ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাহেদের সাজা

প্রকাশিত: ২০:৫০, ১ অক্টোবর ২০২০

সাহেদের সাজা

উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোঃ সাহেদের অবৈধ অস্ত্র মামলায় যাবজ্জীবন কারাদ-ের রায় বিচারের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। মাত্র আড়াই মাসে সোমবার এই ঐতিহাসিক রায় দেন ঢাকা মহানগরীর এক নম্বর স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত যা বলেছেন তা সকলের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ বার্তাও বটে। আমাদের সমাজের চারপাশে সাহেদের মতো কমবেশি যে বা যারা প্রতারক ও অপরাধী তারা এ থেকে শিক্ষা নিতে পারেন অবশ্যই। আর তা হলো, অপরাধী সে যত বড় ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালীই হোক না কেন, অপরাধ করে পার পাবেন না কেউ- তা সে দু’দিন আগেই হোক, কিংবা পরে। উল্লেখ্য, সাহেদ যে কত বড় প্রতারক ও ধূর্ত তা বোঝা যায়, ২০০৮ থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন ভুয়া কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক ও ব্যক্তির কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ৫০টির বেশি মামলা হলেও সে থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ২০০৯ সালে সাহেদ গ্রেফতার হলেও কিছুদিনের মধ্যে জামিনে বেরিয়ে এসে প্রতারণা চালিয়ে যেতে থাকে। চেক জালিয়াতির অভিযোগে ঢাকার একটি আদালত ছয় মাসের কারাদ-সহ ৫৩ লাখ টাকা অর্থদ- দিলেও ধরা যায়নি তাকে। একের পর এক প্রতারণা চালিয়ে গেছে অবাধে। সর্বশেষ করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ৭ জুলাই র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত সাহেদের উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতাল সিলগালা করে দেয়। এরপরই একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে সাহেদের অবৈধ অস্ত্র রাখাসহ কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করে আত্মসাতের কাহিনী। এ সময়ে সাহেদের সঙ্গে সম্পৃক্ততাসহ পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগও উঠে আসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের কতিপয় প্রভাবশালী হোমরাচোমরা সম্পর্কে। একই সঙ্গে বেরিয়ে আসতে থাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়ম ও অর্থ লোপাটের কাহিনী। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট শীর্ষ পর্যায়ে ব্যাপক রদবদলসহ ধরপাকড়ের খবরও আছে। উঠে আসে স্বাস্থ্য খাতের চরম অব্যবস্থাসহ দুর্বলতাও। যা আসলে উন্মোচিত হতে পেরেছে কোভিড-১৯ অতিমারীর কারণেই। চীনের উহান থেকে উদ্ভূত কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস হন্তারক মহামারী রূপে প্রায় বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার কারণেই সম্ভবত বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের চরম অব্যবস্থা, অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র উদ্ঘাটিত হতে শুরু করেছে। একের পর এক বেরিয়ে আসছে নানা অপকর্ম ও অপতৎপরতার কাহিনী। এর সর্বশেষ জলন্ত উদাহরণ রাজধানীর রিজেন্ট হাসপাতাল, যার আবার দুটি শাখা রয়েছে, জিকেজিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক প্রতারণা ও হঠকারিতার খবর। এর বাইরেও রয়েছে আরও নানা দুর্নীতি-অনিয়মের খবরাখবর, যা ছড়িয়ে রয়েছে দেশব্যাপী এবং প্রধানত কোভিড-১৯কে ঘিরেই। স্বস্তির কথা এই যে, এসব প্রতারক গোষ্ঠীর কয়েকজন যেমন রিজেন্টের চেয়ারম্যান সাহেদ, এমডি পারভেজ, জিকেজির চেয়ারম্যান ডাঃ সাবরিনা, ম্যানেজিং ডিরেক্টর আরিফসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো কোভিড-১৯কে ঘিরে এই যে রাতারাতি একটি প্রতারক গোষ্ঠী গড়ে উঠতে পারল, সেটি কোন মহলের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতার বলে? এর দায় সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয় এড়িয়ে যেতে পারে না কিছুতেই।
×