ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

উত্তম ঘোষের ভাস্কর্যে বঙ্গবন্ধুর বীরত্বগাথা

প্রকাশিত: ২২:০১, ৫ অক্টোবর ২০২০

উত্তম ঘোষের ভাস্কর্যে বঙ্গবন্ধুর বীরত্বগাথা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় জাদুঘরের সামনের খোলা আঙিনায় শোভা পাচ্ছে শিল্পকর্মটি। জাদুঘরে প্রবেশের আগেই সেদিকে নিবদ্ধ হয় দর্শনার্থীর নজর। সেই সুবাদে সামনে এসে হাজির হয় গৌরবময় অতীত। বাঙালীর সংগ্রামী ইতিহাসের সাক্ষ্য দিচ্ছে অবিসংবাদিত নেতার বিশালাকৃতির অবয়বটি। তর্জনী উঁচিয়ে তেজোদ্দীপ্ত অভিব্যক্তিতে ভাষণ দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শিল্পের আশ্রয়ে উপস্থাপিত হয়েছে ঐতিহাসিক সাতই মার্চের প্রেক্ষাপট। ভাস্কর্যটি গড়েছেন সব্যসাচী ভাস্কর উত্তম ঘোষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন উপলক্ষে গড়া ভাস্কর্যটি নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে শিক্ষামূলক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান হাসুমণির পাঠশালা। বঙ্গবন্ধুকে উপজীব্য করে নির্মিত রয়েছে অসংখ্য ভাস্কর্য। তবে আঙ্গিক ও উপস্থাপনাশৈলীতে বিশেষত্ব পেয়েছে ভাস্কর্যটি। ফাইবার গ্লাস মাধ্যমে সৃজিত ১২ ফুট উচ্চতার অবয়বটি মেলে ধরেছে বঙ্গবন্ধুর বীরত্বগাথা। স্বাধীনতার মহানায়কের অপরাজেয় মানসিকতার প্রতিফলন ঘটেছে নির্মাণ কৌশলে। ভাস্কর্যটি গড়ার ক্ষেত্রে সূক্ষ্মতার পানে ধাবিত হয়েছেন এই ভাস্কর। জাতির জনকের মুখাবয়ব, দাঁড়ানো ভঙ্গিমা, জনতার উদ্দেশে তর্জনী তোলা কিংবা পরিধেয় পোশাকসহ সবকিছুতেই রয়েছে যত্নের ছোঁয়া। মৃত্তিকাকে স্পর্শ করে অন্তরীক্ষের অভিমুখী অবয়বের মাধ্যমে মেলে ধরেছেন নিপীড়িত জনতার অসম সাহসী নেতাকে। আর শুধু অবয়বের সাদৃশ্য অনুসরণের পরিবর্তে মুজিবের ব্যক্তিত্বের মহিমাকে প্রস্ফুটিত করেছেন সৃজন কৌশলে। বীররসের ভাবটি অবলম্বন করে ফুটিয়ে তুলেছেন জাতিকে স্বাধীনতা এনে দেয়া বঙ্গবন্ধুর রুদ্ররূপটি। ভাস্কর্যটির ভাবার্থকে চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করেছেন শিল্প-সমালোচক মইনুদ্দীন খালেদ। তার ভাষায়, যে মুজিব নিরন্তর আমাদের জাগিয়ে রাখে, আশার বার্তা পেরণ করে, সাহসী হতে বলে, জন্মভূমি রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীর মতো অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকার শপথ পাঠ সেই মুজিবকেই শিল্পের অন্বিষ্ট করেছেন উত্তম। মৃত্যুহীন চিরঞ্জীব মুজিবকে অনুভবে নিয়েই ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছেন উত্তম ঘোষ। তর্জনী উঁচানো উত্তোলিত হাত আর কালবৈশাখী মেঘগর্জনের মতো, শব্দ নয় যেন, তপ্ত গোলার মতো বাণী বর্ষণে শিল্পসূত্র অন্বেষণ করেছেন এই সব্যসাচী ভাস্কর। বস্তুত তার এ কাজ জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। তিনি মুজিব মানে বুঝেছেন বীরত্বের পূজা। বোধ হয় সব মানুষই কোন না কোন মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবনত থাকে। ব্যক্তিগতভাবে তাতে পূজিত হন পূর্বপুরুষদের কোন মানুষ। ভাস্কর্যটি গড়ার ক্ষেত্রে কাজ করেছে শিল্পীর দায়বদ্ধতা। চলমান মুজিববর্ষের সেই অঙ্গীকারের রূপায়ন ঘটেছে এই ভাস্কর্যে। এ প্রসঙ্গে উত্তম ঘোষ বলেন, আমার কাছে স্বদেশেরই প্রতিচ্ছবি শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধ আর মুজিব একে অপরের সম্পূরক। এ কারণে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনে ভাস্কর্যটি গড়ার উদ্যোগ নেই। ডিসেম্বর থেকে ধামরাইয়ে শুরু হয় নির্মাণ কাজ। পাঁচ মাসের দীর্ঘ শ্রমের ফসল এই শিল্পকর্ম। মূলত বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বের প্রকৃত রূপটিকে প্রকাশের চেষ্টা করেছি। জাতির পিতার প্রতি ভালবাসা ব্যক্ত করেছি শিল্পের মাধ্যমে। ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে হওয়া উন্মুক্ত আঙিনার এই ভাস্কর্য প্রদর্শনীটি চলবে অক্টোবর মাসজুড়ে।
×