ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতির নামে ভুলবক্তব্য প্রচারের অপতৎপরতা!

প্রকাশিত: ১৬:৩৬, ১ অক্টোবর ২০২০

ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতির নামে ভুলবক্তব্য প্রচারের অপতৎপরতা!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি উদ্ধৃতি ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেছেন, "স্বাধীনতাবিরোধী ছাড়া অন্য যেকোন নারী যদি নির্যাতনের স্বীকার (শিকার) হয়, নির্যাতনকারী সে যে রাজনীতি করুক না কেন আমরা তা সাথে সাথেই প্রতিহত করব।" অথচ তিনি এই ধরনের কোন বক্তব্যই দেননি। জনপরিসর নামে একটি ফেসবুক পেইজে উদ্ধৃতিটির সূত্র হিসেবে 'ডেইলি ক্যাম্পাস' নামক একটি অনলাইন পোর্টালের ২৭ সেপ্টেম্বরের একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ডেইলি ক্যাম্পাসের সেই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিলো, "ধর্মভিত্তিক ছাত্র সংগঠন ঢাবিতে রাজনীতি করতে পারবে না: সনজিত"। প্রতিবেদনের একটি জায়গায় লেখা হয়েছে-- "ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বাংলার ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে। স্বাধীনতাবিরোধী ছাড়া অন্য যেকোন নারী যদি নির্যাতনের স্বীকার হয়, নির্যাতনকারী সে যে রাজনীতি করুক না কেন আমরা তা সাথে সাথেই প্রতিহত করব।" ২৮ সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনে এরকম উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়েছে আরও একটি ক্যাম্পাস ভিত্তিক অনলাইন পোর্টালে। ইনসাফ২৪ নামে আরেকটি পোর্টালেও সনজিত চন্দ্র দাসের নামে এমন উদ্ধৃতি প্রকাশিত হয়েছে। উদ্ধৃতির এই বক্তব্যটি সনজিত চন্দ্র দাস অবিকল এভাবেই বলেছেন কিনা তা যাচাই করে দেখা গেছে। দেখা যাচ্ছে, সনজিত এভাবে কথাগুলো বলেননি। সমাবেশে দেয়া তার বক্তব্যকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে। ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সনজিতের বক্তব্যটি নেয়া হয়েছে ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে দেয়া বক্তব্য থেকে। ডেইলি ক্যাম্পাস সহ উপরের উল্লেখিত অনলাইন পোর্টালগুলো ছাড়া মূলধারার সংবাদমাধ্যমে ওই সমাবেশের যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে তাতে সনজিতের আলোচ্য বক্তব্যটি পাওয়া যায়নি। ওইদিনের সমাবেশের একাধিক লাইভ ও রেকর্ড করা ভিডিও দেখে জানা গেছে। 'দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস' এর ফেসবুক পেইজেও অনুষ্ঠানটি লাইভ সম্প্রচার করা হয়েছিলো (সনজিত চন্দ্র দাসের ফেসবুক প্রোফাইল থেকেও সমাবেশটি লাইভ সম্প্রচার করা হয়েছে)। ডেইলি ক্যাম্পাস এর ৩৮ মিনিট ১ সেকেন্ডের লাইভ ভিডিওটির শুরু থেকে ৭ মিনিট পর্যন্ত ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সনজিত কুমার দাসের বক্তব্য শোনা যাবে। সনজিত ওই অনুষ্ঠানে মোট ৯ মিনিট ২২ সেকেন্ড বক্তব্য দিয়েছেন, যা সনজিতের প্রোফাইলের লাইভ ভিডিওতে আছে। নিচে তার বক্তব্যের প্রথম ৩ মিনিটের ট্রান্সক্রিপ্ট তুলে ধরা হলো-- নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানানোর পর ভিডিও ২৯ সেকেন্ড থেকে ৩:০২ সেকেন্ড পর্যন্ত সনজিত বলেন-- "আসলে শুভেচ্ছা জানানোর ভাষা আজ নেই। এই বাংলাদেশে যখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে, রুখে দিচ্ছে। তখন তথাকথিত ছাত্র অধিকার পরিষদ, কিছু মানসিক বিকারগ্রস্তদের নিয়ে গঠিত এই ছাত্র অধিকার পরিষদ, যারা ছাত্রদের অধিকার কী সেটাই জানেনা। সেই তথাকথিত পাগল নুরু যাকে তারা এডভোকেসি সহায়তা দিতে চায়, ড কামাল হোসেন ও জাফরুল্লাহ, তাদের সতর্ক করে বলে দিতে চাই, আপনারা রাজনৈতিক দল খোলার আগে একটি মানসিক হাসপাতাল খুলুন। সেই মানসিক হাসপাতালে এসব মানসিক বিকারগ্রস্ত ধর্ষকদের সুচিকিৎসা প্রদান করুন। তারপর ভেবে দেখবেন আপনারা কোন রাজনৈতিক দল খুলতে পারেন কিনা, যোগ্য কী না। আপনারা কিছুদিন আগেও গনফোরাম, অমুক ফোরাম, তমুক ফোরাম করেছেন, কিন্তু সাধারণ মানুষ আপনাদের পাত্তা দেয়নি, ধিক্কার