ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এইচএসসির তারিখ আগামী সপ্তাহে

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও বাড়ছে

প্রকাশিত: ২২:৫২, ১ অক্টোবর ২০২০

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলমান ছুটি আরেক দফায় বাড়ছে। ছুটি কতদিন বাড়বে তা আজকালের মধ্যেই জানিয়ে দেয়া হবে। এদিকে করোনার ছোবলে আটকে থাকা এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কি হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আগামী সোম বা মঙ্গলবার জানিয়ে দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরীক্ষা হলে কবে কিভাবে নেয়া হবে, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে পরীক্ষার বিকল্প কি হবে সকল ঘোষণাই থাকবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায়’। কেউ যদি বিশেষ কারণে পরীক্ষা দিতে না পারে তবে তার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখা এমনকি পরীক্ষা কোনভাবেই না নিতে পারলে এসএসসির ফল বিবেচনা করে বিকল্প মূল্যায়নের কথাও ভাবা হচ্ছে। বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় করোনাকালে শিক্ষায় সৃষ্ট সমস্যা ও তা থেকে উত্তরণের নানা দিক তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। শিক্ষার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম খান, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ও ছুটি সংক্রান্ত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, এই মুহূর্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিস্থিতি নেই। ছুটি বাড়ছে, বাড়াতে হবেই। এখন তারিখটা জানিয়ে দেয়া হবে। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী আগেই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি কত দিন বাড়ানো হবে সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। টেকনিক্যাল কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছুটি বাড়ানো হবে। আগামী ৬ মাস থেকে এক বছরের মধ্যে শতভাগ করোনামুক্ত হওয়া সম্ভব নয়, শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে কতটা সফলতা আসছে সে বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে সব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয় বলে তা খোলার চিন্তা আমাদের করতে হবে। বর্তমানে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশের সব প্রতিষ্ঠান সচল হয়েছে। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের সেশনজটের অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে না রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু করা হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হবে। সবার মুখে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পাঠদান করানো হবে। সভায় ছটির বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন বলেছেন, ছুটি কতদিন বাড়বে, সে সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবারের মধ্যে সংবাদমাধ্যমকে জানাবেন তারা। করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি আছে। এমন অবস্থায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জিজ্ঞাসা ছিল ছুটি কি আরও বাড়বে, নাকি খুলে দেয়া হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। করোনার কারণে স্থগিত থাকা এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ভবিষ্যত কি তা নিয়ে জনমনে আছে প্রশ্ন। সকলেরই আগ্রহের কেন্দ্রে আছে বিষয়টি। আবার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে তা নিয়ে উদ্বেগও আছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝেও। একই উদ্বেগ আছে শিক্ষাবিদ এমনকি করেনা প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির অনেক সদস্যদের মাঝেও। এমন পরিস্থিতি সরকারের পরিকল্পনা কি হবে তা জানার আগ্রহ ছিল অনেকের। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, আটকে থাকা এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত কি হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আগামী সোমবার বা মঙ্গলবার জানিয়ে দেয়া হবে। তবে যদি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয় তাহলে চার সপ্তাহের সময় দিয়ে পরীক্ষা নেয়া হবে এবং দ্রুত সময়ে ন্যূনতম বিষয় ও ন্যূনতম নম্বরের ভিত্তিতে পরীক্ষা নেয়াসহ অনেক বিকল্প প্রস্তাব ঠিক করা হয়েছে। তবে পরীক্ষা ছাড়াই মূল্যায়ন করা যায় কি না সেই প্রশ্নও এখনই নাকচ করছেন না তারা। স্থগিত থাকা এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা কবে থেকে নেয়া হবে, সেই তারিখ আগামী ‘সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে’ ঘোষণা করা সম্ভব হবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পরীক্ষা না নিয়ে আগের পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করে সার্টিফিকেট প্রদান করার প্রস্তাব করছেন অনেকে। এটিকেও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি, এটি একটি প্রস্তাব হতে পারে। তবে পরীক্ষা ছাড়া সার্টিফিকেট দিলে তারা যখন চাকরি নিতে যাবে তখন তাদের বলা হবে, ‘ও তোমরা ২০২০ সালের পরীক্ষা ছাড়া পাস করা ব্যাচ।’ তিনি বলেন, পরীক্ষা আয়োজনে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র তৈরিসহ সব প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। এখন শুধু পরীক্ষা শেষ করা বাকি রয়েছে। কিন্তু ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীর সঙ্গে একজন করে অভিভাবক কেন্দ্রে গেলেও শিক্ষকসহ ২৫ থেকে ৩০ লাখ লোকের সম্পৃক্ততা থাকে। যারা অধিকাংশই গণপরিবহন ব্যবহার করবেন। সেজন্য আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। পরীক্ষা দিতে গিয়ে যাতে কারও ক্ষতি না হয় সে বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দেব। বিশেষ কারণে কোন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে না পারলে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে তার পরীক্ষা নেব। তবে এবার সব বিষয়ের পরীক্ষা না নিয়ে মৌলিক বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে। কেউ যদি বিশেষ কারণে পরীক্ষা দিতে না পারে তবে তার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হবে। সব কিছু আগামী সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে। শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেন, শীতে করোনার সেকেন্ড ওয়েব আসতে পারে, সেটিও আমরা মাথায় রেখেছি। কেউ কেউ পরীক্ষা ছাড়াই মূল্যায়ন চাইছেন। আমরা সেটিও নাকচ করছি না। কারণ সব চেষ্টার পরও পরীক্ষা নেয়া না গেলে আমাদের শিক্ষার্থীরা কি এগিয়ে যাবে না? সেক্ষেত্রে পরীক্ষা ছাড়া মূল্যায়নের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে, আমাদের সেটিও ভাবতে হবে। বার্ষিক পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বার্ষিক পরীক্ষা, আগামী এসএসসিসহ অনেক পরীক্ষা নিয়েই সবার প্রশ্ন আছে। কিন্তু এই পরীক্ষা নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। শীঘ্রই এটি আমাদের একটি সভা আছে সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। আমরা এখন নানান অপশন নিয়ে ভাবছি। কোন পরীক্ষা না নিয়ে অটোপ্রমোশন দেয়া, আবার পরীক্ষা নিয়ে প্রমোশন দেয়া, আমরা সব বিষয় নিয়েই কাজ করছি। শীঘ্রই এ বিষয়ে জানাতে পারব। আমরা সব দেশের পরিস্থিতিই দেখছি। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ক্ষেত্রে আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সবার স্বাস্থ্যবিধির দিকে নজর রেখে সব করছি। একইসঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকেও নজর রাখছি। সব দিক বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ‘ও’ লেভেলের পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ও লেভেলে প্রতিদিন এক হাজার ৮০০ পরীক্ষার্থী। সেখানে মোট ছয় হাজার শিক্ষার্থী। তাদের ৩৫টির বেশি পরীক্ষা কেন্দ্রে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের কাজ করা অনেক সহজ হবে। তাদের সব শর্তই দেয়া হয়েছে। এবং যারা অক্টোবরের মধ্যে দিতে না পারবে, তারা মে মাসের আগে আর দিতে পারবেন না। কওমি মাদ্রাসার বিষয়ে তিনি বলেন, কওমি মাদ্রাসা খোলার বিষয়ে একটি অন্যতম বিষয় তারা অনেকটাই আবাসিক। তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর কথা জানিয়েছে। সেজন্যই তারা আমাদের কাছ থেকে অনুমতি পেয়েছেন। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার স্বার্থে তাদের অনুমতি দেয়া হয়েছে। যাতে কোন সমস্যা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের বিষয়ে দীপু মনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে অনেক সমস্যা হয়। সারাদেশে এত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তাদের অনেক ধরনের সমস্যা থাকে। এটি নিয়ে একটি নীতিমালা হচ্ছে। সেটি চূড়ান্ত করতে একটি সংসদীয় উপকমিটি করে দেয়া হয়েছে। তারা ডিসেম্বরের মধ্যেই এটি চূড়ান্ত করতে পারবেন। এমসি কলেজের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এমসি কলেজের সেই ঘটনাটি আমরা খতিয়ে দেখছি। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সব ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ ধরনের পরিস্থিতির যেন উদ্ভব না ঘটে সেজন্য আমাদের করণীয় কী, সেটি নিয়ে কাজ করছি। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যারা নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাচ্ছে না তাদের আমরা বারবার তাগাদা দিচ্ছি। কেউ কেউ ইতোমধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে গেছে। তবে কারও বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ থাকলে সেটি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমপিও নীতিমালা সংশোধন ॥ শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, এমপিও নীতিমালা সংশোধন ও পরিমার্জন করা হচ্ছে। আমরা নীতিমালার সংশোধনী প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। আশা করছি আগামী মাসে সংশোধিত নীতিমালা জারি করা হবে। পরিমার্জিত নীতিমালা জারির পর নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আবেদন নেয়া হবে।
×