ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার দলের ব্যবস্থাপকও করোনা আক্রান্ত

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ৪ অক্টোবর ২০২০

ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার দলের ব্যবস্থাপকও করোনা আক্রান্ত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্টলেডি মেলানিয়ার করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার শিবিরের ব্যবস্থাপক বিল স্টিপিয়েনও আক্রান্ত হয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় তার করোনা পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ এসেছে। এ ঘটনায় ট্রাম্পের রিপাবলিকান নির্বাচনী প্রচার শিবির অনেকটাই বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, প্রেসিডেন্টের করোনা সংক্রমণের কারণে সামনের দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রচারের প্রক্রিয়া বদলে যাবে। খবর পলিটিকোর। প্রচার শিবিরের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিল স্টিপিয়েন ফ্লুর মতো মৃদু লক্ষণে ভুগছেন। পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগতরা জানিয়েছেন, ৪২ বছর বয়সী স্টিপিয়েন সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। নির্বাচনের মাসখানেক আগে বৃহস্পতিবার ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হোপ হিকসের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ট্রাম্প দম্পতি প্রথমে কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার ঘোষণা দেন। কিছুক্ষণ পর তাদের পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ আসার ঘোষণা দেয়া হয়। এদিকে ট্রাম্প ও বাইডেনের মধ্যে পরবর্তী বিতর্ক ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এটি আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। এদিকে ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা হোপ হিক্সের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর করোনাভাইরাস পরীক্ষা করাতে দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। শুক্রবার ওরল্যান্ডোতে নির্বাচনী সমাবেশে যোগ দেয়ার কথা ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। কিন্তু তার করোনাভাইরাস ধরা পড়ায়, সেই কর্মসূচী বাতিল করা হয়। এরপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ফার্স্ট লেডি করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়। সর্বশেষ ট্রাম্পের নির্বাচনী শিবিরে ব্যবস্থাপকের আক্রান্তের খবর এলো। এই অবস্থায় বিশ্লেষকরা বলছেন, সস্ত্রীক ট্রাম্প আক্রান্তের পাশাপাশি রিপাবলিকান দলের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রক্রিয়া অনেকটাই সঙ্কটের মুখে পড়েছে। কারণ ইতোমধ্যে এই ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে দুই লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্টের আক্রান্ত হওয়ার খবর একটি বড় ধাক্কা। আর এমন একটি সময়ে এই খবর এসেছে, যখন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি আর ৩৩ দিন। যুক্তরাষ্ট্র সরকার যেভাবে করোনাভাইরাস মহামারী সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছে, তা নিয়ে শুরু থেকেই সমালোচনায় বিদ্ধ হতে হয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে। প্রেসিডেন্ট সস্ত্রীক ট্রাম্প সংক্রমণ ধরা পড়ায় নির্বাচনী প্রচারে শুধু নয় যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক ঘটনাপ্রবাহে নাটকীয় পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এই খবর এসেছে কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনায় মাসের পর মাস ‘সরকারের চূড়ান্ত অব্যবস্থাপনায়’ বিপুল ক্ষতির পর। রাষ্ট্রের কমান্ডার ইন চীফ হিসেবে দিনের পর দিন করোনাভাইরাসের বিপদকে ‘খাটো করে দেখিয়ে এসেছেন’ ট্রাম্প। দেশ যখন এমনিতেই সঙ্কটে জর্জরিত, তার সংক্রমিত হওয়ার খবর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ‘নতুন সঙ্কটের ঝুঁকি’ তৈরি করছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে বয়স্কদের ঝুঁকিই সবচেয়ে বেশি। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রকে এখন লড়তে হচ্ছে প্রজন্মের একটি বড় সঙ্কটের সঙ্গে। দেশের রাজনীতি চলে গেছে স্মরণকালের মধ্যে বাজে একটি পর্যায়ে। প্রেসিডেন্টের কাছের উঁচু পদে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে কারা কারা আক্রান্ত হলেন, তা বোঝার চেষ্টা চলছে। ৩ নবেম্বর নির্বাচন সামনে রেখে গত কয়েক সপ্তাহে নিয়মিতভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী সফর করে আসছিলেন ট্রাম্প। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেই তিনি হাজারও মানুষের ভিড়ের মধ্যে রিপাবলিকান পার্টির বিভিন্ন নির্বাচনী সমাবেশে যোগ দিচ্ছিলেন। নিউ জার্সিতে ট্রাম্প একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন, যেখানে বসার ক্ষেত্রে দূরত্ব রাখা হলেও কারও মুখে মাস্ক ছিল না। পরে বাইরে খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে ট্রাম্প বক্তৃতাও দেন। সেখানেও অধিকাংশের মুখে মাস্ক ছিল না। সংক্রমণ এড়াতে চিকিৎসকরা যেখানে মাস্ক ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছেন, সেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে মাস্ক পরতে অনাগ্রহ দেখিয়ে এসেছেন, এমনকি যারা মাস্ক পরছেন, তাদেরও সমালোচনা করতে ছাড়েননি। এখন ট্রাম্প নিজেই আক্রান্ত হওয়ার পর তার মন্ত্রিসভার সদস্য আর আশপাশের লোকজনের পরীক্ষা করার হিড়িক পড়ে গেছে। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে থাকা ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এবং তার স্ত্রীর করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফল ‘নেগেটিভ’ এসেছে। প্রেসিডেন্টের মেয়ে ইভাঙ্কা, জামাতা জারেড কুশনার এবং ট্রাম্প-মেলানিয়ার ১৪ বছর বয়সী ছেলে ব্যারনের করোনাভাইরাস পরীক্ষাতেও সংক্রমণ ধরা পড়েনি বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। তবে হোয়াইট হাউজের আরও অনেকের মধ্যেই যে ইতোমধ্যে সংক্রমণ ঘটে থাকতে পারে, সে কথা স্বীকার করেছেন মিডোস। হোয়াইট হাউজের কর্মীদের মধ্যে যারা ওই কম্পাউন্ডে থাকেন, তাদের মধ্যেও কাজ করছে অনিশ্চয়তা, শঙ্কা। বিশ্লেষকরা বলছেন প্রেসিডেন্টের করোনা সংক্রমণের কারণে সামনের দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রচারের প্রক্রিয়া বদলে যাবে। আইসোলেশনে থাকা ট্রাম্প বেশ কিছুদিন পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। আগামী ১৫ অক্টোবর দ্বিতীয় টেলিভিশন বিতর্ক নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ফলে মহামারী এবং তা সামলাতে সরকারের ব্যর্থতা থেকে ভোটারদের দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর সুযোগ ট্রাম্প খুব একটা পাবেন না। উপরন্তু এখন ট্রাম্পের অসুস্থতা গুরুতর দিকে মোড় নিলে কী ঘটতে পারে, সে আলোচনাও শুরু হয়ে গেছে।
×