ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রীন লাইনকে তিন মাসের মধ্যে রাসেলকে ২০ লাখ টাকা দেয়ার নির্দেশ

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ২ অক্টোবর ২০২০

গ্রীন লাইনকে তিন মাসের মধ্যে রাসেলকে ২০ লাখ টাকা দেয়ার নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্রীন লাইন পরিবহনের বাস চাপায় পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে আরও ২০ লাখ টাকা দিতে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি ভার্চুয়াল হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা শুনানি করেন। গ্রীন লাইনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। বিআরটিএর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন। এদিকে গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষের আইনজীবী বলেছেন মানবিক কারণে তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করবেন না। তিন মাসের মধ্যে এক সঙ্গে ২০ লাখ টাকা দিতে গ্রীন লাইনকে নির্দেশ দিয়ে এ রায় দেয়া হয়। রাসেলকে ওই অর্থ দিয়ে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে নির্দেশ বাস্তবায়ন বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে প্রতিবেদন দিবে গ্রীন লাইন কর্তৃপক্ষ। ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে ইতোপূর্বে দেয়া রুল নিষ্পত্তি করে এ রায় প্রদান করে হাইকোর্ট। ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল যাত্রাবাড়ীতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রীন লাইন পরিবহনের বাসের চাপায় প্রাইভেটকার চালক রাসেলের বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘটনার পর গ্রীন লাইন পরিবহনের বাসটি এবং তার চালককে পুলিশ আটক করে। রাসেল জানায়, বাসটি তার গাড়িকে ধাক্কা দিলে প্রতিবাদ জানাতে বাস থামাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাসচালক তার ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেন। এতে রাসেলের বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গাইবান্ধার পলাশবাড়ির বাসিন্দা রাসেল রাজধানীর আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিংয়ে বাস করতেন এবং স্থানীয় একটি ‘রেন্ট-এ-কার’ প্রতিষ্ঠানের প্রাইভেটকার চালাতেন। রাসেলের পা হারানোর ঘটনার পর গত বছরের ১৪ মে ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী উম্মে কুলসুম। রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণ এবং রুলসহ আদেশ দেন। গত বছরের ১২ মার্চ পা হারানো রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা দিতে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন এ হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ টাকা দিতে গ্রীন লাইনকে মাসিক হারে কিস্তি করে দেয় আদালত। রাসেল জানায়, আদালতের আদেশের পর গত বছর দুই দফায় ১০ লাখ টাকা দিয়েছে গ্রীন লাইন। আর চিকিৎসাবাবদ ৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা দিয়েছে। পরে হাইকোর্টের অন্তর্বর্তী আদেশটির বিষয়ে গ্রীন লাইনের আবেদনের প্রেক্ষিতে ক্ষতিপূরণ বিষয়ে হাইকোর্টের জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা দিতে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করে আপীল বিভাগ। তবে গ্রীন লাইনের পক্ষ থেকে রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ যে টাকা দেয়া হয়েছে তা এই স্থগিতাদেশের মধ্যে পড়বে না বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়। হাইকোর্টে গত ৫ মার্চ রুলের ওপর শুনানি শেষ হয়। সেদিন আদালত গত ১৫ এপ্রিল রায়ের জন্য তারিখ ধার্য রেখেছিলেন। বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত কারণে আদালতে সাধারণ ছুটি থাকায় ধার্য তারিখে রায়টি ঘোষিত হয়নি। বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করল হাইকোর্ট। এদিকে রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় রাসেল সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘যা হারিয়েছি তা কি আর শত কোটি টাকা দিলেও ফিরে আসবে, শত কোটি টাকা দিলেও কি পা হারানোর ক্ষতি পূরণ হবে? তবে আমি আদালতের রায় মেনে নিয়েছি। রায়ে আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞ ও সন্তুষ্ট।’ যা হওয়ার তা হয়েই গেছে, ক্ষতিপূরণ দিয়ে কী হবে? তবে, এই টাকা পেলে আমি ব্যাংকে ডিপোজিট করার ইচ্ছা আছে। সেখান থেকে যদি কিছু আয় হয় তাহলে সেটা দিয়ে চলব। তিনি আরও বলেন, ‘এখন তো আমার ব্যক্তিগত কোন আয় নাই। সারাদিন ঘরেই বসে থাকি। তাই হাতে কোন টাকা-পয়সাও নেই। স্ত্রী ছেলেমেয়ে পড়ায় এবং দরজির কাজ করে। স্ত্রীর আয়-রোজগারে চলছি।
×