ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ২ অক্টোবর ২০২০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ কংক্রিটের শহর ঢাকা। এখানে আকাশটাও সেভাবে দেখা যায় না। এলোমেলো ভবনের অদ্ভুত এক জঙ্গল বেড়ে চলেছে শুধু। এর বাইরে যে দু’ একটি জায়গায় গেলে প্রাণ প্রকৃতির সন্ধান মেলে, সেগুলোর অন্যতম একটি রমনা উদ্যান। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকা একে বলা চলে বুকে করে রেখেছে। একই সময়ের অনেক স্মারক ধ্বংস হয়ে গেলেও, রমনা আরও ঘন আরও সবুজ হয়েছে। বৃক্ষশোভিত বিশাল প্রাঙ্গণে কিছু সময় অবস্থান করলে ফুসফুস অধিক সতেজ ও সক্রিয় হয়ে ওঠে। ঘর হতে দু’ পা বাড়ালেই রমনা। এ কারণেও ঢাকাবাসীর প্রাতঃভ্রমণের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে এটি বিবেচিত হয়ে আসছে। দূর-দূরান্ত থেকেও আসেন দর্শনার্থীরা। সবুজের রাজ্যে ঘুরে বেড়ান। নানা জাতের গাছ, মৌসুমি ফুল, ঘাসের গালিচা, বসে গল্প করার বেঞ্চ, শুকনো পাতার মর্মর আরও কত কী! কিন্তু হায়! করোনার কাল শুরু হতেই গেটে তালা। করোনার সংক্রমণ রুখতে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটিতে চলে যায় দেশ। একই দিন থেকে পার্কটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে পরবর্তীতে ৩১ মে সাধারণ ছুটি তুলে নেয়া হলেও বন্ধ ছিল পার্কটি। দীর্ঘ ছয় মাস পর তা আবার খুলে দেয়া হয়েছে। গত রবিবার সকাল থেকে পার্কটি খুলে দেয়া হয়। গণপূর্ত অধিদফতরের সার্কেল-১ এর কর্মসহকারী শামসুল ইসলাম, যিনি পার্কের তত্ত্বাবধানের কাজ করছেন, জানালেন, আপাতত সকাল ৬টা থেকে সকাল ১০টা এবং বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পার্ক খোলা থাকছে। অর্থাৎ সময়টা কমিয়ে আনা হয়েছে। সাধারণ দর্শনার্থীদের কিছুটা অনুৎসাহিত করে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের ব্যবহারের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে রমনা। হচ্ছেও তা-ই। এখন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বিভিন্ন বয়সী মানুষকে ওয়াকওয়ে ধরে হাঁটতে দৌড়তে দেখা যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে কথা হচ্ছিল আনিসুল ইসলাম নামের অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারী কর্মকর্তার সঙ্গে। ৭০ পেরিয়েও বেশ আছেন তিনি। শরীর স্বাস্থ্য যথেষ্ট ভাল। তিনি বলছিলেন, পাশেই সরকারী বাসভবনে ছিলাম একসময়। তখন থেকে এখানে প্রাতঃভ্রমণের অভ্যাস। এখনও ধরে রেখেছি। কিন্তু গত ছয় মাস খুব কষ্টে গেছে। রমনাকে ভীষণ মিস করেছি। এখানে হাঁটতে এসেই কত মানুষের সঙ্গে পরিচয়! তাদের সঙ্গেও ছয় মাস পর দেখা হলো। খুব ভাল লাগছে। হাসানুজ্জামান নামের আরেক যুবক এসেছিলেন শরীর চর্চা করতে। তার মতে, পার্ক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তটি খুব ভাল ছিল। ব্যাখ্যা করে বলেন, সবাই আমরা প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে পারি না। কোন না কোনভাবে উদ্যানের ক্ষতি করি। গত ছয় মাস এমন কিছু হয়নি। এতে করে রমনারও আয়ু বাড়ল বলে মনে করেন তিনি। বিকেলের রমনায় বেশি দেখা যাচ্ছে দর্শনার্থীদেরই। কেউ গল্প করছেন। কেউ ব্যস্ত মোবাইল ফোনে ছবি তোলায়। শুধু গাছ দেখতেও রমনায় আসেন অনেকে। ৬৮ দশমিক ৫ একর আয়তনের রমনায় বর্তমানে আছে ২১১ প্রজাতির উদ্ভিদ। ফুল ও শোভাবর্ধক প্রজাতির সংখ্যা ৮৭। ফলের প্রজাতি আছে ৩৬টি। ঔষধি বৃক্ষের প্রজাতি ৩৩টি। কৃষি বনায়নের উদ্ভিদ প্রজাতি তিনটি, বনজ উদ্ভিদ প্রজিাতি দুটি, জলজ উদ্ভিদ প্রজাতি দুটি ও মশলা উদ্ভিদ প্রজাতি তিনটি। উদ্যানে আছে একটি লেকও। ৮ দশমিক ৭৬ একর আয়তনের লেকে শান্ত জলরাশি। গাছের ঘন ছায়ার কারণে পানিটাকেও সবুজ বলে মনে হচ্ছে এখন। সব মিলিয়ে নতুন এক ছবি। এ ছবি দেখার জন্য হলেও একবার ঢুঁ মেরে আসুন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব হচ্ছে। রমনার নতুন রূপটি কেন দেখবেন না? অন্য প্রসঙ্গ। পূজার দিন ঘনিয়ে আসছে। এবার কার্তিকে হবে শারদ উৎসব। আশ্বিন মল মাসের কবলে পড়ায় কার্তিকের দিকেই তাকিয়ে আছেন পূজারীরা। আর মাত্র কিছুদিন পর এ তাকিয়ে থাকার অবসান হবে। ৬ কার্তিক ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে মূল উৎসব। পাঁচ দিনের শারদীয় আয়োজন দশমী পূজার মধ্য দিয়ে শেষ হবে। বর্তমানে চলছে প্রস্তুতি। একদিকে প্রতিমা গড়া, ম-প তৈরি, সাজানো। অন্যদিকে কেনাকাটা। পূজা সামনে রেখে ঢাকার পোশাকের দোকান ও নামকরা ফ্যাশন হাউসগুলো তাদের পসরা সাজিয়েছে। গত সোমবার আজিজ সুপার মর্কেটে গিয়ে দেখা গেল, অধিকাংশ দোকানে পূজার পোশাক। দারুণ সব শাড়ি থ্রি পিস তৈরি করা হয়েছে। বুটিক বাটির কাজে প্রতিমার মোটিফ। টিশার্টের বুকে গনেশ ঠাকুরের মস্তক। দুর্গার মাথার মুকুট। এত সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে যে, কোন কোন দোকান ঘুরে উৎসবটা শুরু হয়ে গেছে বলেই মনে হয়! উৎসবের আগে উৎসবের রংটা ফুটে উঠেছে পোশাকে। কম-বেশি বিক্রিও শুরু হয়ে গেছে। ওয়ারী থেকে পূজার কেনাকাটা করতে এসেছিলেন সুবর্ণা ও সিঁথী। একই পরিবারের দুইজন। সুবর্ণা বলছিলেন, করোনার কারণে এবার পূজার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। মার্কেটে এসে জামা-কাপড় কিছু পাব কিনা তা নিয়েও সন্দেহ ছিল। কিন্তু এখানে এসে দেখছি অনেক ভাল কালেকশন। মার্কেটের পরিস্থিতি বুঝতে এসে একজনের পুরো কেনাকাটা হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
×