে চলতি বছরের ক্রীড়াঙ্গনের ব্যস্তসূচী। নির্ধারিত সূচীতে মাঠে গড়ানো যায়নি কোন ইভেন্ট। বছরের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডস্লাম রোঁলা গ্যাঁরোর ইভেন্টটি হওয়ার কথা ছিল ২৪ মে থেকে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে তা স্থগিত করা হয়। অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত সপ্তাহে থেকে শুরু হয় ফরাসী ওপেন। তবে এবারের আসরের শুরু থেকেই তারকাদের পতন দেখে ভক্ত-অনুরাগীরা। বিশেষ করে মহিলা এককে। এবারের ফ্রেঞ্চ ওপেনের প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে যান ভেনাস উইলিয়ামস, জোহানা কন্টার মতো বিশ্ব টেনিসের অভিজ্ঞ দুই তারকা খেলোয়াড়। প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে এ্যানা ক্যারোলিনা চিমিয়েদলোভা ৬-৪ এবং ৬-৪ ব্যবধানে রীতিমতো উড়িয়েই দেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক শীর্ষ তারকা ভেনাস উইলিয়ামসকে। একই রাউন্ডের আরেক ম্যাচে আমেরিকান টেনিসের প্রতিভাবান খেলোয়াড় কোকো গফ ৬-৩ এবং ৬-৩ ব্যবধানে লজ্জাজনক পরাজয়ের স্বাদ উপহার দেন ব্রিটিশ টেনিসের সফল প্রতিনিধি জোহানা কন্টাকে। দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে ছিটকে গেছেন সেরেনা উইলিয়ামসও। তবে গোড়ালির ইনজুরির কারণে আকস্মিকভাবেই ফ্রেঞ্চ ওপেন থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন মার্গারেট কোর্টের সর্বাধিক ২৪ গ্র্যান্ডস্লামের রেকর্ড ছোঁয়ার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সেরেনা উইলিয়ামস। এবারের আসরের দ্বিতীয় রাউন্ডে তার বুলগেরিয়ার স্বেভেতানা পিরনকোভার বিপক্ষে কোর্টে নামার কথা ছিল। কিন্তু কোর্টে নামার আগে সংক্ষিপ্ত ওয়ার্মআপ করার সময় গোড়ালিতে ব্যথা অনুভব করেন। এরপরই তিনি বুঝে যান খেলা চালিয়ে যাওয়া তারপক্ষে সম্ভব নয়। যার ফলে তিনি নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন। সেরেনা বলেন, আমি মনে করি আগামী ৪-৬ সপ্তাহ আমার বসে থাকা দরকার এবং কোন কাজ করা উচিত নয়। কমপক্ষে ২ সপ্তাহ আমার বসে থাকা উচিত। চলতি বছরে ইউএস ওপেনের সেমিফাইলালে ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কার বিপক্ষে হেরে আসর থেকে বিদায় নিয়েছিলেন সেরেনা। ওই ম্যাচ খেলার সময়ই তিনি গোড়ালির ইনজুরিতে পড়েন। এরপর ফ্রেঞ্চ ওপেনের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে ৭২ মিনিটের লড়াইয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ের ১০২ নম্বর খেলোয়াড় ক্রিস্টি এ্যানের বিরুদ্ধে ষষ্ঠ বাছাই সেরেনা ৭-৬ (৭-২), ৬-০ গেমে জয়লাভ করলেও তার গোড়ালির পুরনো সমস্যা আবারও ফিরে আসে। এই ম্যাচশেষে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল কিভাবে নিজের যতœ নিচ্ছেন? সেরেনা উত্তরে জানিয়েছিলেন, সীমাহীন প্রার্থনা। হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। যদিও ইনজুরি থেকে সেরে ওঠার বিষয়ে আশাবাদী সেরেনা এও বলেছিলেন, সেরেনা ম্যাচশেষে বলেন, সব ম্যাচ তো আর নিখুঁত খেলা যায় না। সব পয়েন্ট, সব শট জিতব এ রকম নাও হতে পারে। নিজেকে সেটাই বোঝাই যাতে চাপটা কম থাকে। আমাকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলতে হবে, যেহেতু আমি সেরেনা। তবে সেই আশায় গুড়েবালি। কারণ এই বছর হয়তো তাকে আর