ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইরান রফতানি করতে চেয়েছে কম দামে

সরবরাহ বাড়লেও পেঁয়াজের দাম কমছে না

প্রকাশিত: ২২:৪৫, ২ অক্টোবর ২০২০

সরবরাহ বাড়লেও পেঁয়াজের দাম কমছে না

এম শাহজাহান ॥ নিত্যপণ্যের বাজারে সরবরাহ বাড়লেও কমছে না পেঁয়াজের দাম। আগের বেড়ে যাওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের পেঁয়াজ। আমদানি করা পেঁয়াজের বড় চালানগুলো আগামী সপ্তাহ নাগাদ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে এসে পৌঁছবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে। এ কারণে বাজারে এখনও দেশী পেঁয়াজই ভরসা। অন্যদিকে সঙ্কট মেটাতে নতুন করে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি করতে চায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান। কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ রেজা নফর পেঁয়াজ রফতানি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ইরানে তুলনামূলকভাবে পেঁয়াজের দাম অনেক কম। বাংলাদেশ এই পেঁয়াজ আমদানি করে সস্তায় বিক্রি করতে পারবে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে আগের চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি পেঁয়াজ। প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ ৯০-১০০ এবং আমদানিকৃত মোটা জাতের পেঁয়াজ জাত ও মানভেদে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তায় কিছুটা কমে বিক্রি হলেও আবার চড়ে যাচ্ছে দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানিকৃত পেঁয়াজের সরবরাহ পর্যাপ্ত পরিমাণে না হলে দাম কমার সম্ভাবনা কম। তবে সরবরাহ বাড়লে শীঘ্রই পড়ে যাবে দাম। ইতোমধ্যে ভারতের বিকল্প তুরস্ক, মিসর, নেদারল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বের প্রায় ১১ দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। সম্প্রতি বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, আমদানিকৃত পেঁয়াজ আসা শুরু হলে দাম কমে আসবে। বাজারে সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজির তেমন কোন সুযোগ নেই। চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁয়াজ বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। এদিকে নতুন করে ইরান বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানির আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইরান থেকে পেঁয়াজ আনা গেলে এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বাজারে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত রেজা নফর জানিয়েছেন তুলনামূলকভাবে দাম কম হওয়ায় বাংলাদেশের জন্য সুবিধা হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে। এছাড়া খেজুর, গম, কিশমিশ ইত্যাদি পণ্য রফতানিতেও আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে সাক্ষাত করে রাষ্ট্রদূত পেঁয়াজ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় নেয়ারও আহ্বান জানান। ওই সময় তিনি কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যেও প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের যুগোপযোগী ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপের ফলে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রেখেছে। যা খুবই প্রশংসনীয়। জানা গেছে, পেঁয়াজ আমদানির পাশাপাশি নিজস্ব উৎপাদন বাড়াতে কাজ করছে সরকার। এলক্ষ্যে পেঁয়াজের নতুন নতুন জাত উৎপাদনে কৃষি গবেষণায় নজর দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি কৃষিতে স্বল্পসুদে ঋণ সুবিধা প্রদান, ভর্তুকি ও নগদ সহায়তা বৃদ্ধি এবং আমদানিতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে সরকারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ লাখ টন। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে সমপরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হলেও ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হচ্ছে সংরক্ষণের অভাবে। এতে করে বছরে ৭-৮ লাখ টন পেঁয়াজের ঘাটতি হচ্ছে। ঘাটতি চাহিদা মেটাতে পেঁয়াজের মূল উৎস ভারত। সম্প্রতি দেশটি উৎপাদন কম হওয়ায় নিজ প্রয়োজনে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করেছে। এতে করে ভারতের বিকল্প বাজার থেকে পেঁয়াজ এনে বাজার পরিস্থিতি সামাল দেয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। আর এ কারণে আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের পর ইতোমধ্যে ৫ শতাধিক ব্যবসায়ী আমদানির অনুমতি নিয়েছেন। আশা করা হচ্ছে, এতে করে আগামী মার্চ পর্যন্ত ১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় চালান তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আনছে সরকারী সংস্থা টিসিবি। এতে ওই দেশ থেকে ১ লাখ টন পেঁয়াজ আনা হচ্ছে। এদিকে পেঁয়াজের দাম না কমায় বাজারে এক ধরনের অস্বস্তি রয়েছে। টিসিবির ট্রাকসেলে দীর্ঘলাইন ধরে শত শত মানুষ পেঁয়াজ কিনছেন। এছাড়া মধ্যবিত্তের কথা চিন্তা করে ৫টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রির উদ্যোগ নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিকেজি টিসিবির পেঁয়াজ ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অনলাইনে প্রতিকেজির দাম রাখা হচ্ছে ৩৬ টাকা। তবে অনলাইনে অর্ডার দিয়ে অনেকেই পেঁয়াজ কিনতে পারছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। অনলাইনের পেঁয়াজ সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বিক্রি করছে কি না তা খতিয়ে দেখার জন্য বলা হচ্ছে। খিলগাঁও রেলগেট থেকে টিসিবির পেঁয়াজ কিনছিলেন বাসাবোর বাসিন্দা নাজমুল হাসান নামের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর পেঁয়াজ মিলেছে। অন্যদিতে খিলগাঁও সিটি কর্পোরেশন মার্কেটের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বাকের হোসেন জানান, দাম আগের মতোই আছে। পাইকারি বাজারে না কমলে খুচরায় কমবে না।
×