ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আগের রূপে ফেরা শুরু ॥ উদ্বেগে যুক্তরাষ্ট্র

শর্ত ভঙ্গ তালেবানের

প্রকাশিত: ০০:১৪, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

শর্ত ভঙ্গ তালেবানের

আফগানিস্তানে চলা ১৯ বছরের যুদ্ধ অবসানে তালেবানের সঙ্গে দেশটির সরকার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কাতারের দোহায় শান্তিচুক্তির শর্ত ছিল, তালেবানের সকল যোদ্ধাদের মুক্তি দিতে হবে এবং তালেবানও তাদের হাতে জিম্মি সরকারী সেনাদের মুক্তি দেবে। আফগান সরকার সেই শর্ত মানলেও তালেবান যোদ্ধারা শর্ত মানছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা একেরপর এক হামলা অব্যাহত রেখেছে। খবর ভয়েস অব আমেরিকা ও এএফপির। অভিযোগ উঠেছে, জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পরপরই তালেবানরা পূর্বেকার রূপে ফিরতে শুরু করেছে। তারা নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছে। বুধবার দেশটির উরুজগান প্রদেশের গিজাব জেলায় ২৮ জন পুলিশ কর্মীকে হত্যা করেছেন। অপরদিকে সেনা ও পুলিশ বাহিনীর যৌথ হামলায়ও বহু তালেবান নিহত হয়েছে। তবে পূর্বেকার রূপে ফেরার অভিযোগ অস্বীকার করেছে তালেবান। শান্তি আলোচনায় মধ্যস্ততাকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র এমন সহিংসতার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং দুটি পক্ষকে সংঘাত এড়াতে আবেদন জানিয়েছে। আফগানিস্তান নিরাপত্তা বাহিনী দেশের পূর্বাঞ্চলে এক তীব্র সংঘর্ষে ৬৫ জন তালেবানকে হত্যা করেছে। কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার জানান, চলমান শান্তি আলোচনা সত্ত্বেও উভয় পক্ষের মধ্যে এ যুদ্ধ চলে। বুধবার গভীর রাতে তালেবানরা পাক্তিকা প্রদেশের ওয়াজি খোয়া জেলায় সেনা সদর দফতরে হামলা চালানোর পরে সর্বশেষ এই রক্তপাতের ঘটনা ঘটে। পাক্তিকার পুলিশ মুখপাত্র শাহ মোহাম্মদ আরিয়ান বলেন, ‘এই লড়াই বেশ কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয় এবং আফগান বাহিনীর পাল্টা হামলায় বিপুল সংখ্যক তালেবান হতাহত হয়।’ তিনি বলেন, ‘এ সংঘর্ষে ৬৫ জন তালেবান যোদ্ধা নিহত ৩৫ জন আহত হয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে পুলিশ বাহিনীর ৩ সদস্য নিহত ও অপর ছয় সদস্য আহত হয়েছেন।’ পাক্তিকা প্রাদেশিক পরিষদের প্রধান বখতিয়ার গুল যাদরান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তালেবানরা তাৎক্ষণিক কোন মন্তব্য করেনি। তালেবানের পক্ষ থেকে দক্ষিণ আফগানিস্তানের উরুজগানে ২৮ জন আফগান আধাসামরিক পুলিশকে হত্যার ঘোষণার একদিন পর এই সহিংসতা ঘটেছে। চলতি মাসের গোড়ার দিকে দোহায় তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে ঐতিহাসিক শান্তি আলোচনা শুরু হয়। বৈঠকে আফগান সরকারের প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ, তালেবানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা মোল্লাহ আব্দুল গনি বারাদরসহ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ বছরের চেষ্টার পর প্রথমবারের মতো তালেবান ও আফগান সরকার সরাসরি বৈঠকে অংশ নেয়। তবে এ আলোচনা থেকে অতি দ্রুত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নাও আসতে পারে বলে মনে হয়। আফগান সরকারের প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ বৈঠকে বলেন, আমরা সুদূরপ্রসারী ও স্থায়ী শান্তি চাই। তিনি বলেন, আমরা যদি খোলামনে আলোচনা করি এবং সেভাবে কাজ করি তবে অবশ্যই আফগানিস্তানের মাটি থেকে চিরতরে ক্ষুধা ও দারিদ্রতা দূর করতে পারি। তালেবান নেতা মোল্লাহ আব্দুল গনি বারাদর বলেন, আমরা আফগানিস্তানকে একটি প্রকৃত ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই। এ বিষয়ে তালেবান কোন প্রকার আপোস করবে না। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, আফগানিস্তানের ভাগ্য আফগানরাই নির্ধারণ করুক। তিনি বলেন, তবে সকল পক্ষের উচিত একটি শান্তিময় পরিবেশ খুঁজে বের করা। কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মাদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি বৈঠক শুরুর আগে বলেছিলেন, বৈঠকে সফলতা নির্ভর করছে উভয় পক্ষের ছাড়ের ওপর। তবে উভয় পক্ষকে ভাল মানসিকতা পোষণ করতে হবে। গত ফেব্রুয়ারিতে সম্মত হওয়া বিতর্কিত বন্দী বিনিময় চুক্তির বিষয়ে তিক্ত অসম্মতির কারণে পরিকল্পিত সময়ের চেয়ে ছয়মাস পর যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত এ আলোচনা শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ ভয়াবহ বিমান হামলার ১৯তম বার্ষিকীর একদিন পর আফগান শান্তি আলোচনা শুরু হয়। আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে সহযোগিতা করা তালেবান সরকারকে উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে আক্রমণ চালায়।
×