ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুশাসন ও ন্যায়বিচার

প্রকাশিত: ২০:০৩, ৩ অক্টোবর ২০২০

সুশাসন ও ন্যায়বিচার

আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলে, তবে বেআইনী তৎপরতা বা আইনবিরোধী দুর্বৃত্তচক্র তাতে অনাকাক্সিক্ষত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করলে, দেশে সুশাসন বিরাজ করলে আইন সঠিক পথে সঠিক গতিতেই চলে। আইন শ্রেণীপেশা ধন-নির্ধন বিচার করে না। আইন প্রয়োগে সহায়তাকারী ব্যক্তিমানুষ তখনই আইনী ব্যবস্থাকে বিপন্ন করে তুলতে পারে যখন দেশে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি অবর্তমান থাকে। বর্তমান সরকারের আমলে আইনের শাসনে গতিসঞ্চার হয়েছে। মানুষ আবারও বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা ফিরে পাচ্ছে। আদালতে অভাবনীয় মামলাজট রয়েছে, সেটি আমরা জানি। তারপরও সমাজের ভিত নাড়িয়ে দেয়া মহাঅপরাধ, যেগুলো চাঞ্চল্যকর হয়ে ওঠে অপরাধের প্রকৃতি ও পরিধির কারণে, সেসব অপরাধের বিচারে দীর্ঘসূত্রতা এড়িয়ে যথাসম্ভব অল্প সময়ের ভেতর নিষ্পত্তি করার দৃষ্টান্ত দেশে এখন বিরাজমান। এতে দেশের মানুষ অনুভব করে যে সমাজে যাতে নৈরাজ্য সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে শাসকমহল সম্পূর্ণ সজাগ ও সচেতন। প্রকাশ্য দিবালোকে বহু মানুষের ভেতরে হত্যাকান্ডের মতো মহাঅপরাধ সংঘটিত হলে সঙ্গত কারণেই মানুষের ভেতর আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এমন হত্যাকান্ডের বিচার প্রক্রিয়া যথোপযুক্ত তদন্ত শেষে আইনী ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে একটি প্রতিকার পাওয়া গেলে জনমনে স্বস্তি ফিরে আসে। যেমন এসেছে বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার রায় ঘোষণায়। পেছনে ফিরে দেখা যাক। সমাজ এমন একটা দুঃখজনক স্তরে গিয়ে পৌঁছেছে যে, সিনেমার ভয়ঙ্কর নৃশংস দৃশ্যগুলোই বাস্তব হয়ে উঠছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে কোপানোর দৃশ্য হিন্দী ও বাংলা সিনেমায় অহরহ দেখানো হয়। অনুরূপ একটি বাস্তব দৃশ্য ইউটিউবের মাধ্যমে দেশে ভাইরাল হয়েছিল, একইভাবে ফেসবুকেও ওই হত্যাকান্ডের স্থিরচিত্র ভাইরাল হয়। এ নিয়ে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলেছিল আলোচনা সমালোচনা ও ধিক্কারের ঝড়। ঘটনাটি ঘটে বরগুনায়। স্ত্রীর সামনে তার স্বামীকে দুই নরাধম রাম দা দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়েছিল স্ত্রী একাই লড়ে গেছেন স্বামীকে বাঁচাতে, কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেননি। ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে বহু মানুষ। তারা কেউ এই হত্যাকান্ড প্রতিরোধে এগিয়ে আসেনি। বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। মানব হত্যাকান্ডের মতো গুরুতর অপরাধ করে এখন আর কেউ পার পেয়ে যাচ্ছে না। সব অপরাধীকেই আইনের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে। ফলে এটা ভাবার কোনই কারণ নেই যে, রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যাবে। দেখা যাচ্ছে দেশের উচ্চ আদালত এবং প্রধানমন্ত্রী ওই নৃশংস ঘটনার পর দ্রুত যথাযথ নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এ থেকে সহজেই অনুধাবন করা গিয়েছিল যে এই সমাজে যেমন কুপিয়ে হত্যার মতো খুনীরা রয়েছে, তেমনি তাদের দমন করার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্থা এবং সমাজে ন্যায়বিচারের সংস্কৃতি সমুন্নত রাখার যথাযথ প্রয়াসও রয়েছে। মানুষ আশা করেছিল দ্রুত ওই খুনীদের আইনের আওতায় এনে বিচার সম্পন্ন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করা হবে। মানুষের আশা পূরণ হয়েছে। সমাজে মানুষের মনে স্বস্তি আসবে এই ভেবে যে এই দেশে বর্তমানে এমন একটি ন্যায়বিচারের পরিবেশ বিরাজ করছে যেখানে অপরাধী অপরাধ করে কোনক্রমেই রেহাই পাচ্ছে না। বিচারহীনতার ও হত্যাকান্ড সংঘটিত করে বীরদর্পে ঘুরে বেড়ানোর দুঃসময়ের অবসান ঘটেছে। অপরাধী যে দলেরই হোক না কেন, যত প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবানই হোক না কেন, অপরাধ করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে, এটি এখন সুনিশ্চিত। যে কোন মামলার রায়ের পর দন্ডপ্রাপ্তদের সুযোগ থাকে উচ্চ আদালতে আপীল করার। চাঞ্চল্যকর এই মামলাটির বেলায়ও অভিন্ন আইনী প্রক্রিয়া অনুসৃত হবে। রায়ে সবাই সন্তুষ্ট হবেন এমন কোন কথা নেই। যেমন এই মামলার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে নিহত ব্যক্তির স্ত্রীর মৃত্যুদন্ডের বিষয়ে সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আসছে। এটাই স্বাভাবিক। একমাত্র বিজ্ঞ বিচারকই ন্যায়বিচারের চূড়ান্ত রায় দেবার অধিকার রাখেন। এভাবেই সমাজে বিচার ব্যবস্থা সমুন্নত থাকে এবং মানুষের মধ্যে নিরাপত্তার বোধ ফিরে আসে। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত থাকলেই কেবল পূর্ণাঙ্গ ন্যায়বিচার পাওয়া সম্ভব, সেকথা বলাই বাহুল্য।
×