ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি, তিনজন গ্রেফতার

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি, তিনজন গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে তল্লাশির নামে গাড়িতে তুলে নিত। গাড়িতেই তাকে মারধর করে সঙ্গে থাকা টাকা-পয়সা মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নিত। পরে সুবিধাজনক নির্জনস্থানে ওই ব্যক্তিকে নামিয়ে দিত। যাতে ডাকচিৎকার করার পর মানুষ আসতে আসতেই তারা সরে যেতে পারে। আবার অনেককে মুখ, হাত-পা বেঁধে ফেলে দিত। এছাড়া ডিবি পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের অভিযানে ৬৫ লাখ টাকার জালনোট ও জালটাকা তৈরির সরঞ্জামসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার রাতে ঢাকার ডেমরার কাজলা এলাকা থেকে ডাকাতির প্রস্তুতির সময় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তিন ডাকাতকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে বারেক (৩৭), আবুল কাশেম ওরফে জীবন ব্যাপারী (৫৬) ও স্বপন আকন্দ (৪০)। তাদের কাছে পাওয়া যায় ডিবির জ্যাকেটের মতো জ্যাকেট, নকল ওয়াকিটকি সেট ও এক রাউন্ড তাজা বুলেটসহ একটি পিস্তল। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আকতার জানান, গ্রেফতারকৃতরা সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সদস্য। তারা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি করত। তারা প্রাইভেটকারযোগে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতো। এমনভাবে তারা চলাফেরা করত, দেখে মনে হতো আসল ডিবি পুলিশ। ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাংক কিংবা আর্থিক যাতায়াতকারীদের টার্গেট করত। তারা বেশি টার্গেট করত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা উত্তোলন ও জমাদানকারীদের। টার্গেটকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকার কথা বলে তাকে তল্লাশির জন্য গাড়িতে তুলে নিত। গাড়িতে তুলেই তারা টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করত। বাধা দিলে মারধর করত। অনেককে মারধর করে টাকা-পয়সা বা মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেয়ার পর হাত পা বা মুখ বেঁধে নির্জনস্থানে ফেলে দিত। গ্রেফতারকৃত বারেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় আটটি, আবুল কাশেম ওরফে জীবনের বিরুদ্ধে সাতটি ও স্বপন আকন্দের বিরুদ্ধে নয়টি মামলা থাকার তথ্য মিলেছে। তাদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় অস্ত্র ও ডাকাতির প্রস্তুতি গ্রহণের অভিযোগে দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম-কমিশনার মাহবুব আলম, ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার প্রকৌশলী মোঃ ওয়ালিদ হোসেন ও আব্দুল আহাদসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা। অন্যদিকে সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার এ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ ঢাকার ডেমরায় একটি বিশেষ অভিযান চালায়। অভিযানে গ্রেফতার হয় ইউসুফ আলী, আব্দুর রহিম ওরফে হেলাল হোসেন রহিম, ফজলে রাব্বী মিয়া ও জাহিদ ইসলাম। তাদের কাছে পাওয়া যায় ৬৫ লাখ টাকার জালনোট, একটি ল্যাপটপ, কালিসহ প্রিন্টার, জালনোট তৈরির বিপুল কাগজ, জালটাকার নিরাপত্তা সুতা, জালনোট তৈরির ডাইসসহ নানা সরঞ্জাম। গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ঈদ, পূজাসহ বড় বড় অনুষ্ঠানকে টার্গেট করে তারা জালটাকা তৈরি করত। এসব টাকা তারা তাদের নিজস্ব এজেন্টের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিত। এক লাখ টাকা তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা। পর্যায়ক্রমে প্রতি লাখ জালটাকা ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকায়, ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় এবং ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হতো। এসব জালটাকা দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে জিনিসপত্র ক্রয় করত। যেমন পাঁচ শ’ টাকার জালনোট দিয়ে তিন শ’ টাকার জিনিস কিনলে, জিনিসটি ধরতে গেলে বিনে পয়সায় কেনা হলো উপরন্ত উল্টো দুই শ’ আসল টাকা পাওয়া গেল। পরবর্তীতে তিন শ’ টাকার জিনিস অন্যত্র বিক্রি করে দিয়ে আসল টাকা নিত।
×