ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রেস্ট ক্যান্সার মৃত্যুর কারণ নয়, সচেতনতায় বেঁচে থাকার আশা

প্রকাশিত: ১৮:৩৬, ১ অক্টোবর ২০২০

ব্রেস্ট ক্যান্সার মৃত্যুর কারণ নয়, সচেতনতায় বেঁচে থাকার আশা

অনলাইন রিপোর্টার ॥ জীবন যাপন, খাদ্যাভ্যাস ও পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে সবাইকে কম বেশি মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হয়। বর্তমানে প্রায় ৫টি পরিবারের মধ্যে অন্ততপক্ষে ২টি পরিবারের একজন নারী সদস্য স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। এর বহু ধরনের কারণ আছে। প্রধান কারণ হল- বংশগত, তারপর অতিরিক্ত পরিমাণে ভারী ও চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ, নিয়মিত চেকাপ না করানো, ব্যায়াম না করা ইত্যাদি। এর বাইরেও আরো বহু ধরনের কারণে স্তন ক্যান্সার হয়ে থাকে। অনেক সময় স্তনে সিস্ট হয়। এটি একজন চিকিৎসকের পরামর্শের পাশাপাশি খাবারের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু ব্যবস্থা না নিলে সিস্ট থেকে টিউমার হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে এটি ক্যান্সার ছড়ায়। সেই জন্য সময় থাকতেই একজন ভালো গাইনোকলজিস্ট, অনকোলজিস্ট ও দক্ষ ডায়টিশিয়ানের কাছে পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। এমন বহু ধরনের খাবার আছে যা স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। যেমন - সবুজ শাক-সবজি: যে কোনো প্রকারের সবুজ শাক-সবজিতে আছে ভিটামিনস, মিনারেলস ও এন্টি-অক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। লেবু: লেবুতে ভিটামিন সি ও এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। প্রতিদিন হালকা কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে শরীরের যাবতীয় দূষিত পদার্থ ডিটক্সিফাইং হয় ফলে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং এটি সিস্ট ধ্বংস করতে সক্ষম। লেবু মুখের রুচি বাড়ায়। টিউমার যে কোনো টক জাতীয় ফল যেমন আমলকি, মালটা, কমলালেবু, আমড়া, কাচা আম ইত্যাদি টক জাতীয় ফলে ভিটামিন সি ও এন্টি-অক্সিডেন্ট আছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ও হার্টের জন্য ভালো। মাশরুম: মাশরুমে যে ধরনের প্রোটিন ও এন্টি-অক্সিডেন্ট আছে তা স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। রসুন: রসুনে এন্টি-অক্সিডেন্ট আছে। নিয়মিত আস্ত রসুন তরকারিতে, খিচুড়িতে অথবা ব্লাঞ্চিং (গরম পানিতে ২-৫ মিনিট ফোটানো) করে খেলে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ হয়। ডার্ক চকলেট: চিনি ছাড়া ডার্ক চকলেট স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। মিল্ক চকলেটে প্রচুর চিনি থাকে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই ডার্ক চকলেট সবচেয়ে ভালো এবং এটি নার্ভ সিস্টেমকে সতেজ রাখে। ওটমিল: স্তন ক্যান্সারের পরম শত্রু হলো হাই ফাইবার। ওটসে প্রচুর পরিমাণে হাই ফাইবার, ভিটামিন বি, কমপ্লেক্সকার্বোহাইড্রেট ও এন্টি-অক্সিডেন্ট আছে যা গ্রহণের ফলে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ হয় ও শরীরে বিপুল শক্তি পাওয়া যায়। দেশি মুরগি: একজন স্তন ক্যান্সারের রোগী কেমুথেরাপি, রেডিও থেরাপি ও সার্জারি চলাকালীন প্রতিদিন একটির অর্ধেক করে দেশি মুরগির ঝোল খেতে পারবেন। এতে শরীরে শক্তি যোগাবে এবং দুর্বলতা কাটবে। কালজিরা: কালজিরাতে প্রচুর পরিমাণে এন্টি-অক্সিডেন্ট আছে। নিয়মিত কালজিরা গ্রহণে স্তন ক্যান্সার সহ যেকোনো রোগ প্রতিরোধ করা সহজ হবে। আদা: আদা স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের আরেকটি উচ্চ ফাইবার যুক্ত এন্টি-অক্সিডেন্ট। নিয়মিত সকালে পানিতে ভিজিয়ে, লাল চা অথবা স্যুপের মধ্যে আদা দেয়া যেতে পারে। এতে করে হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং