ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নারী নিপীড়ন

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

নারী নিপীড়ন

নারী নিপীড়ন ও নির্যাতন সামাজিক অভিশাপের এক ভয়ঙ্কর চিত্র। সমাজের অর্ধাংশ এই গোষ্ঠী অত্যাচার আর নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঘটনা সংবাদ মাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ খবর। প্রতিদিনই বলতে গেলে এমন দুঃসহ ঘটনা সবাইকে হতবাক ও বিষণœ করে তোলে। ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে সারাদেশে বিক্ষোভ আর প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও যথার্থ বিচারিক কার্যক্রম দীর্ঘসূত্রতার আড়ালে পড়ে যায়। প্রাথমিকভাবে অপরাধীরা ধরা পড়লেও পরবর্তীতে তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে সদম্ভে বিচরণ করতে থাকে। বিচারহীনতার এই অপসংস্কৃতি সমাজে অপরাধের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। যেখানে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় আনা অপরিহার্য, সেখানে সংশ্লিষ্টরা ছাড়া পেয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে দ্বিধা করে না। সঙ্গত কারণে নীতি-নৈতিকতা আর মানবিকবোধের স্খলন প্রতিনিয়তই সমাজকে তাড়া করে বেড়ায়। নির্যাতনের শিকার নারীদেরও সমাজ শান্তি আর স্বস্তিতে থাকতে দেয় না। কুমিল্লার তনু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার সুরাহা আজ অবধি হয়নি। সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ঘটনা সারাদেশকে স্তম্ভিত করে। বলা হচ্ছে এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা ছাত্রলীগ কর্মী। ক্ষমতাসীন সরকারের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ লোমহর্ষক এমন সব দুর্ঘটনা ঘটালেও তাদের কোনভাবেই রেহাই দেয়া হবে না বলে নেতৃবৃন্দ সতর্ক করে দিয়েছেন। বলা সঙ্গত, অপরাধীর কোন দল, সংগঠন কিংবা পরিচয়ও নেই। তারা শুধু ন্যক্কারজনক অপরাধের নৃশংস হোতা হিসেবেই চিহ্নিত। এছাড়াও খাগড়াছড়িতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় ৭ জনকে পুলিশ ধরতে সক্ষম হয়েছে। এসব অভিযুক্ত ব্যক্তি আগেও এমন নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে। উপযুক্ত শাস্তি না হওয়ায় তাদের সহিংস কর্মতৎপরতা বেড়ে যাওয়ার ঘটনা প্রকাশ পাচ্ছে। দেশে এখন চলছে করোনাভাইরাসের চরম সঙ্কটকাল। মহামারীর সংক্রমণে সারাদেশ দিশেহারা, বিপর্যস্ত। পাশাপাশি আরও ভয়ঙ্করভাবে চেপে বসেছে নারী নির্যাতনের অসহনীয় ঘটনাসমূহও। নারীরা এখন ঘরে-বাইরে কোথাও নিরাপত্তার বলয় খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছে। করোনা মহামারীর কারণে দেশ অবরুদ্ধতার জালে আটকা পড়লে মানুষকে গৃহবন্দী অবস্থায় দুঃসহ সময় পার করতে হয়। আর সমস্ত দুর্যোগ ও দুর্বিপাকে অসহায় নারীদের ওপর নেমে আসে অত্যাচার আর নিপীড়ন। সেটা শান্তির গৃহকোণের নিরাপদ বলয়েও। অর্থাৎ নিজ পরিবারেও নারীরাও শান্তি আর স্বস্তিতে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে। এই করোনা দুর্যোগেও ৬০১ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ৬ থেকে ১২ বছরের শিশু ধর্ষণের কবল থেকে মুক্তি পায়নি। ধর্ষণের পর হত্যা এবং আত্মঘাতীর ঘটনাও ঘটছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চলতি বছরের ছয় মাসের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবেদনে এমন তথ্য-উপাত্ত উঠে আসে। ধর্ষণের যথার্থ কারণ অনুসন্ধান করা আসলে একটি গোলক ধাঁধার বিষয়। শুধু আইনী কার্যক্রমে রোধ করার চাইতেও বেশি জোর দেয়া আবশ্যক নারীর প্রতি সম্মান আর শ্রদ্ধার আসন তৈরি করা। মানবিক মূল্যবোধ আর মনুষ্যত্বের যথার্থ চর্চাও এক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরী। তবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিকেও কোনভাবেই উপেক্ষা করা সমীচীন হবে না। অপরাধ করলে তার দ- তাকে পেতেই হবে। এর কোন অন্যথা মোটেও সমাধানের পথ নয়।
×