ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চার শর্তে ‘এ’ ও ‘ও’ লেভেল পরীক্ষা শুরু

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ল

প্রকাশিত: ২২:৪২, ২ অক্টোবর ২০২০

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্বব্যাপী করোনারভাইরাস মহামারীর কারণে দেশের সব সরকারী-বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই সময়ে বন্ধ থাকবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোও। বন্ধ থাকবে কোচিং সেন্টারও। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে বৃহস্পতিবার এ ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এদিকে সরকারী-বেসরকারী কলেজগুলোতে আগামী ৪ অক্টোবর থেকে একাদশের অনলাইন ক্লাস শুরু হবে। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া শর্ত মেনে শুরু হয়েছে ইংরেজী মাধ্যমের ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় গত ১৭ মার্চ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে সব অফিস-আদালত আর যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটির পর ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে অফিস খুলে যানবাহন চলাচল শুরু হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধই থাকে। কয়েক দফা বন্ধ ঘোষণার পর সর্বশেষ আগামীকাল ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় নিয়ে ছুটি ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রবীন্দ্রাথ রায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ সময় ভাইরাস সংক্রমণ রোধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা নির্দেশনা ও অনুশাসনগুলো শিক্ষার্থীদের মেনে চলতে হবে। শিক্ষার্থীদের বাসস্থানে অবস্থানের বিষয়টি অভিভাবকরা নিশ্চিত করতে অভিভাবকদের বলা হয়েছে এবং স্থানীয় প্রশাসন তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন। শিক্ষার্থীরা যাতে বাসস্থানে অবস্থান করে নিজ নিজ পাঠ্যবই অধ্যয়ন করে সে বিষয়টি অভিভাবকদের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলার পেছনে কর্মকর্তারা কিছু বিষয়কে বিবেচনা করছেন বলে জানা গেছে। যার মধ্যে আছে-সংক্রমণের হার কমলেও এখনও রোগী পাওয়া গেছে, শীতের সময়ে করোনার দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের শঙ্কা আছে, শিশুরা আক্রান্ত হতে পারে, অভিভাবকদের মধ্যে এখনও আতঙ্ক আছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি কতটা মানা সম্ভব হবে তা পরিষ্কার নয়, অনেক দেশেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে আবার বন্ধ করতে হয়েছে, অনেক দেশে নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে। এদিকে করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মধ্যে শিক্ষকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাওয়ার নির্দেশনা জারি করা হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ আকরাম-আল-হোসেন। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। গত ২২ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আকস্মিক পরিদর্শনের নির্দেশনা দেয়া হলে অনেক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ দেন প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যেও অনেক স্কুল-কলেজে শিক্ষকদের উপস্থিত হওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জারি করা নির্দেশনা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। বিষয়টি তুলে ধরা হলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, আমরা এ ধরনের কোন নির্দেশনা জারি করিনি। আমরা নির্দেশনা জারি করেছি স্কুল রি-ওপেনিং প্ল্যান। যখন স্কুল আবারও খোলা হবে তখন কোন কোন বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে স্কুল খুলবে, সেটার একটা গাইডলাইন তৈরি করেছি। ডব্লিউএইচও, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ইউনিসেফ, ইউনেস্কো যেসব গাইডলাইন তৈরি করেছে, সেগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে এটা তৈরি করেছি। সেটা সব স্কুলে দিয়েছি। আমাদের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেই রি-ওপেনিং প্ল্যান বিবেচনা করে স্কুল রি-ওপেনিংয়ের একটা প্ল্যান তৈরি করবে। সেজন্য বলেছি, স্কুল খোলার ১৫ দিন আগে কাজগুলো করতে হবে। এর বাইরে স্কুলে আসতে হবে, এমন কোন সিদ্ধান্ত আমরা দেইনি। সিনিয়র সচিব আরও বলেন, আমরা কিন্তু সরকারী কর্মচারী। আমাদের সব অফিস খুলে দিয়েছে। স্কুলেও কিছু কাজ থাকে, একাডেমিক কাজ থাকে। শিক্ষকরা আসতেই পারে, অফিসাররা আসতেই পারেন। প্রধানমন্ত্রীও আশঙ্কা করেছেন নবেম্বরে একটা সেকেন্ড ওয়েভ আসতে পারে, তাহলে শুধু অক্টোবর কেন বন্ধ করা হলো জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, নবেম্বরের পরিস্থিতি এখনও আমাদের সামনে আসেনি। সেপ্টেম্বরের আক্রান্তের হার বিবেচনায় নিয়ে মনে করছি যে, এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা সমীচীন হবে না। সেই কারণে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিক্ষাবর্ষ বাড়বে কিনা জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, এখনও কোন পরিকল্পনা নেই। পহেলা জানুয়ারি যে বই উৎসব করে থাকি, সেই বই ছাপানোর ব্যাপারে আমাদের পুরোদমে কাজ চলছে। আমাদের কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা পরবর্তী বছরে বই বিতরণ করব, নতুন সেশন শুরু হবে। সে কারণে আমরা মনে করছি যে, সেশন বাড়ানোর পরিকল্পনা এখনও পর্যন্ত নেই। অটো পাস দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ধীরে ধীরে স্পেস কমে যাচ্ছে। সেটা হতেই পারে, পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। আমরা নবেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করি। ১ নবেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের একটা পাঠ পরিকল্পনা আছে। যদি স্কুল খুলতে পারি তাহলে সে অনুযায়ী চলবে। যদি স্কুল না খুলে, শেষ অপশন যদি ব্যবহার করতে না পারি, তাহলে বুঝতেই পারছেন কী (অটো পাস) হবে...।’ শুরু হলো ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষা ॥ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চার শর্ত মেনে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে ইংরেজী মাধ্যমের ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষা। আগামী ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে এ পরীক্ষা। এতে পাঁচ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়ার কথা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন কঠোরভাবে মেনে এ পরীক্ষার আয়োজন করছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের স্বাস্থ্যবিধি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। সারাদেশের ৩৫ ভেন্যুতে প্রতিদিন এক হাজার ৮০০ পরীক্ষার্থীর বেশি পরীক্ষা নেয়া যাবে না। পরীক্ষার হলে প্রতি শিক্ষার্থীর মাঝে দূরত্ব থাকতে হবে ৬ ফুট। পরিস্থিতি বিবেচনায় যে কোন সময় সরকার জনস্বার্থে পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি বাতিল করতে পারবে। পরীক্ষার সময় কোন শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার দায়-দায়িত্ব নিতে হবে ব্রিটিশ কাউন্সিলকেই। একাদশের অনলাইন ক্লাস শুরু ৪ অক্টোবর ॥ দেশের সরকারী-বেসরকারী কলেজগুলোতে আগামী ৪ অক্টোবর থেকে একাদশের অনলাইন ক্লাস শুরু হবে। করোনার প্রভাবে শ্রেণী কক্ষে আপাতত পাঠদান সম্ভব না হাওয়ায় শিক্ষার্থীদের নির্বিঘেœ লেখাপড়ার উদ্দেশে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি। সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ৪ অক্টোবর সকাল ১০টায় ঢাকা কলেজে প্রধান অতিথি হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী উপস্থিত থেকে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসের শুভ উদ্বোধন করবেন।
×