ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূ ধর্ষণ মামলায় আরও ৩ আসামির জবানবন্দী

আলামত নষ্ট করতে চেয়েছিল আসামিরা

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ৪ অক্টোবর ২০২০

আলামত নষ্ট করতে চেয়েছিল আসামিরা

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাস এলাকায় গৃহবধূ গণধর্ষণের মামলায় আরও তিন আসামি জবানবন্দী দিয়েছে। আদালতে আসামিরা ঘটনার সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে। শনিবার দুপুরে কড়া পুলিশ পাহারায় আসামি মুহিবুর রহমান রনি, রাজন ও আইনুলকে আদালতে হাজির করা হয়। সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মোঃ জিয়াদুর রহমানের আদালতে ধর্ষণের ঘটনায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয় আসামি রাজন। সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতের বিচারক সাইফুর রহমান ও বিচারক শারমিন খানম নীলার আদালতে জবানবন্দী দেয় রনি ও আইনুল। এর আগে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতের বিচারক জিয়াদুর রহমানের আদালতে সাইফুর ও দ্বিতীয় আদালতের বিচারক সাইফুর রহমানের আদালতে রবিউলের জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়। শুক্রবার বিকেলে পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে তাদের সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতের বিচারক জিয়াদুর রহমানের আদালতে তাদের হাজির করে পুলিশ। এ সময় আসামিরা আদালতে জবানবন্দী দিতে সম্মত হওয়ায় প্রথমে অর্জুন লস্করের এবং পরে সাইফুর রহমানের জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়। এছাড়া সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক সাইফুর রহমানের আদালতে রবিউল ইসলামের জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিন আসামির জবানবন্দী রেকর্ড করার পর তাদের আদালতের নির্দেশে জেলহাজতে পাঠানো হয়। আদালতে আসামিরা ঘটনার সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে। আসামি রবিউল জবানবন্দীতে বলেছে, সে ধর্ষণ করেনি তবে ধর্ষকদের সহযোগিতা করেছে। চাঞ্চল্যকর এই মামলায় গ্রেফতারকৃত ৮ আসামির প্রত্যেকের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হয়। এদিকে শনিবার সকালে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসামি তারেক ও মাহফুজের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ধর্ষণের ঘটনায় এজাহারনামীয় এই ২ আসামিকে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় পুলিশ পাহারায় সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। এ দুজন পুলিশের কাছে ৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছে। এর আগে ধর্ষণ মামলায় ১ অক্টোবর প্রধান আসামি সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, রাজন মিয়া এবং আইনুদ্দিনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আসামিদের ডিএনএ নমুনার সঙ্গে ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূর ডিএনএ মিলিয়ে দেখা হবে। আলামত নষ্ট করতে চেয়েছিল আসামিরা ॥ এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে গণধর্ষণের সব আলামত নষ্ট করতে চেয়েছিল অভিযুক্তরা। এ লক্ষ্যে গৃহবধূর স্বামীর গাড়িটি আটকে রেখেছিল তারা। এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের ফটকে দাঁড়িয়ে পুলিশের ভেতরে প্রবেশের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতির অপেক্ষার সুযোগ নিয়ে গাড়িটি ধুয়ে ধর্ষণের আলামত নষ্ট করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তবে সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার এসআই মোঃ সোহেল রানা এ সময় ঢুকে পড়ায় তা করতে পারেনি সাইফুর ও তার সহযোগীরা। ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্করের দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী থেকে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। শুক্রবার রাতে সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তারা জবানবন্দী দেয়। জবানবন্দীতে সাইফুর ও অর্জুন জানায়, তারা দুজনসহ চারজন গৃহবধূকে ছাত্রাবাসের ভেতরে গাড়িতেই চারবার ধর্ষণ করে। জবানবন্দীতে তারা আরও বলে, ধর্ষণের ঘটনা আড়াল করার জন্য গাড়ি থেকে ধর্ষণের আলামত মুছতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু পুলিশ দেখে ফেলায় তারা গাড়ি ফেলে পালিয়ে যায়। এসময় আসামি রবিউল ইসলাম ধর্ষণে সহযোগিতা করেছে। মানববন্ধন ॥ সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীক বেঁধে স্ত্রীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদ ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের আহ্বানে সিসিকের ২০, ২১, ২৪ নং ওয়ার্ড ও টুলটিকর ইউনিয়নবাসীর উদ্যোগে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের সামনে এ কর্মসূচী পালিত হয়। মানববন্ধনে নিজস্ব ব্যানার নিয়ে শতাধিক রাজনৈতিক, সামাজিক, ক্রীড়া সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এলাকার কয়েক হাজার লোক অংশ নেন। টিলাগড় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লি অধ্যাপক সৈয়দ মকসুদ আলীর সভাপতিত্বে ও মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুবেদুর রহমান মুন্নার পরিচালনায় মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, কাউন্সিলর আবদুর রকিব তুহিন, সিসিকের সাবেক প্যানেল মেয়র মোঃ শাহজাহান, শাপলাবাগ বহুমুখী উন্নয়ন সমিতির সভাপতি ও জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, শিল্পপতি আতাউল্লাহ সাকের, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ছানাউল্লাহ ফাহিম, টিলাগড় পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছমর উদ্দিন মানিক, দৈনিক সিলেটের ডাকের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ, টুলটিকর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম আলী হোসেন, গোপালটিলা আখড়া কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিমাদ্রি কর পুরকায়স্থ, সিলেট সিটি সেন্টার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মুনিম মল্লিক মুন্না, খরাদিপাড়া আনন্দ সংসদের সভাপতি আবদুল গফ্ফার, সেনপাড়া পুষ্পায়ন সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি আলী ওয়াসিকুজ্জামান অনি, সিনিয়র সহসভাপতি এনায়েতুল বারী মুর্শেদ, সাদিপুর পঞ্চায়েত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক দেবদুলাল পাল দেবু, প্রমুখ। প্রগতিশীল ছাত্রজোটের পদযাত্রা ॥ এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার, ধর্ষকদের প্রশ্রয়দাতাদের গ্রেফতারের দাবিতে পদযাত্রা করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট সিলেট জেলা। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এই পদযাত্রা কর্মসূচী শুরু হয়। পদযাত্রাটি সিলেট শহীদ মিনার থেকে শুরু করে নগরের জিন্দাবাজার, জেলরোড, শিবগঞ্জ, টিলাঘর হয়ে এমসি কলেজের মূল ফটকে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। এ সময় পথ পথে বিভিন্ন পয়েন্টে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট সিলেট নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদিয়া নোশিন তাসনিমের পরিচালনায় এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট সিলেট মহানগরের আহ্বায়ক সঞ্জয় শর্মার সভাপতিত্বে এমসি কলেজের সম্মুখে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট সিলেট নগর শাখার সভাপতি সঞ্জয় কান্তি দাস, ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলার সভাপতি সরোজ কান্তি, সাধারণ সম্পাদক নাবিল এইচ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ঢাবি সংসদের সংগঠক জাবির হোসেন, ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলার সহসম্পাদক মনীষা ওয়াহিদ, ছাত্রফ্রন্ট সিলেট নগরের প্রচার সম্পাদক নিশাত কর সানী প্রমুখ। সমাবেশ থেকে আগামী ৭ অক্টোবর বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। দিরাইয়ে মানববন্ধন ॥ সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকালে দিরাই উপজেলার সচেতন নাগরিক সমাজের আয়োজনে দিরাই থানা পয়েন্টে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
×