ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সবজি সংরক্ষণে যশোরে নির্মাণ হচ্ছে হিমাগার

প্রকাশিত: ২১:১১, ৬ অক্টোবর ২০২০

সবজি সংরক্ষণে যশোরে নির্মাণ হচ্ছে হিমাগার

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরে সবজি চাষীদের দুর্দশা লাঘবে স্থাপন করা হচ্ছে দুটি মাল্টিপারপাস হিমাগার। এর মাধ্যমে তাদের উৎপাদিত সবজি নষ্ট বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। কৃষকের ঘাম ঝরানো সবজি সংরক্ষণ করা হবে এই হিমাগারে। রক্ষা পাবে মধ্যস্বত্বভোগীদের জিম্মিদশা থেকে। কৃষক সেখানে ইচ্ছেমতো তাদের উৎপাদিত সবজি সংরক্ষণ করে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারবেন। দীর্ঘদিন ধরে যশোরের সবজি চাষীরা নানাভাবে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। ঘাম ঝরিয়ে বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদন করলেও তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে পারেন না। ফলে বড় একটি অংশ নষ্ট হয়ে যায়। পাশাপাশি জিম্মি হয়ে পড়েন ফড়িয়াদের কাছে। কারণ সবজি সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকার সুযোগ কাজে লাগায় ফড়িয়ারা। তারা কম মূল্যে কৃষককে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য করে। যশোরে ব্যাপক পরিমাণে সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। এখানকার সবজি দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে ফড়িয়া আর আড়তদাররা। এমনকি বিদেশেও রফতানি হয় যশোরের সবজি। অথচ কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বছরের পর বছর। কৃষকের অভিযোগ, ফড়িয়া এবং আড়তদারদের মাধ্যমে তাদের সবজি বিক্রি করতে হয়। সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত হচ্ছেন চাষী। ব্যাপকভাবে সবজি নষ্ট এবং কৃষকের দুরবস্থার কথা বিবেচনা করে কৃষি বিপণন অধিদফতর যশোরে দুটি মাল্টিপারপাস হিমাগার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এই দুটি হিমাগার নির্মাণ করা হবে সদর উপজেলার বারীনগরে এবং কেশবপুরের ভান্ডারখোলায়। ইতোমধ্যে এ দুটি জায়গায় এই হিমাগার নির্মাণের প্রস্তাব কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। কেশবপুরের ভান্ডারখোলায় মাল্টিপারপাস হিমাগার নির্মাণের প্রস্তাাবে সাড়া দিয়েছেন সেখানকার এমপি শাহীন চাকলাদার। তিনি কৃষকের স্বার্থে মাল্টিপারপাস হিমাগার নির্মাণে কৃষি বিপণন অধিদফতরের স্থানীয় কর্মকর্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে এমপি শাহীন চাকলাদারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জেলা বাজার কর্মকর্তাসহ অন্যদের। কর্মকর্তারা এমপির ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি কৃষি বিপণন অধিদফতরকে জানিয়েছেন। জেলা বাজার কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান জানিয়েছেন, এমপি শাহীন চাকলাদার তাদের আশ্বস্ত করায় তারা অনেকটা সাহস পেয়েছেন। সে মোতাবেক সাইট সিলেকশনের কাজ শুরু করেছেন। ২১ শতক জায়গার ওপর নির্মিত হবে মাল্টিপারপাস এই হিমাগার। তিনি জানিয়েছেন, মাল্টিপারপাস হিমাগারে পেঁয়াজ, বিভিন্ন ধরনের সবজি, মাছসহ পচনশীল পণ্য সংরক্ষণ করা যাবে। এসব পণ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে কৃষক ব্যাপকভাবে লাভবান হবেন। আনিছুর রহমান, আব্দুল হামিদ, আলমগীর হোসেন, সাহাবাজ হোসেনসহ কয়েকজন চাষীর বক্তব্য, যেকোন ধরনের সবজি বেশি সময় রাখা যায় না। ক্ষেত থেকে তোলার পর কয়েক ঘণ্টা তাজা থাকে। এরপর ধীরে ধীরে বিবর্ণ হয়ে যায়। তখন সেগুলো আর বিক্রি করা যায় না। এ কারণে তোলার পরপরই ফড়িয়ারা যে দাম বলে সেই দামেই তারা বিক্রি করতে বাধ্য হন। কেবল তাই না, ক্রেতারা আসতে দেরি করায় প্রতিদিনই কমবেশি সবজি নষ্ট হয়ে যায়। আবার নষ্ট হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে সময়মতো ক্ষেত থেকে সবজি না তোলা। চাষীরা বলছেন, যখন তখন সবজি তুলে তারা সংরক্ষণ করতে পারেন না। এ কারণে ক্ষেতেই অনেক সবজি নষ্ট হয়ে যায়। হিমাগার নির্মাণ করা হলে তারা ইচ্ছেমতো সবজি তুলে সেখানে সংরক্ষণ করতে পারবেন। এরপর সুবিধামতো ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারবেন সেসব সবজি। কেশবপুরের ভান্ডারখোলায় যে মাল্টিপারপাস হিমাগারটি নির্মাণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেটি সেখানকার এমপি শাহীন চাকলাদারের উদ্যোগে হবে।
×