হার্ট ভালো থাকা সহ ক্যান্সার প্রতিরোধ হবে। পেঁয়াজ: নিয়মিত কাচা পেঁয়াজ গ্রহণে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। গ্রিন টি: গ্রিন টিতে ক্যাটেচিন নামক উচ্চমাত্রার এন্টি-অক্সিডেন্ট আছে যা স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। ক্যান্সার রোগীদের গ্রিন টি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে কিডনির রোগীদের ডায়েট আলাদা। বেটা-ক্যারোটিন যুক্ত খাবার: বেটা-ক্যারোটিন হলো এক প্রকারের এন্টি-অক্সিডেন্ট যা স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে যেমন- বিটরুট, গাজর, লাল শাক-সবজি, বেদানা/আনার ইত্যাদি। সামুদ্রিক মাছ: সামুদ্রিক মাছে ওমেগা ৩ ও ওমেগা ৬ আছে যা খেলে ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ হয় এবং হার্টের জন্য ভালো। স্তন ক্যান্সার রোগীদের জন্য সামুদ্রিক মাছ অনেক উপকারী। করল্লা: করল্লা, যেকোনো তিতা খাবারে এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। অ্যাভোকেডো: অ্যাভোকেডোতে উচ্চ প্রোটিন, আয়রন ও ভিটামিনস আছে যা স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। অ্যাভোকেডোর সালাদ স্তন ক্যান্সার রোগীর জন্য উপকারী এবং চুলের জন্য বেশ উপকারী। ব্ল্যাককফি: ব্ল্যাক কফিতে এন্টি-অক্সিডেন্ট আছে যা স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। টক দই: বাসার তৈরি টক দইতে অতি উচ্চ মাত্রার ক্যালসিয়াম আছে এবং এটি সহজেই হজমে সাহায্য করে যা স্তন ক্যান্সারের রোগীর জন্য উপকারী। দুধ: দুধের প্রোটিন স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। কারণ উচ্চা মাত্রার প্রোটিন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। নিয়মিত এক গ্লাস দুধ পান করলে চুল মজবুত হওয়ার পাশাপাশি দেহের সমস্ত ব্যাথা দূর করে। ডিম: ডিমের প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম দেহের জন্য অনেক উপকারী। এতে ওমেগা ৩ ও ওমেগা ৬ যুক্ত ফ্যাটি এসিড আছে। স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে ডিমের অনেক বড় ভূমিকা আছে। কাল গোল মরিচ: কাল গোলমরিচ এক ধরনের এন্টি-অক্সিডেন্ট যা স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। সেলোরি: সেলোরি স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য খুব উপকারী খাবার যা জ্যুস, স্টু, স্যুপ ইত্যাদিতে খাওয়া যায়। ক্যান্সার প্রতিরোধে উপকারী জ্যুস: (সেলোরি + গাজর + বিটরুট) একসাথে সামান্য পানির সাথে ব্লেন্ডারে মিশিয়ে পান করলে রক্তের হিমোগ্লোবিন বেড়ে যাবে এবং ক্যান্সার সহ নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ হবে। সালাদ: টমেটো, শশা ও পেয়াজে এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় এর সালাদ ক্যান্সার রোগীর জন্য উপকারী। শিং ও মাগুর মাছ: শিং ও মাগুর মাছের ঝোল কেমুথেরাপিচলাকালীন গ্রহণ করলে হিমোগ্লোবিন কমতে দেয়না। এবং শরীরে শক্তি যোগায়। এছাড়াও যেসব খাবার গ্রহণ করলে ক্যান্সারের সম্ভাবনা থাকে, সেসব থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে। দুধ চা, চাষ করা মাছ, ব্রয়লার মুরগি, গ্রীল্ড করা খাবার, বাজারজাত জুস, বেকড খাবার, চিনি ও লবণ, অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার, যেকোনো কার্বোনেটেড বেভারেজ, রেড মিট, চর্বি জাতীয় খাবার, বাইরের খোলামেলা খাবার, পাস্তুরিত দুধ অতিরিক্ত তৈলাক্ত ও লবণাক্ত আচার, প্যাকেট চিপস, ফ্রেঞ্চফ্রাই ওও ডিপ ফ্রাইড খাবার। একজন মানুষ যদি সম্পূর্ণভাবে উপরের নিয়মাবলি অনুসরণ করে তাহলে তার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। এতে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ থাকবে। তাই ক্যান্সার প্রতিরোধের বড় মাধ্যম হল সুস্থ জীবন যাপন এবং স্বাস্থ্যকর ডায়েট। লেখক: রুবাইয়া পারভীন রীতি, পুষ্টিবিদ
×