ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সঙ্কট কাটছে না সৌদি প্রবাসীদের, বিক্ষোভ সড়ক অবরোধ

প্রকাশিত: ২২:১৮, ৫ অক্টোবর ২০২০

সঙ্কট কাটছে না সৌদি প্রবাসীদের, বিক্ষোভ সড়ক অবরোধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে এসে আটকা পড়ে সৌদি প্রবাসীদের বিক্ষোভ থামছে না। বিমানের টিকেটের টোকেন না পেয়ে রাজধানীর কাওরানবাজারে অবস্থিত সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের সামনে বিক্ষোভ করছেন হাজারও প্রবাসী। রবিবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে গিয়ে টোকেন প্রত্যাশী প্রবাসীরা রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ প্রবাসীরা টোকেন সংগ্রহের জন্য হোটেলের দেয়াল টপকে ও দরজা ভেঙ্গে সাউদিয়া কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নেন। এ সময় তারা দ্রুত সৌদি আরব ফিরতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চেয়ে সেøাগান দিতে থাকেন। এদিন সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, হাজারও সৌদি প্রবাসী বিমানের টোকেনের জন্য অবস্থান নিয়েছেন। তারা কাওরানবাজার গোল চত্ব¡র মোড় বন্ধ করে বিক্ষোভ করেন। ফলে চারদিক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে এ্যাম্বুলেন্স ও রোগীবাহী যান চলাচল করতে দেয়া হয়। তারা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, অধিকাংশ প্রবাসীর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এরপর সৌদি সরকার কিছুদিনের জন্য ভিসার মেয়াদ বাড়ায়। কিন্তু সাউদিয়া এযারলাইন্স এবং বাংলাদেশ বিমানের কোন টিকেট পাচ্ছেন না প্রবাসীরা। এমনকি দ্বিগুণ দামেও তারা টিকেট পাচ্ছেন না। ফলে সৌদি প্রবাসীরা গত ক’দিন ধরে বাংলাদেশ বিমানের মতিঝিল অফিস এবং সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের কাওরানবাজার অফিসের সামনে দিনরাত অবস্থান করছেন। ভুক্তভোগীদের একজন প্রবাসী রাশেদুল ইসলাম বলেন, গত তিনদিন ধরে সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের সামনে দিন-রাত অবস্থান করছি। কোন টোকেন পাইনি। আজ তারা কোন টোকেন দেয়নি। যদি কাউকে টোকেন দিতো তাহলে ভাবতাম কাল হয়ত আমরা পাব। তবে আমরা কেউ পাচ্ছি না। ২০ থেকে ৩০ হাজারের বেশি প্রবাসীর অনিশ্চিত যাত্রা এখন সৌদিতে। আমরা কি করে খাব। বাংলাদেশে তো আমাদের কিছু করে খাওয়ার নেই। আমরা এখন সরকারের হস্তক্ষেপ চাই। কারণ সরকার ছাড়া এখন আমাদের আর কোন গতি দেখছি না। তাই আমরা রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ করছি। আরেক প্রবাসী ইমরান বলেন, এই দুঃখ আমরা কাকে বলব। জীবনের সব কষ্ট দূরে ঠেলে আমরা দেশের জন্য বিদেশে কাজ করি। দেশে ৯ মাস ধরে অবস্থান করছি। করোনার কারণে সৌদিতে যেতে পারিনি। ভিসার মেয়াদও শেষ। এখন আমরা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। সরকার যদি এগিয়ে না আসে তাহলে আমরা কি করব? আমরা কি এভাবেই রাস্তায় পড়ে মরব? দুপুরে সেখানে বিপুলসংখ্যক গণমাধ্যম কর্মী হাজির হলে তাদের সামনে রেখে প্রবাসীরা জানান, করোনায় লকডাউনের আগে সৌদি থেকে তারা সাউদিয়ার রিটার্ন টিকেট নিয়ে দেশে ফিরেন। রবিবার সকাল থেকে শুধু তাদেরই টিকেট পাওয়ার জন্য টোকেন দেয়ার কথা ছিল। টোকেন নম্বরের বিপরীতে আজ সোমবার থেকে তাদের টিকেট দেয়ার কথা ছিল। এ নিয়ম না মেনে টোকেন দেয়ার সংবাদ শুনে সবাই একসঙ্গে সাউদিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা করেন। অনেকে নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙ্গে সোনারগাঁও হোটেলের দেয়াল টপকে সাউদিয়ার কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। পরে পুলিশ সদস্যরা এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। কিছুক্ষণ বন্ধ থাকার পর দুপুর থেকে পুলিশি প্রহরায় আবারও টোকেন বিতরণ শুরু হয়। এ বিষয়ে পুলিশ কিংবা সাউদিয়া কর্তৃপক্ষ কোন কথা বলতে রাজি হয়নি। এর আগে বিক্ষোভের মুখে ফ্লাইটের টিকেট বিক্রির সুবিধার্থে টোকেন বিতরণ শুরু করে সাউদিয়া কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ১ অক্টোবর ৩০০১ থেকে ৩৩০০ টোকেনধারীদের টিকেট দেয় সাউদিয়া। এরপর ২ ও ৩ অক্টোবর তারা কোন টোকেন ইস্যু করেনি। এদিকে দেশে এসে আটকেপড়া প্রবাসীদের ফেরাতে ইতোমধ্যে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সাউদিয়া ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ফ্লাইট সংখ্যা বাড়িয়েছে উভয় প্রতিষ্ঠান। এছাড়া বিমান প্রবাসীদের ফেরাতে সৌদির তিন শহরে মোট ১২টি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এতকিছু করা হলেও আটকে পড়াদের প্রতিদিনই টিকেটের জন্য রাস্তায় জড়ো হতে হচ্ছে। তাদের সান্ত¦না বা টিকেটের আশ্বাসও দেয়নি সরকারের কোন মহল। এতে তাদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। সৌদিগামী সাউদিয়া ও বিমানের ফ্লাইটে যাত্রী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ॥ একটি বড় ফ্লাইটে ২৬০ ও মাঝারি ফ্লাইটে ১৪০ যাত্রী বহনের যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল সিভিল এভিয়েশন তা সৌদি আরব রুটে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঢাকায় বিপুলসংখ্যক আটকেপড়া সৌদি প্রবাসীদের যাতে দ্রুততম সময়ে কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারে, সেজন্য এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। রবিবার সন্ধ্যায় এক জরুরী বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেন চেয়ারম্য্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মফিদুর রহমান। এ বিষয়ে তিনি দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, এ নিষেধাজ্ঞা শুধু সৌদিগামী সাউদিয়া এয়ার ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটের বেলায় প্রত্যাহার করা হয়েছে। অন্যান্য রুটে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। যাতে করোনা তা-বে দেশে ফিরে আটকা প্রবাসীরা সৌদি আরব ফিরে যাওয়ার সুযোগ পান। এতে হয়ত স্বাস্থ্যবিধি কিছুটা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে বিমানবন্দরে। আবার সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরার ফ্লাইটের বেলায় কিন্তু নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে অর্থাৎ বড় ফ্লাইটে ২৬০ ও মাঝারি ফ্লাইটে ১৪০ জনের বেশি যাত্রী আনা যাবে না। জানা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য রাতেই জরুরী বৈঠকে বসেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মফিদুর রহমান। তিনি জােিনয়েছেন, এ দুটি রুটের যাত্রীদের সুস্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়া হবে।
×