কোর্টে দেখাই যাবে না। তার আগে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়ে ফ্রেঞ্চ ওপেন শুরুর আগেই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়েন তিন নম্বর র‌্যাঙ্কিংধারী ইউএস ওপেনের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জাপানের টেনিস তারকা নাওমি ওসাকা। করোনার কারণে এবার ফরাসী ওপেনে খেলেননি এক নম্বর খেলোয়াড় এ্যাশলে বার্টি। যে কারণে ভেনাস-কন্টা-সেরেনারা বিদায় নিলে ফেবারিটের তকমাটা গায়ে মাখানো থাকে সিমোনা হ্যালেপের। কিন্তু রোমানিয়ান তারকাও থেমে গেলেন চতুর্থ রাউন্ডে। ফরাসী ওপেন টেনিসে নারী এককে এবার সবচেয়ে বড় অঘটন ঘটান অবাছাই পোল্যান্ডের ইগা সুইয়াটেক সিমোনাকে হারিয়েই। শীর্ষ বাছাই রোমানিয়ার সিমোনা হ্যালেপকে এবারের আসরের চতুর্থ রাউন্ড থেকেই বিদায় দিলেন সুইয়াটেক। সুইয়াটেকের কাছে অসহায় ছিলেন হ্যালেপ। সরাসরি সেটে হ্যালেপকে ৬-১ ও ৬-২ গেমে পরাজিত করে এবারের আসরের সবচেয়ে বড় অঘটনের জন্ম দেন সুইয়াটেক। হ্যালেপকে হারিয়েই যেন শিরোপার জয়ের স্বাদ পাচ্ছেন বলে জানালেন সুইয়াটেক। তিনি বলেন, ‘শীর্ষ বাছাইকে হারাতে পারব তা ভাবতে পারিনি। ম্যাচের আগে চিন্তাও করিনি জিততে পারব। আমার মনে হয়ে শিরোপা স্বাদ পেয়ে গেছি।’ অন্যদিকে ম্যাচ হেরে হতাশ হ্যালেপ। তিনি বলেন, ‘দারুণ ছন্দে ছিলাম। কিন্তু এভাবে হেরে যাওয়াটা হতাশার।’ সেরেনা-হ্যালেপের মতো তারকারা বিদায় নেয়ার ফলে মহিলা এককে এবার শিরোপা জয়ের হাতছানি পেত্রা কেভিতোভার সামনে। সেই ইঙ্গিতটা দিলেন দীর্ঘ ৮ বছর পর আবারও ফ্রেঞ্চ ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট কেটে। সোমবার শেষ ষোলোর ম্যাচে চেক প্রজাতন্ত্রের এই তারকা খেলোয়াড় ৬-২ এবং ৬-৪ ব্যবধানে পরাজিত করেন ঝ্যাং শুয়াইকে। সেইসঙ্গে ২০১২ সালের পর প্রথমবারের মতো ফরাসী ওপেনের চতুর্থ রাউন্ডের বাধা অতিক্রম করেন দুইবারের উইম্বলডন জয়ী এই তারকা। পেত্রা কেভিতোভা ছাড়াও এদিন জয়ের স্বাদ পেয়েছেন লারা সিগেমুন্ড। চতুর্থপর্বের ম্যাচে জার্মান তারকা এদিন কেভিতোভার মতোই সরাসরি সেটে ৭-৫ এবং ৬-২ ব্যবধানে পরাজিত করেন স্পেনের পাওলা বাদোসাকে। ২০১১ সালে ক্যারিয়ারের প্রথম মেজর শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন পেত্রা কেভিতোভা। সে বছর উইম্বলডন জিতেই বিশ্ব টেনিসের পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এসেছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে একই টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় শিরোপা জেতেন তিনি। এই দুটি ট্রফিই তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন। গত বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে উঠেছিলেন তিনি। এর আগে ২০১২ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনে সর্বোচ্চ সেমিফাইনালে খেলেছিলেন পেত্রা কেভিতোভা। আর এক ম্যাচ জিতলে এবারও সেই প্যারিসের এই টুর্নামেন্টের শেষ চারে জায়গা করে নেয়ার হাতছানি তার। পুরুষ এককেও অঘটন দেখেছে এবার শুরুর দিকে। চোটমুক্ত হয়ে ২০১৭ সালের পর এই ফ্রেঞ্চ ওপেন দিয়েই ক্লে-কোর্টে নেমেছিলেন এ্যান্ডি মারে। কিন্তু লম্বা সময় পর তার ফেরাটা মোটেও সুখকর হয়নি। ফরাসী ওপেনের শুরুতেই বড় হারে বিদায় নিয়েছেন ইংল্যান্ডের এ টেনিস তারকা স্টানিস্লাস ওয়ারিঙ্কার কাছে হেরে।
×