ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নারী ক্রিকেটে আস্থার প্রতীক মুর্শিদা খাতুন হ্যাপী

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

নারী ক্রিকেটে আস্থার প্রতীক মুর্শিদা খাতুন হ্যাপী

জাহিদুল আলম জয় ॥ বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার মুর্শিদা খাতুন হ্যাপী। দিনকে দিন নিজেকে বিকশিত করছেন কুষ্টিয়ার খোকসার এই সুকন্যা। প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও আকাক্সক্ষার জোরে মফস্বল থেকে উঠে এসেছেন জাতীয় নারী ক্রিকেট দলে। তবে ২১ বছর বয়সী বাঁহাতি এই ওপেনারের জাতীয় দলে ঢোকার পথ খুব একটা মসৃণ ছিল না। একজন মেয়ে হয়ে গ্রাম থেকে ধীরে ধীরে ধৈর্য, মনের জোর ও মনের মধ্যে পুষে রাখা ইতিবাচক ইচ্ছাশক্তির কারণে ২০১২ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়াশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে একাডেমিকভাবে ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। গ্রাম থেকে একটা মেয়ে খোকসা শহরের মাঠে ছেলেদের সঙ্গে ছেলেদের পোশাক পরে খেলাধুলা করা এই দৃশ্যের বাস্তবতা এখনও অনেকটাই অসম্ভব ব্যাপার। কারণ পুরুষের পাশাপাশি নারীদের একসঙ্গে অনুশীলন সত্যি দুরূহ ব্যাপার। তবু সে সকল সমস্যা, প্রতিবন্ধকতাকে দুমড়েমুচড়ে সামাজিক সঙ্কট কাটিয়ে পরিবারের আন্তরিক সহযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে উঠে এসেছে। আট বছর আগে বিকেএসপিতে ভর্তির পর মুর্শিদাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। তরতর করে লতার মতো উপরে উঠে গেছেন। মেয়েদের প্রিমিয়ার লীগে ক্লাস সেভেনে থাকতেই খেলা শুরু করেন। সেখান থেকে কঠোর পরিশ্রম, সঠিক নিয়মানুবর্তিতা, স্কিল আপগ্রেডিং, নিয়মিত শীলন, শিখন চর্চার মধ্য দিয়ে চাহিদা পূরণ করে আজ সে জাতীয় ক্রিকেটার হয়েছে। ২০১৩-১৪ ঘরোয়া লীগে ভাল রান করায় এবং বাঁহাতি ব্যাটসমান হওয়ার সুবাদে প্রথমবারের মতো ২০১৫ সালে ন্যাশনাল ক্যাম্পে ডাক পায়। এরপর ন্যাশনাল লীগে বেশকিছু ম্যাচ খেলেন। ২০১৬ সালে ন্যাশনাল লীগে সিলেট বিভাগের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন মুর্শিদা। ওই বছর সিলেটের হয়ে লীগে সর্বোচ্চ রান করেন তিনি। এরপর এছাড়াও প্রিমিয়ার লীগেও ভাল পারফর্ম করেন। ২০১৭ প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের হয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে সুযোগ পান। তবে এই সিরিজে তার অভিষেক হয়নি। ওই বছরেই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যায় বাংলাদেশ প্রমীলা দল। সেখানেই তার ওয়ানডেতে অভিষেক হয়। কিন্তু সন্তোষজনক পারফর্মেন্স প্রদর্শন করতে পারেননি। বয়স কম থাকায় এবং বিদেশের মাটিতে কিছুটা অস্বস্তিতে থাকায় সেবার ভাল করতে পারেননি। তবে পরেরবার ওই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেই আস্থার প্রতিদান দেন মুর্শিদা। দারুণ পারফর্মেন্স প্রদর্শন করে দলে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে নেন। এরপর ইমাজিং ট্যুর শ্রীলঙ্কাতে ভাল খেলে, ওডিয়াই সিরিজে পাকিস্তান সফরে ভাল করেন। তারপর সেই মাহেন্দ্রক্ষণ বিশ্বকাপ ক্রিকেট। যার অপেক্ষায় প্রতিটি খেলোয়াড় থাকেন। মুর্শিদা খাতুন হ্যাপী স্কটল্যান্ডে বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইয়িং ম্যাচে ভাল খেলে ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ নারী দলের হয়ে বাঁহাতি ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলার সুযোগ পান। ভারতের বিরুদ্ধে ভাল ব্যাটিং করেন। রাইজিং এই মেধাবী ব্যাটসম্যানের পরিবার ১১ সদস্যের। ৬ ভাই ৫ বোনের মধ্যে হ্যাপী সবার ছোট। কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার থানাপাড়া থেকে উঠে আসা জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের ওপেনিং ব্যাটসম্যান মুর্শিদা খাতুন হ্যাপীর বাবার নাম কাজী গোলাম মোস্তফা, মা হাওয়া খাতুন। এই প্রতিভাবান ব্যাটসম্যানের কাছে দেশের মানুষের আশা দীর্ঘদিন সে যেন বাংলাদেশ নারী দলকে ভাল সার্ভিস দিতে পারে। হ্যাপী নিজেও নিজেকে আরও বিকশিত করতে চান। লাল-সবুজের পতাকা খেলার মধ্য দিয়ে পতপত করে ওড়াতে চান।
×