ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরসূরি কে হচ্ছেন মাহবুবে আলমের

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ১ অক্টোবর ২০২০

উত্তরসূরি কে হচ্ছেন মাহবুবে আলমের

বিকাশ দত্ত ॥ শীঘ্রই নিয়োগ দেয়া হচ্ছে দেশের ১৪তম এ্যাটর্নি জেনারেল। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের মৃত্যুর পর চারদিন ধরে পদটি শূন্য রয়েছে। কে হচ্ছেন পরবর্তী এ্যাটর্নি জেনারেল তা নিয়ে আইন অঙ্গনে ব্যাপক গুঞ্জন চলছে। এ্যাটর্নি জেনারেল সাংবিধানিক পদ। এ পদে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। এ্যাটর্নি জেনারেলের পদটি শূন্য থাকায় আইনজীবী, আইন কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই দেশের ১৪তম প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ্যাটর্নি জেনারেলের নাম প্রস্তাব আকারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাবে। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি এ্যাটর্নি জেনারেলের নাম চূড়ান্ত করে নিয়োগ দেবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ২৭ সেপ্টেম্বর রবিবার এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মারা যান। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ১১ বছর ৮ মাস ১৪ দিন তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মৃত্যুতে সাংবিধানিকভাবে ‘এ্যাটর্নি জেনারেল’ পদটি শূন্য হয়েছে। পদটি সাংবিধানিক হওয়ায় বেশি দিন শূন্য থাকবে না বলেই মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী, অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেলদের মধ্য থেকেই সরকার একজনকে বেছে নেবে। ‘দি বাংলাদেশ ল’ অফিসার্স অর্ডার-১৯৭২ এর ৩(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি এ পদে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। সংবিধানের ৬৪(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সুপ্রীমকোর্টের বিচারক হইবার যোগ্য কোন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের এ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগদান করিবেন। তবে নিয়োগ পাবার পর রাষ্ট্রপতির সন্তোষ অনুয়ায়ী সময়সীমা পর্যন্ত এ্যাটর্নি জেনারেল স্বীয় পদে বহাল থাকবেন। এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নির্ধারিত পারিশ্রমিক লাভ করবেন।’ উল্লেখ্য, সে ক্ষেত্রে তার বয়স ৬৭ বছরের কম হতে হবে। কারণ ৬৭ বছরে বিচারপতিগণ অবসরে যান। এ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে প্রশ্ন করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ১২ বছর ছিলেন। তিনদিন হলো মারা গেছেন। তার কথা কেমনে ভুলে যাই। এখন আমি বলতে পারি না। একটু অপেক্ষা করুন। তারপর দেখি কি হয়। অন্যদিকে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মদ জনকণ্ঠকে বলেছেন , আমি মনে করি শীঘ্রই এ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ দেয়া হবে। রাষ্ট্রপতি এই পদে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। আইন মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে যাবে। তারপর রাষ্ট্রপতি নিয়োগ প্রদান করবেন। দেখা যাক সরকার কাকে নিয়োগ দেয়। তবে কাজ তো পড়ে নেই। অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকার আইনজীবী বা অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেলদের মধ্য থেকেই একজনকে বেছে নেবে। এদিকে এ্যাটর্নি জেনারেলের নিয়োগকে ঘিরে সুপ্রীমকোর্ট অঙ্গনে ব্যাপক জল্পনা কল্পনা চলছে। কাকে দেশের পরবর্তী ১৪তম এ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এদিকে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় ও তার মৃত্যুর পর কাউকে ভারপ্রাপ্ত এ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব দেয়া হয়নি। তার কাজটি স্বাভাবিকভাবেই অতিরিক্ত এ্যার্টনি জেনারেল মুরাদ রেজা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনজন অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল রয়েছেন। এরা হলেন অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ মমতাজ উদ্দিন ফকির, অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনির। এদের মধ্যে সিনিয়র মুরাদ রেজা। এ ছাড়া ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল ৬৭ ও সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল ১৫১ জন রয়েছেন। ইতোমধ্যে বিচারাঙ্গনে বেশ কয়েক জনের নাম ঘুরে ফিরে আসছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন, এ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী, ব্যারিস্টার আজমালুল হক কিউ.সি, এ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী, এ্যাডভোকেট মোঃ খুরশীদ আলম খান, ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। এছাড়া অন্য দুই জন অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ মমতাজ উদ্দিন ফকির ও অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনিরের নামও শোনা যাচ্ছে। আইনজীবীদের মতে , দীর্ঘদিন বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের দখলে থাকা সুপ্রীমকোর্ট বারের নেতৃত্ব ছিনিয়ে নিয়ে এ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন পরপর দুইবার সভাপতি হয়েছেন। ফলে এ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে তার নিয়োগের বিষয়টি অনেকেই বলছেন। অন্যদিকে আইনজীবীগণ আরও জানিয়েছেন, এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের মৃত্যুর পর অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। আইনজীবীদের মধ্যে তারও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সে দিক থেকে এই দুজনের নামই সুপ্রীমকোর্টে ঘুরে ফিরে আসছে। তবে নিয়োগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে সরকার কাকে নিয়োগ প্রদান করে। সুপ্রীমকোর্টের অধিকাংশ আইনজীবীর অভিমত , এ্যাটর্নি জেনারেল হতে হলে তাকে অবশ্যই প্রশাসনিক দক্ষতা থাকতে হবে। বিচারপতি ও আইনজীবীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে। এ ছাড়া সুপ্রীমকোর্ট আপীলেট ডিভিশনে মামলা পরিচালনাতেও দক্ষতা প্রয়োজন। এর আগে ১৩ জন এ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বপ্রথম ১৯৭১ সালে এ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এম এইচ খন্দকার। এরপর ধারাবাহিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন ফকির শাহাবুদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, মোস্তফা কামাল (পরবর্তীতে বিচারপতি, ১৯৭৭), ব্যারিস্টার রফিক উল হক , এ্যাডভোকেট আমিনুল হক , কে.এস. নবী, মাহমুদুল ইসলাম, এএফ হাসান আরিফ, এ. জে. মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার ফিদা এম. কামাল , সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং সর্বশেষ এ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম (২০০৯-২০২০) ।
×