ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

প্রকাশিত: ২০:৩২, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

অনলাইন ডেস্ক ॥ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ৭৪তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন উপলক্ষে আজ রবিবার দেওয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, তার (প্রধানমন্ত্রী) রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, গতিশীল নেতৃত্ব, মানবিক মূল্যবোধ দিয়ে তিনি শুধু দেশেই নন, বহির্বিশ্বেও অন্যতম সেরা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও কল্যাণ কামনা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালী জাতি পেয়েছে স্বাধীনতা আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাঙালী জাতি এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আজীবন লালিত স্বপ্ন সুখী-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ার পথে। আবদুল হামিদ বলেন, ‘ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পরপরই ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারে শেখ হাসিনার জন্ম। শৈশব থেকেই তিনি দেখেছেন তার পিতা বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব, সংগ্রামী জীবন এবং দেশ ও গণমানুষের রাজনীতি। যুক্ত হয়েছেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনসহ বাঙালির অধিকার আদায়ের সকল লড়াই-সংগ্রামে। ’ রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংগ্রামী, সাহসী। জাতির পিতার কন্যা হওয়া সত্ত্বেও তার চলার পথ কখনো কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন। মা, বাবা, ভাইসহ আপনজনদের হারানো বেদনা বুকে ধারণ করে পরবর্তীসময়ে ছয় বছর তাকে লন্ডন ও দিল্লীতে চরম প্রতিকূল পরিবেশে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে গ্রেনেড হামলাসহ বহুবার শেখ হাসিনার ওপর হামলা হয়েছে। মহান আল্লাহর অশেষ রহমতই তাকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করেছে। ’ তিনি বলেন, ‘১৯৮১ সালে ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে তাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাসে এটি ছিল এক অনন্য মাইলফলক। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে স্বজন হারানো বেদনা বুকে নিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ’৯০-এর গণআন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন হয়, বিজয় হয় গণতন্ত্রের। ’ আবদুল হামিদ বলেন, ‘১৯৯৬ সালের ১২ জুন সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। এসময় তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তি এবং প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার টানা তিনবার ক্ষমতায় আসে। তিনি চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। এসময় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকরসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু ও রায়ের বাস্তবায়ন, সমুদ্রে বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা, ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত স্থলসীমানা নির্ধারণ তথা ছিটমহল বিনিময় চুক্তি সম্পাদিত হয়। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি জাতিকে অনেক দিয়েছেন, দিয়ে যাচ্ছেন। ’ আবদুল হামিদ বলেন, ‘জাতির পিতার মতো শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে। পদ্মাসেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেলসহ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। মহাকাশে উৎক্ষেপিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বশান্তিতে বিশ্বাসী এবং নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর। ’ ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত ও নির্যাতিত লাখ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দেশে আশ্রয় দিয়ে তিনি বিশ্বমানবতার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এজন্য তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ অভিধায় ভূষিত হয়েছেন। দুবাইভিত্তিক প্রভাবশালী পত্রিকা খালিজ টাইমস তাকে ‘নিউ স্টার অব দ্য ইস্ট’ উপাধিতে ভূষিত করে তার গতিশীল নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা, তথ্যপ্রযুক্তি, নারীর ক্ষমতায়নসহ দারিদ্র্যমোচনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি দেশি-বিদেশি অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এবং দেশের জন্য বয়ে এনেছেন বিরল সম্মান। ’ রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করতে তিনি ‘ভিশন ২০২১’ ও ‘ভিশন ২০৪১’ কর্মসূচিসহ ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীব মহাপরিকল্পনা’ (ডেল্টা প্ল্যান ২১০০) গ্রহণ করেছেন। দেশ ও জনগণের জন্য তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ’ করোনা ভাইরাস মহামারি গোটা বিশ্বকে এক চরম অনিশ্চয়তার কথা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, ‘এ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে উন্নত বিশ্ব যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, সঠিক সিদ্ধান্তও অদম্য সাহসিকতায় বাংলাদেশ করোনা পরিস্থিতি সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করে যাচ্ছে। এজন্য রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং তার ভবিষ্যৎ চলার পথ সফল ও সার্থক হোক সেই কামনা করেন।
×