স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ যেমনটা ঘটবে বলে ভাবা হয়েছিল তেমনটা আসলে ঘটেনি। বলা হচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) কথা। যেটা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে। ধারণা করা হয়েছিল বাফুফের আর্থিক বিষয়ে (অডিট রিপোর্ট) সমন্বয় পরিষদের প্রার্থী ও তাদের সমর্থক-কাউন্সিলরদের প্রবল আপত্তি উত্থাপন করবেন। কারণ গত কয়েক বছর ধরেই তারা এ নিয়ে প্রবল সমালোচনায় মুখর ছিলেন। অথচ শনিবার এজিএমে তারা ছিল আশ্চর্যজনকভাবে নীরব! আর্থিক অনিয়ম নিয়ে কোন ওজর-আপত্তি তোলেননি। ফলে নির্বিঘেœই সবার অনুমোদন নিয়েই গৃহীত হয় বাফুফের আর্থিক প্রতিবেদনটি।
শনিবার। পাঁচতারা মার্কা হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও। এজিএম শুরুর আগে আকাশ ছিল মেঘলা। গুমোট আবহাওয়া। ভ্যাপসা গরম। তারপরও উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় ছিল। অধিকাংশ ভোটারই রাত্রিযাপন করেন হোটেলে (নিয়ম অনুযায়ী বাফুফেই তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে)। সকাল ১০টা ১০ মিনিটে গাড়ি থেকে নেমে সোনারগাঁও হোটেলে প্রবেশ করেন সম্মিলিত পরিষদের প্রধান, সভাপতি প্রার্থী কাজী মোঃ সালাউদ্দিন। এর মিনিট পঞ্চাশেক পরেই শুরু হয়ে যায় এজিএম। সেখানে ১৩৯ কাউন্সিলরের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ১৩৬ জন। কিছুক্ষণ পরই আসে সেই ক্ষণ, যখন বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনটি পাঠ করা শুরু করেন বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ। আশ্চর্যজনকভাবে কাউন্সিলরদের কেউই কোন প্রশ্ন তোলেননি বা আপত্তি করেননি। তবে শরীয়তপুরের একজন কাউন্সিলর কয়েকটি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুললেও সোহাগ তা বুঝিয়ে দিলে ওই কাউন্সিলর নিশ্চুপ হয়ে যান। যেমনটা ধারণা করা হয়েছিল, এছাড়া এজিএমে কোন হট্টগোল হয়নি। শান্তিময় পরিবেশেই বার্ষিক সাধারণ সভায় বাফুফের ২০১৯-২০২০ সালের আয়-ব্যয়ের রিপোর্টকে সবাই অনুমোদন করে দেন। আর এভাবেই ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটও পাস হয়ে যায় (গত বছরের অডিট রিপোর্ট এবং আগামী বছরের বাজেটÑ সবকিছুই অনুমোদিত হয়)।
বিগত বছরগুলোতে বাফুফের আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে যিনি সবচেয়ে বেশি সরব ও সোচ্চার ছিলেন সেই বাদল রায়ই (নির্বাচনের আগের রাতে ফেসবুকে নাটকীয়ভাবে নিজেকে সমন্বয় পরিষদের সভাপতি প্রার্থী দাবি করে পোস্ট দিয়ে আলোচনার জন্ম দেন) এজিএমে হাজির ছিলেন না। এতে করে অনেকেই বলেছেন, বাদল উপস্থিত থাকলে তিনি অবশ্যই আপত্তি জানাতেন।
সম্মিলিত পরিষদের সহ-সভাপতি প্রার্থী ইমরুল হাসান জানান, ২০১৬ সালের এজিএমের চেয়ে এবারের এজিএম অনেক বেশি সুশৃঙ্খল ছিল, ডেলিগেটদের মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। এত সুন্দর বার্ষিক সাধারণ সভা আর দেখেননি বলে জানান সালাউদ্দিনের প্যানেলের সদস্য প্রার্থী হারুনুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘৯৮ ভাগই সবকিছু অনুমোদন দিয়েছেন। দুই-একজন পরামর্শ দিয়েছেন, এছাড়া আর কোন সমস্যা হয়নি।
এজিএমে আরেকজন আপত্তি তুলতেন বলে ধারণা করা হয়েছিল সমন্বয় পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রার্থী শেখ মোঃ আসলামের ব্যাপারেও। তিনিও কোন উচ্চবাচ্য করেননি। কেন? ‘অতীতে সমালোচনা করেছি। কিন্তু এখন নির্বাচন। আমরা চেয়েছি যে নির্বাচনের আগে কোন হট্টগোল না হোক। সে জন্যই আয়-ব্যয়ের রিপোর্ট নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলিনি। সবাই এখন নির্বাচনমুখী। ওনারা যেসব কাগজপত্র দেখিয়েছেন আমরা সব অনুমোদন দিয়েছি।’ আসলামের জবাব।
বাফুফের আয়-ব্যয়ের রিপোর্ট নিয়ে যিনি প্রশ্ন তুলেছেন সেই শরীয়তপুরের কাউন্সিলর বলেন, ‘এই অডিট রিপোর্ট সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত, মিথ্যা ও বাস্তবতার সঙ্গে মিল ছিল না। আয়-ব্যয়ের হিসেব তো ওনারা নিজেদের মতো করে নিয়ে আসেন। যদি বিশ্বের সেরা অডিট প্রতিষ্ঠান নিয়েও আসেন তবুও এখানকার ঘাপলা বের করা সম্ভব না। এখানে কাউন্সিলরা ভয়ে কথা বলে না। বললে যদি অনুদান বন্ধ করে দেয়!’