ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনা ॥ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্থপতি

প্রকাশিত: ২১:১২, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

শেখ হাসিনা ॥ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্থপতি

(গতকালের পর) এটি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে উল্লেখ করার দরকার যে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সেই কন্যা ও বাংলা মায়ের সেই মহীয়সী নারী যিনি বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতাকে অবলম্বন করে বাংলাদেশকে ডিজিটাল যুগের উপযোগী করে গড়ে তোলার কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেন। সে কারণে তিনটি শিল্প বিপ্লবে যোগ দিতে না পারা দেশটিতে অন্তত তৃতীয় শিল্প বিপ্লবে শরিক করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশের যুগান্তকারী পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করেন। সম্ভবত এটিও উল্লেখ করা দরকার যে তিনিই বাংলাদেশের প্রথম রাজনীতিক যিনি নিজে কম্পিউটার ব্যবহার করেন। তাঁর সুযোগ্য পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের সহায়তায় তিনি সেই আশির দশকে নিজে কম্পিউটার ব্যবহার করে এমনকি দল পরিচালনা করেন। তিনি নিজেই বলেন, আমি তাকে বাংলা টাইপ করা শিখিয়েছিলাম। স্মরণে রাখা দরকার তিনিই দেশের প্রথম রাজনৈতিক দলের নেত্রী যিনি দলের জন্যও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের মাধ্যমে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি নির্বাচনী প্রচার চালান। হাজার হাজার বছর উপনিবেশ থাকা ও বিদেশীদের দ্বারা লুণ্ঠিত হওয়া একটি ভূখ- অগ্রগতির সোপানে পা রাখার যে স্বপ্ন বাঙালী বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে দেখেছিল- বিজয়ী হয়েছিল, সেই দেশটির ৫০ বছরের ইতিহাসের ২৯ বছরই একাত্তরের পরাজিত শত্রুদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় আমাদের সামনে চলা স্তিমিত হয়ে পড়ে। তবে বাংলাদেশের আজকের অবস্থান বস্তুত বঙ্গবন্ধুর শাসনকালের সাড়ে তিন বছর ও শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনকালের। বিশেষ করে তিনি ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচী ঘোষণা করার পর ২০০৯ সাল থেকে দেশটির যে রূপান্তর ঘটাতে থাকেন তার ফলে বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল দুনিয়ার একটি বিস্ময়ের নাম। একদিকে তিনি কৃষি-শিল্প উৎপাদন, বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন, মানবসম্পদের দেশে-বিদেশে কার্যকরভাবে ব্যবহারের পাশাপাশি ব্যক্তি, সমাজ, সরকার ও রাষ্ট্রের সামগ্রিক ডিজিটাল রূপান্তর করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে তাঁর রূপকল্প একুশ, এসডিজি গোল ২০৩০, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা ৪১ অথবা ডেল্টা প্লান ২১০০ পর্যালোচনা করলে এটি স্পষ্ট হবে যে তিনি বঙ্গবন্ধুর কেবল জেনেটিক উত্তরাধিকারী নন, বরং তিনিই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্থপতি। আমরা যখন এই মহান মানুষটির ৭৪তম জন্মদিন পালন করছি তখনই ২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে তিনি একটি অসাধারণ ভাষণ দেন, তাঁর ভাষণ সম্পর্কে ডিজি বাংলার প্রতিবেদনটির অংশবিশেষ তুলে ধরছি, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে সৃষ্ট উদীয়মান চাকরির বাজার বিবেচনা করে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে ডিজিটাল একাডেমি এবং সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে ডিজিটাল সহযোগিতায় বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে একটি শক্তিশালী বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের অপেক্ষায় রয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমরা বাংলাদেশকে ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি, কাজেই আমরা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে এই রূপান্তরিত যাত্রার কেন্দ্রে রাখতে চাই।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যারই ন্যূনতম ইন্টারনেট প্রবেশগম্যতা নেই। সে শূন্যতা পূরণ করতে হবে।’ বুধবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনের সাইডলাইনে ‘ডিজিটাল সহযোগিতা: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এ্যাকশন টুডে’ শীর্ষক একটি উচ্চপর্যায়ের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পূর্বে ধারণকৃত ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, কোভিড-১৯ মহামারী ডিজিটাল পরিষেবার শক্তিকে উন্মোচিত করেছে এবং ডিজিটাল বিভাজনকেও প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশে তাঁর সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প নির্ধারণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডিজিটালাইজেশনের জন্য সরকারের চাপের কারণেই বাংলাদেশ ইন্টারনেট প্রযুক্তিতে একটি ব্যাপক পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করেছে। তিনি বলেন, দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০৩ দশমিক ৪৮ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। আমাদের ডিজিটালাইজেশন জনগণকে পরিবর্তন-নির্মাতা হওয়ার বিশাল সুযোগ এনে দিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘ডিজিটাল কানেকটিভিটির ওপর আমাদের আলোকপাত অর্থনৈতিক বিকাশকে সহজতর করেছে এবং নারীর ক্ষমতায়নসহ সামাজিক পরিবর্তনকে অনুঘটক করেছে। এটি এসডিজিগুলোকে বাস্তবায়ন এবং কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করছে।’ এই ভাষণের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সারা বিশ্বকে জানিয়ে দিলেন যে, তিনি কেবল ডিজিটাল বাংলাদেশের স্থপতি নন ডিজিটাল বিশ্বের নেত্রী। মুজিববর্ষে অবস্থান করে আমরা যখন আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার হীরক জন্মবার্ষিকীর দিকে যাচ্ছি তখন সমগ্র জাতি ও বিশ্বের সকল বাংলা ভাষাভাষী মানুষসহ শোষিত মানুষদের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা, কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা শেখ হাসিনার হাতেই বাস্তব হচ্ছে সেজন্য অভিনন্দন এই মহীয়সী স্বর্ণকন্যার প্রতি। (সমাপ্ত) ঢাকা ॥ প্রথম লেখা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ॥ সর্বশেষ সম্পাদনা ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ॥ মতামত লেখকের নিজস্ব। লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার-এর জনক [email protected], www.bijoyekushe.net.bd, www.bijoydigital.com
×