ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধরা পড়েনি মূল আসামি ॥ শাস্তি দাবিতে মানববন্ধন

ইবির প্রাক্তন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় আটক ৪

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ৪ অক্টোবর ২০২০

ইবির প্রাক্তন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় আটক ৪

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝিনাইদহ, ৩ অক্টোবর ॥ শৈলকুপায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী উলফাত আরা তিন্নির (২৪) মৃত্যুর ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার ভোরে বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো শৈলকুপার শেখপাড়ার আমিরুল, নজরুল, লাবিব ও তন্ময়। এদিকে তিন্নির মৃত্যুতে জড়িতদের শাস্তি দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শৈলকুপা থানার ওসি (তদন্ত) মহসিন হোসেন জানান, শেখপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মৃত ইউসুফ আলীর কন্যা উলফাত আরা তিন্নি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পড়ালেখা শেষ করা তিন্নির মৃত্যুতে শুক্রবার রাতে আটজনের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাত ৫-৬ জনের নামে শৈলকুপা থানায় ধর্ষণ ও আত্মহত্যা প্ররোচনার পৃথক দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। তিন্নির মা হালিমা বেগম বাদী হয়ে শৈলকুপা থানায় এ মামলা দুটি দায়ের করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামলার চার আসামিকে গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় এখনও পলাতক রয়েছে মূল অভিযুক্ত জামিরুল ইসলামসহ চারজন। বাকিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশী অভিযান চলছে বলে তিনি জানান। উল্লেখ্য, তিন্নির বড়বোন মিন্নির একই গ্রামের পুনুরুদ্দীনের ছেলে শেখপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী জামিরুলের সঙ্গে বিয়ে হয়। বনিবনা না হওয়ায় ৬/৭ বছর আগেই মিন্নির সঙ্গে জামিরুলের বিচ্ছেদ ঘটে। মিন্নিকে সে আবার ঘরে নিতে চায়। কিন্তু মিন্নি রাজি না হলে দীর্ঘদিন ধরেই লম্পট জামিরুল পরিবারটির ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। বাড়িটিতে কোন পুরুষ সদস্য না থাকায় পরিবারটি জামিরুলের নির্যাতনে অসহায় হয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে জামিরুল শেখপাড়ায় তিন্নিদের বাড়িতে লোকজন নিয়ে ঢুকে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। দুই ঘণ্টা পর আবারও জামিরুল ওই বাড়িতে যায় এবং তিন্নির ওপর নির্যাতন চালায়। ভাংচুরের সময় বাগ-বিত-ার এক পর্যায়ে চেঁচামেচি শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে জামিরুল ও তার লোকজন পালিয়ে যায়। ঘটনার কিছুক্ষণ পর তিন্নির কোন সাড়া না পেয়ে দ্বিতীয় তলায় গিয়ে তার রুমের দরজা ভেতর থেকে লাগানো দেখে দরজা ভেঙ্গে তারা ভেতরে ঢুকে তিন্নিকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখে। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। ইবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ॥ ইবি সংবাদদাতা জানান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী উলফাত আরা তিন্নি হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিশ^বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শনিবার বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন শিক্ষার্থী। একইসঙ্গে বিচার না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা। মানববন্ধনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রমৈত্রীর নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা, বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তা ও এলাকাবাসী একাত্মতা পোষণ করেন। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘আমরা এক মহাসঙ্কটে ও মর্মান্তিক বিষয় নিয়ে দাঁড়িয়েছি। আমাদের সবার ঘরেই মা-বোন আছে। আমার পরিবার নিরাপদ তো? মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সেনা সদস্যের পরিবার যদি এভাবে লাঞ্ছিত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। যে দেশে নারী ক্ষমতায়নের কথা শুনি, সেদেশে আমার বোন নিরাপদ নয় কেন? এটা জাতির জন্য কলঙ্ক। তিন্নির সাবেক দুলাভাই সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে নারকীয়ভাবে তিন্নিকে হত্যা করেছে।’ গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে তিন্নির শয়ন কক্ষ থেকে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে শৈলকুপা থানা পুলিশ। তার বাড়ি ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী শৈলকুপা উপজেলার শেখপাড়া গ্রামে। প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সেনা সদস্য ইউসুফ আলীর মেয়ে তিন্নি।
×