ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কেউ কেউ দাম কমিয়েও সমিতির চাপে ফের বাড়িয়েছেন

গরুর মাংসের দরের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিলেন ব্যবসায়ী

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

গরুর মাংসের দরের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিলেন ব্যবসায়ী

রশিদ মামুন ॥ ঢাকায় গরুর মাংসের দরের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়েছেন একজন ব্যবসায়ী। কেজিতে ১০০ টাকা ছাড় দিয়ে দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়ে যাওয়াতে অনেকের চক্ষুশূল হয়েছেন তিনি। অভিযোগ উঠেছে এই ব্যবসায়ীর গরুর মাংসের ছাড় দেয়া দেখে কেউ কেউ দাম কমালেও মাংস ব্যবসায়ী সমিতির চাপে এখন আবার তা বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে তারা। পরিস্থিতি বলছে গরুর মাংসের দাম আসলে কত হওয়া উচিত তার চুল চেরা বিশ্লেষণ হওয়া দরকার। রাজধানীর প্রায় সব এলাকায় ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় প্রতিকেজি মাংস বিক্রি হলেও রাজধানীর রামপুরা রোডে চৌধুরীপাড়া নূর মসজিদের কাছের এই মাংস বিক্রেতা প্রতিকেজি গরুর মাংসে ১০০ টাকা ছাড় দিয়ে সম্প্রতি ৫০০ টাকায় বিক্রি শুরু করেন। ক্রেতার আগ্রহ বাড়াতে সব সময় তার দোকানের ভেতরে গরু বেঁধে রাখেন। কেন এমনটি করা হচ্ছে জানতে চাইলে ওই ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেকে মনে করতে পারেন কিসের মাংস বিক্রি করছি না করছি এজন্যই গরু বেঁধে রাখা হয়। এই গরু সবার সামনেই জবাই দিয়ে বিক্রি করা হয়। মঙ্গলবারও এই ব্যবসায়ীর দোকানে দেশী গরু দেখা যায়। রাজধানীর খিলগাঁও এর আরও দুটি মাংসের দোকান ঘুরে দেখা গেছে সেখানে ৪৪০ টাকা এবং ৪৫০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। সেখানেও কিছু দিন আগে ৬০০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি হতো। রাজধানীর মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রবিউল আলমের কাছে জানতে চাইলে বলেন, আমদানি করা গরুর মাংস ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেউ গরু জবাই দিয়ে এই দামে মাংস বিক্রি করতে পারে না বলে দাবি করেন তিনি। তবে যারা কম দামে মাংস বিক্রি করছেন তাদের বেশি দামে বিক্রির চাপ দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কোন ক্রমেই ৩০০ টাকার বেশিতে গরুর মাংস বিক্রি হওয়া উচিত নয়। সীমান্ত থেকে ঢাকা পর্যন্ত আসা গরুতে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদাবাজি হয়। আমরা সরকারকে বলেছি এসব চাঁদাবাজি বন্ধ হলে ৩০০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস দেয়া সম্ভব। রাজধানীর চৌধুরী পাড়া নূর মসজিদের কাছের ওই মাংসের দোকানের একজন কর্মচারী বলেন, আমাদের মালিক দাম কমানোতে চাপে রয়েছেন। এখন সবাই এসে উনাকে ধরতেছে যাতে সবাই যে দামে বিক্রি করে তিনি যেন সেই দামেই মাংস বিক্রি করেন। রাজধানীর গরুর মাংসের ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাংসের দাম নির্ধারণে সিটি কর্পোরেশনকেও প্রভাবিত করার অভিযোগ রয়েছে এদের বিরুদ্ধে। শহরজুড়েই এই সিন্ডিকেট যেভাবে চায় সেভাবেই গরুর মাংসের দাম নির্ধারিত হয়। বছরে এরা কেজি প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা গরুর মাংসের দাম বাড়িয়ে দেয়। রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার মাংস ব্যবসায়ী খলিল গোস্ত বিতানের স্বত্বাধিকারী খলিল জানান, গরুর দাম আসলে কম নয় তাও তিনি ৪৫০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করছেন। রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় খলিলের দোকানের মাংসের বেশ পরিচিতি রয়েছে। দিনের পাশাপাশি সন্ধ্যার পরও তিনি রাস্তার ওপরই গরু জবাই করে এখানেই বিক্রি করে থাকেন। সবখানে যা বিক্রি হচ্ছে তার চেয়ে কিভাবে কম বিক্রি করছেন জানতে চাইলে তার কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেননি মাংস ব্যবসায়ী খলিল। খলিলের দোকানের ঠিক পাশেই হালাল মিট-এর স্বত্বাধিকারী নূর আলম মাংস বিক্রি করছেন কেজিপ্রতি আরও ১০ টাকা কমে। নূর আলম জানালেন তারা একটি প্যাকেজ দিয়েছিলেন এখন আবার দামটি বাড়াবেন। স্থানীয় বাসিন্দা আকবর হোসেন জানান, খলিল এবং নূর আলমের দোকান পাশাপাশি হলেও খলিলের দোকানে ক্রেতা অনেক বেশি থাকে। নূর আলম বেশিরভাগ সময়ে ক্রেতাশূন্যই থাকে। চৌধুরীপাড়ার দোকানে মাংসের দাম কমানোর পর নূর আলম আকস্মিকভাবে ৪৫০ টাকা বিক্রি শুরু করে। তখন খলিল ৬০০ টাকায় বিক্রি করছিল। ফলে খলিল ক্রেতাশূন্য হয়ে যায়। এরপর নূর আলম আবার তার চেয়ে কেজিতে ১০ টাকা ছাড় দিয়ে ৪৪০ টাকা নির্ধারণ করে। স্থানীয়রা মনে করছেন ক্রেতা ধরতে দাম কমানো হলেও নূর আলম হয়তো আর ছাড় দিতে পারছে না। দেখা গেল ৪৪০ টাকার চেয়ে কমে বিক্রি করলে তার লোকসান হচ্ছে। সেজন্য এখন এই ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে উভয় সরে এসে এখন আবার দাম বাড়াচ্ছে। যদিও কেউ কেউ বলছেন, এত কমদামে মাংস বিক্রি সম্ভব এটি ব্যাপক প্রচার হলে অন্যদেরও দাম কমাতে হবে। এজন্যই তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে যেন দামটি আবার আগের মতো বাড়ানো হয়। আমদানি করা মাংস ৪৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে সমিতির সভাপতি রবিউল আলমের এমন বক্তব্য ধরে নূর আলমের কাছে জানতে চাইলে বলেন, আমরা কোথা থেকে মাংস আমদানি করব। আমরা নিজেরা গরু জবাই করে বিক্রি করি। সব শেষ ২০১৯ সালের রমজানে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৫২৫ টাকা, খাসি ৭৫০ নির্ধারণ করে দেয় সিটি কর্পোরেশন। তবে এর আগে থেকেই ৫৫০ টাকা কেজিতে ঢাকায় গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছিল। স্থান ভেদে খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা কেজিতে। সিটি কর্পোরেশন ২০২০ সালের রমজানে মাংসের দাম নির্ধারণ না করায় ইচ্ছামতো মাংসর দাম ঠিক করছে ব্যবসায়ীরা। এতে সাধারণ মানুষ ঠকছে বলেও মনে করেন মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রবিউল আলম।
×