দিয়েছে। আজকে আমি লজ্জিত, আজকে আমি ক্রন্দিত, আজকে আমি বেদনাতুর; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই কেবলমাত্র এবং ছাত্রলীগের এবং বাংলাদেশের মুজিব আদর্শের সৈনিকরাই কেবলমাত্র রাজু ভাস্কর্যে আসবে। আমরা দেখেছি, বিভিন্ন সময়ে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পহেলা বৈশাখ উৎসব হলে, একটি বসন্ত উৎসব হলে, একটি আউল-ফাউল কোন আন্দোলন হলে সারা বাংলাদেশ থেকে অভিভাবক-ভাইবোন এসে সেটিতে শামিল হোন। যখন আপনার মেয়েটি ধর্ষণের শিকার হবে, তখন হয়ত আপনি তা বুঝবেন। যখন আপনার বোনটি ধর্ষণের শিকার হবে, তখন হয়ত আপনি বুঝবেন। যখন আপনার কোন প্রিয় মানুষ ধর্ষণের শিকার হবে তখন হয়ত আপনি বুঝবেন। আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের একটি সন্তান সে যে সংগঠনই করুক, কেউ কেউ বলেছে সে ছাত্র অধিকার পরিষদ করেন, তার অধিকারের দাবিতে আমরা কি আন্দোলন করতে পারব না? আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সারা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে, এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সমগ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষারথীদের প্রতিনিধিত্ব করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সে ডান করুক আর বাম করুক, সে যদি কোন জঙ্গি সংগঠন না করে, তাহলে তার যেকোন বিচারের দাবিতে, তার অধিকার আদায়ের আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সবসময় রাজপথে থাকবে। আমি খুবই কষ্টের সাথে বলতে চাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা যখনই উন্নয়নের মাধ্যমে এবং নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে এ দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যায়, বিভিন্ন রেটিং এ বাংলাদেশ যখন ফার্স্ট হয়ে যায়, তখনই আমি দেখি ধর্ষণের এই মেগাসিরিয়াল। কিন্তু আমি হতবাক একটি ধর্ষণ ঘটলে সেটি বিচার হবে, কিন্তু পরপর কিভাবে সেই ধর্ষণগুলো ঘটে। আমার তো ধারণা নুরুরা নিজেরা বাঁচার তাগিদে কারণ সে যেহেতু এজহারভুক্ত আসামি হয়েছে , তারা পরিকল্পনামাফিক বিভিন্ন জায়গায় ধর্ষণ ঘটিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে দায় করতে চায়"। এই বক্তব্যে ভাইরাল হওয়া উদ্ধৃতিটি পাওয়া যাচ্ছে না। বক্তব্যের পরের অংশেও এ ধরনের কোনো উক্তি নেই। ধর্ষণের শিকার নারীদের বিচার নিশ্চিত করতে ছাত্রলীগের সক্রিয়তা সম্পর্কে সনজিতের বক্তব্যটি হলো-- "আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সারা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে, এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সমগ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সে ডান করুক আর বাম করুক, সে যদি কোন জঙ্গি সংগঠন না করে, তাহলে তার যেকোন বিচারের দাবিতে, তার অধিকার আদায়ের আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সবসময় রাজপথে থাকবে।" অর্থাৎ, "স্বাধীনতাবিরোধী ছাড়া অন্য যেকোন নারী যদি নির্যাতনের শিকার হয়, নির্যাতনকারী সে যে রাজনীতি করুক না কেন আমরা তা সাথে সাথেই প্রতিহত করব।"-- এমন কথা বলেননি। বরং বলেছেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সে ডান করুক আর বাম করুক, সে যদি কোন জঙ্গি সংগঠন না করে, তাহলে তার যেকোন বিচারের দাবিতে, তার অধিকার আদায়ের আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সবসময় রাজপথে থাকবে।" আরও স্পষ্টভাবে বললে, সনজিত 'স্বাধীনতাবিরোধী' এবং 'নারী নির্যাতন' ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করেননি। অথচ এই ধরনের ভুইফোর অনলাইনের উদ্ধৃতি দিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের মত সংগঠনও বিবৃতি দিচ্ছে, যা নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্ক চলছে সংগঠনের ভিতরেই।ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা নিশ্চিত না হয়ে কিভাবে দফায় দফায় বিবৃতি দিচ্ছে সেই প্রশ্নও উঠছে।
×