ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লিভারপুলের জালে ৭, ম্যানইউর হজম ৬ গোল

প্রকাশিত: ২৩:২২, ৬ অক্টোবর ২০২০

লিভারপুলের জালে ৭, ম্যানইউর হজম ৬ গোল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ইউরোপিয়ান ফুটবলে নতুন মৌসুমের শুরু থেকেই একের পর এক চমক দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের বড় বড় ক্লাবগুলোও হালি হালি গোল হজম করছে। কিছুদিন আগে জার্মান জায়ান্ট বেয়ার্ন মিউনিখ পাঁচ গোল হজম করেছিল। এবার ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে একই রাতে বিধ্বস্ত হয়েছে দুই পরাশক্তি লিভারপুল ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। রবিবার রাতে ভিলা পার্কে স্বাগতিক এ্যাস্টন ভিলার কাছে ৭-২ গোলে হেরেছে ৩০ বছর পর প্রিমিয়ার লীগে চ্যাম্পিয়ন হওয়া লিভারপুল। আর ঘরের মাঠ ওল্ডট্র্যাফোর্ডে সফরকারী টটেনহ্যাম হটস্পারের কাছে ৬-১ গোলে উড়ে গেছে ম্যানইউ। দু’টি ম্যাচের ফলাফলেই অবাক হয়েছে গোটা ফুটবল দুনিয়া। প্রিমিয়ার লীগের ইতিহাসে দুই শীর্ষ দলের এত বড় ব্যবধানে হার এই প্রথম। এর মধ্য দিয়ে ইংলিশ ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম দুই সফল ক্লাব বড় লজ্জার জন্ম দিয়েছে। প্রিমিয়ার লীগে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ম্যানইউ কোন দলের কাছে ছয় গোল হজম করল। অন্যদিকে লিভারপুল ১৯৬৩ সালের পর প্রথমবারের মতো সাত গোলের লজ্জায় ডুবেছে। লিভারপুলকে বিধ্বস্ত করতে ওলি ওয়াটকিন্স একাই যথেষ্ট ছিলেন। ৮৮ বছরর ইতিহাসে ভিলার প্রথম কোন খেলোয়াড় হিসেবে দ্য রেডসদের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিকের রেকর্ড গড়েছেন ২৪ বছর বয়সী ইংলিশ ফরোয়ার্ড। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে লিভারপুল গোলরক্ষক আদ্রিয়ানোর ভুলে ভিলাকে এগিয়ে দেন ওয়াটকিন্স। ২২ মিনিটে আবারও তার গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ হয়। ৩৩ মিনিটে মোহাম্মদ সালাহ গোল করে লিভারপুলকে ম্যাচে ফেরানোর ইঙ্গিত দেন। কিন্তু বিরতির আগে জন ম্যাকগিনের ডিফ্লেকটেড শট ও ওয়াটকিন্সের হ্যাটট্রিকে ৪-১ গোলে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। চেলসি থেকে ধারে খেলতে আসা রস বার্কলির কাল ভিলার জার্সি গায়ে অভিষেক হয়েছে। অভিষেক ম্যাচটিকে স্মরণীয় করে রাখতেই ৫৫ মিনিটে ভিলার হয়ে পঞ্চম গোলটি করেন বার্কলি। ৬০ মিনিটে সালাহ আবারও গোল করেন। কিন্তু তাতে শুধু চ্যাম্পিয়নদের পরাজয়ের ব্যববধানই কিছুটা কমেছে। এরপর ম্যাচে ৬৬ ও ৭৫ মিনিটে ভিলা অধিনায়ক গ্রেলিস পরপর দুই গোল করে লিভারপুলের কফিনে সাত গোলের পেরেক ঠুকে দেন। এ নিয়ে লীগে তিনটি ম্যাচের প্রতিটিতেই জয় তুলে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ভিলা। অন্যদিকে চার ম্যাচে মৌসুমের প্রথম পরাজয়ে লিভারপুল নেমে গেলে পঞ্চম স্থানে। জার্মান কোচ জার্গেন ক্লপের অধীনে এই প্রথম এত বড় পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছে লিভারপুল। ম্যাচ শেষে ক্লপ বলেন, আমরা ভুল জায়গায় বলের পজিশন হারিয়েছি। নিজেদের সঠিকভাবে রক্ষা করতে পারিনি। ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পরও ম্যাচের আবহ বুঝতে ব্যর্থ হয়েছি। আমরাও সুযোগ সৃষ্টি করেছি। কিন্তু সেগুলোকে যথাসময়ে কাজে লাগাতে পারিনি। মূলত কাউন্টার এ্যাটাক থেকেই আমরা পিছিয়ে পড়েছিলাম। এই দায়ভার আমাদের সবার। ২০১৮ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে ছাঁটাই হওয়া জোশে মরিনহো এবার রেড ডেভিলসদের জালে ৬ গোল দিয়ে জ্বালা মিটিয়েছেন। অথচ ব্রুনো ফার্নান্দেজের পেনাল্টিতে ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে গিয়েছিল ম্যানইউ। এরপর প্রথমার্ধেই চার গোল হজম করে রেড ডেভিলসরা। যা ১৯৫৭ সালের পর প্রথম। চতুর্থ মিনিটে টানগাই এডোম্বেলের গোলে সমতা ফেরায় স্পার্সরা। সাত মিনিটে হ্যারি কেনের ফ্রিকিক থেকে স্পার্সদের এগিয়ে দেন দক্ষিণ কোরিয়ান ফরোয়ার্ড সন হেয়াং-মিন। ২৮ মিনিটে এরিক লামেলাকে বাজেভাবে ফাউলের অপরাধে এ্যান্থনি মার্শাল লালকার্ড পেলে ১০ জনের দলে পরিণত হয় স্বাগতিকরা। এতেই সর্বনাশ হয়ে যায় ম্যানইউর। ৩১ মিনিটে এরিক বেইলির ভুল পাসে কেন তৃতীয় গোল করেন। ৩৭ মিনিটে সার্জি অরিয়ারের ক্রসে খুব কাছে বল জালে জড়ান সন। ৫১ মিনিটে অরিয়ার স্পার্সদের পঞ্চম গোল উপহার দেন। এরপর ৭৯ মিনিটে স্পট কিক থেকে অধিনায়ক কেন নিজের দ্বিতীয় ও দলের ষষ্ঠ গোল করেন। ম্যাচশেষে টটেনহ্যাম কোচ জোশে মরিনহো বলেন, ম্যানইউর বিরুদ্ধে তাদেরই মাঠ ওল্ডট্র্যাফোর্ডে ৬-১ গোলের জয় আমাদের সকলের জন্য অনেক বড় সম্মানের। ১৯৮৬ সালের পর এই প্রথম ম্যানইউ মৌসুমের প্রথম দুটি হোম ম্যাচে পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছে। একইসঙ্গে ২০১১ সালের পর ওলে গানার সোলসজায়েরের গায়ে নিজেদের মাঠে কোচ হিসেবে সবচেয়ে বড় পরাজয়ের তকমাটা সেঁটে গেছে। ম্যাচশেষে তাই হতাশ ম্যানইউ কোচ বলেন, আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে দিন এটি। এটা সত্যিই দারুণ অস্বস্তিকর যা সব খেলোয়াড়কেই হতাশ করে তুলেছে। কোচ হিসেবে খুব হতাশ। সব দোষ আমি মেনে নিচ্ছি, এই দায় আমার। একইসঙ্গে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন সব করব।
×