ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্যবিধি পাবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

মহামারীর মধ্যেই হবে একুশে গ্রন্থমেলা

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ২ অক্টোবর ২০২০

মহামারীর মধ্যেই হবে একুশে গ্রন্থমেলা

মনোয়ার হোসেন ॥ মহামারীর চোখ রাঙ্গানিকে সঙ্গী করেই অনুষ্ঠিত হবে আগামী গ্রন্থমেলা। তাই ২০২১ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে চ্যালেঞ্জ। মেলা আয়োজনে সর্বোচ্চ প্রাধান্য পাবে স্বাস্থ্যবিধি। সেই বিবেচনায় মেলার সঙ্গে যুক্ত হবে নানা বিধিনিষেধ ও শর্তের বেড়াজাল। থাকবে না একসঙ্গে সকল দর্শনার্থী বা গ্রন্থানুরাগীদের প্রবেশের সুযোগ। ধাপে ধাপে প্রবেশ করতে হবে গ্রন্থমেলায়। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে মেলার চেহারা হবে একরকম এবং অবনতি হলে সেটা হবে আরেক রকম। এমনকি আগামী ফেব্রুয়ারিতে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে গেলে থাকছে মেলা আয়োজনের অনিশ্চয়তা। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বাতিল বা স্থগিত হবে গ্রন্থমেলা। তবে সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে মেলা আয়োজনে আশাবাদী আয়োজক বাংলা একাডেমি। সেই সুবাদে আরেকটি সফল গ্রন্থমেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে একাডেমি। ইতোমধ্যে মেলায় অংশগ্রহণে আগ্রহী প্রকাশকরা আগ্রহপত্র জমা দিয়েছেন। ৩০ সেপ্টেম্বর আগ্রহপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন পর্যন্ত মেলায় অংশগ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ৪৩৫টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। এই আগ্রহপত্রের ভিত্তিতে অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা সংস্থার সংখ্যার বিবেচনায় বিন্যস্ত হবে গ্রন্থমেলা। আগামী গ্রন্থমেলার সঙ্গে থাকছে দুটি বিশেষ উপলক্ষ। চলমান মুজিববর্ষের সঙ্গে যুক্ত হবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। তাই এই দুটি থিম নিয়েই বিন্যস্ত হবে আগামী গ্রন্থমেলা। মেলার কাঠামোগত সাজসজ্জায় মূর্ত হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। নক্সাটি প্রণয়ন করবেন গত দুই মেলার নক্সাবিদ স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর। বাংলা একাডেমি সূত্র জানায়, সরকার গৃহীত সামগ্রিক স্বাস্থ্যনীতির আলোকে অনুষ্ঠিত হবে গ্রন্থমেলা। এ লক্ষ্যে লেখক ও প্রকাশকদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক হয়েছে একাডেমি কর্তৃপক্ষের। মেলাকে ঝুঁকিমুক্ত করার বিষয়ে তাদের মতামত নেয়া হয়েছে। সর্বশেষ ১৬ সেপ্টেম্বর একাডেমির কাউন্সিল মিটিংয়ে গ্রন্থমেলা আয়োজনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। স্টলের বিন্যাস থেকে দর্শনার্থীদের আগমন সব কিছুতেই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হবে। মাস্ক পরা নিশ্চিতকরণ, শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয়সহ সকল প্রকার স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় ধাপে ধাপে নির্দিষ্ট সংখ্যক দর্শনার্থী প্রবেশ করবে মেলায়। সেক্ষেত্রে একসঙ্গে সকলের প্রবেশের সুযোগ থাকছে না। নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক দর্শনার্থী ঢুকতে পারবেন মেলার দুই ক্যানভাস বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। একইভাবেই স্টল থেকে স্টলে ঘুরে বই কেনা বা বই দেখার ক্ষেত্রেও মানতে হবে সামাজিক দূরত্ব। এছাড়া করোনা নিয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তাই পরিস্থিতি খারাপ হলে সরকারী সিদ্ধান্তের আলোকে মেলা স্থগিত বা বাতিল করা হলে সেই দায় নেবে না বাংলা একাডেমি। আসন্ন মেলার আয়তন বা পরিসর নির্ধারিত হবে আগ্রহপত্রের ভিত্তিতে অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা সংস্থার ওপর। তবে আগ্রহপত্র জমা দিলেই স্টল পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। করোনাভাইরাসের গতিবিধির ওপর নির্ভর মেলার বিন্যাস ও আয়তন। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে স্টল কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে বাংলা একাডেমি। এছাড়া এবার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টলের পরিধি কমানোর সুযোগ থাকলেও বৃদ্ধি করার সুযোগ নেই। ২০২০ সালের মেলায় সাড়ে পাঁচশ’ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিলেও এবার সেই সংখ্যা কমবে। এছাড়া নতুন প্রকাশনা সংস্থার মেলায় অংশগ্রহণ নিয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। মেলা আয়োজনের আশাবাদ ব্যক্ত করে বাংলা একাডেমি মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী জনকণ্ঠকে বলেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলা এদেশের প্রগতিশীলতার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। জাতির মনন বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই মেলা। এসব কারণেই অসংখ্য মানুষ সারাবছর ধরে এই মেলার অপেক্ষায় থাকেন। তাই মহামারীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই আমরা মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। করোনার কারণে কলকাতা বইমেলা বা ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা পিছিয়ে গেলেও আমরা নির্দিষ্ট সময়েই মেলার আয়োজন করতে চাই। এ লক্ষ্যে আমরা যারা মাঠে কাজ করি তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ আলোচনা হয়েছে। লেখক ও প্রকাশকদের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। করোনার ঝুঁকি এড়িয়ে মেলা আয়োজনে তাদের সুচিন্তিত পরামর্শ গ্রহণ করেছি। এভাবে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে এবং সহযোগিতা নিয়ে মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। বলতে গেলে প্রতিদিনই বিষয়টি নিয়ে কাজ হচ্ছে। মেলাকে জনহিতকর রাখার বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়ছে। মেলার মাধ্যমে যেন কারও কোন ক্ষতি যেন না হয় সেই বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমরা মেলার আয়োজন করতে চাই। সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে অক্টোবর মাসেই মেলা আয়োজনের আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়া হবে। প্রকাশকদের পক্ষ থেকেও স্বাস্থ্যবিধি মেলা আয়োজনের কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, আগামী গ্রন্থমেলা কেমন হবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ, মহামারীর পরিস্থিতি মেলার জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। আমরা প্রকাশকরা মেলায় অংশগ্রহণের বিষয়ে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইতোমধ্যে একাডেমির কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রকাশক সমিতির বৈঠকও হয়েছে। আমরা চিরাচরিত রূপের বইমেলা চাই। তবে সেটা হতে হবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে। আর সেই পরিবেশটা সৃষ্টি করবে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। তারাই সিদ্ধান্ত নেবে কিভাবে মেলার আয়োজন করলে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা হবে। স্টল থেকে স্টলের দূরত্ব বজায় রাখা কিংবা দর্শনার্থী প্রবেশের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। তবে আমাদের চাওয়া হচ্ছে মেলা শুরু করে সেটি যেন মাঝপথে বন্ধ করা না হয়। কারণ, মেলা না হলে প্রকাশকদের ক্ষতি হবে একরকম। আর মেলা শুরুর পর স্থগিত হলে ক্ষতির পরিমাণ হবে অনেক বেশি। কারণ স্টল ভাড়াসহ কাঠামো দাঁড় করাতে প্রকাশকদের অর্থলগ্নি করতে হবে। তখন ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে। এসব বিবেচনায় নিয়েই মেলা আয়োজনে বাংলা একাডেমিকে সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া মেলার স্বার্থে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির পক্ষ থেকেও আমরা একটা প্রস্তাবনা তৈরি করছি। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ দর্শনার্থীদের প্রবেশ বিষয়ে বিভিন্ন সুপারিশ করা হবে। এ বিষয়ে গ্রন্থমেলার পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী-এই দুই উপলক্ষকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিতব্য এবারের মেলা বিশেষ গুরুত্ববহ। ২০২১ সালের গ্রন্থমেলার থিম হবে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। মেলার কাঠামোগত বিন্যাস ও নক্সায় এ বিষয়গুলো ধারণ করা হবে। মহামারীর সকল প্রতিবন্ধকতাকে বিবেচনায় নিয়ে আমরা একটি সুন্দর ও প্রাণবন্ত মেলার আয়োজন করতে চাই। এজন্য লেখক, প্রকাশক সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ নিয়ে মেলার আগে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শুরু হবে। তবে মেলার পূর্ব মুহূর্তে মহামারীর প্রকোপ বাড়লে বাতিল বা স্থগিত হবে বইমেলা। সেক্ষেত্রে বাংলা একাডেমি কোন দায় নেবে না। সরকারী স্বাস্থ্যনীতির আলোকেই এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
×