ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দেশকে নতুন করে চেনাতে এগিয়ে আসছেন তরুণরা

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

দেশকে নতুন করে চেনাতে এগিয়ে আসছেন তরুণরা

সমুদ্র হক ॥ পর্যটনের অফুরান ভাণ্ডার এই দেশ। প্রাচীন ইতিহাস, বাঙ্গালী সাংস্কৃতিক বলয় সবকিছুকেই ঘিরে রেখেছে বঙ্গীয় এই ব-দ্বীপ। কালের আবর্তে বাংলাদেশ পর্যটনের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে আছে। চীনের পরিব্রাজক হিউয়েন সাং কয়েক হাজার বছর আগে খুঁজে পেয়েছেন প্রাচীন নগরী। যা কয়েকটি কালের ধ্বংসের চিহ্ন অবকাঠামো নিয়ে সাক্ষী হয়ে আছে বগুড়ার মহাস্থানগড়ে। দেশে দেশে মানুষে মানুষের মমতার বন্ধনের আহ্বান জানাচ্ছে যুগ যুগ ধরে। বিশ্বের বহু দেশের ঐতিহ্য স্থান ও স্থাপনাকে ধরে রাখতে পর্যটক গড়ে তোলার চেষ্টা বহুকাল ধরে। যার ধারাবহিকতায় জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার আহ্বানে আজ রবিবার বিশ্বে পালিত হচ্ছে বিশ্ব পর্যটন দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘পর্যটন ও গ্রামীণ উন্নয়ন’। প্রতিপাদ্যের বিষয়ে দৃষ্টি দিলে বাংলাদেশের গ্রামীণ উন্নয়নের যে কতটা রূপান্তর ঘটেছে তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারে দেশের মানুষ। বাংলাদেশের দূর অতীতের সেই গ্রামের চিহ্ন আজ জাদুঘরে। সেই ছন, বাঁশ বেড়ার কুড়েঘর আজ অতীত স্মৃতি। গ্রামীণ মেঠো পথ পাল্টে পাকা সড়ক। হেরিকেন লণ্ঠন উঠে গিয়ে বিদ্যুতের বাতি। বলদের লাঙ্গল জোয়াল আর নেই। নেই গোয়াল ঘর। এখন পাওয়ার টিলার ট্রাক্টর ও ডেইরি পোলট্রি ফার্ম। বাংলাদেশের এমন গ্রাম দেখে পর্যটকদের বলতেই হবে উন্নয়ন কিভাবে করা যায়। যা দেখিয়ে দিয়েছে এই দেশের মানুষ। পর্যটক আকর্ষণের কি নেই বাংলাদেশে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ১৭৫ মাইলের সমুদ্র সৈকত দিয়ে বঙ্গোপসাগর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতের পর্যটকদের ঘিরে পাঁচ তারকাসহ আবাসন নির্মিত হয়েছে অন্তত ৫শ’র বেশি। এর বাইরে আছে রিসোর্ট কটেজ নানা কিছু। সড়কপথ আকাশপথ পর্যটকদের যোগাযোগের বড় মাধ্যম। শীঘ্রই সরাসরি রেল যোগযোগ স্থাপিত হচ্ছে। সমুদ্র পাহাড় একসঙ্গে দেখা কক্সবাজার। মহেশখালী কুতুবদিয়া হাতিয়া সন্দীপ। কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপের পরিচয়ে বিশ্বের মানুষকে কাছে টানে। দক্ষিণাঞ্চলের খুলনার ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন বান্দরবানের নীলগিরি, নিঝুমদ্বীপ এই নামগুলো শুনলেই মিলন বন্ধন এঁকে দেয়। রাজধানী ঢাকার কাছে সোনারগাঁ (সাধারণভাবে যার পরিচিতি মধ্যযুগে স্বাধীন সুলতানি বাংলার রাজধানী)। সোনারগাঁ নিয়ে আছে বহু মিথ। সিলেটের শ্রীমঙ্গলের হামহার ঝরনা, বিছানাকান্দি, রাতুরগুলের নাম ৫-৬ বছর আগেও খুব একটা শোনা যায়নি। অপিরিচিত ছিল চট্টগ্রামের মিরেরসরাই, খইয়াছড়া, বান্দরবনের বোয়াংছরি, তিনাপ সাইডার, রাঙ্গামাটির ধুপপানি ঝরনা, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর। বরিশালের কুয়াকাটা সমুদ্রে সৌন্দর্যের আরেক হাতছানি। দেশের প্রতিটি জেলায় ঐতিহ্যের স্থাপনায় ঘুরে বেড়নো যায়। বর্তমানের তরুণরা কত জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর স্থান আবিষ্কার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিতি করে দিচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। এগুলোই বর্তমানে তরুণদের বেড়ানোর অন্যতম জায়গা। তরুণরা এখন দলবেঁধে এইসব যায়। তাবু খাটিয়ে রাত্রিযাপন করে বিদেশী স্টাইলে। প্রতিনিয়ত তারা খুঁজে বের করছে নতুন নতুন জায়গা। এ যেন বাংলাদেশকে নতুন করে চেনা। ২০০৪ সালে এক আঞ্চলিক বৈঠকে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চল বাংলাদেশ ও নেপালের ঐতিহ্যবাহী প্রতœতাত্ত্বিক স্থানগুলোকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পের বিকাশ তথা হেরিটেজ হাইওয়ে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। এরই অংশ হিসেবে একটি প্রকল্পের আওতায় বগুড়ার মহাস্থানগড়, নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির ও বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ অবকাশ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। ওই সময় বাংলাদেশের কোন শহরকে এক বছরের জন্য সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী গড়ে তোলার সিদ্ধান্তে বগুড়ার মহাস্থানগড়কে বেছে নেয়া হয়। পরে বগুড়ার কর্মসূচী বাতিল করে দেয় সার্কের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সার্ক কালচারাল সেন্টার। দেশের বিভিন্নস্থানে মানুষের বেড়ানোর প্রবণতা বাড়ছে। সাপ্তাহিক ছুটি ও বাড়তি ছুটিতে পরিবার বন্ধুবান্ধব পরিচিতজনকে নিয়ে ঘুরতে যান। মানুষের এই ঘুরতে যাওয়ার প্রবণতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের পর্যটন বিকাশ ক্রমইে বাড়ছে। ট্যুর অপারেশন এ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, বছরে অন্তত ৬০ লাখ মানুষ বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে যায়। ২ হাজার সালে এই সংখ্যা ছিল ৪ লাখ। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল এ্যান্ড ট্যুরিজমের হিসাব বাংলাদেশে পর্যটন খাতে সরাসরি কর্মরত অন্তত ২০ লাখ পরোক্ষভাবে ২৫ লাখ। এক সুতোয় দুই বাংলা ঘুরে দেখার জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল ঘুরে দেখার একটি উদ্যোগ নেয়া হয় ক’বছর আগে। পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে এমনস্থানে সার্কিটে মেলানোর চেষ্টা হয়। উত্তরাঞ্চলে পাহাড়পুর মহাস্থানগড় কান্তজীর মন্দির ঐতিহ্যের পর্যটন কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গের সুউচ্চ হিমালয় তার নিচে গভীর জঙ্গল ধর্মীয় স্থাপনা হিমালয় ডুয়ার্সের জঙ্গল দার্জিলিং চা বাগান নানা কিছু। এ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন এ্যান্ড ট্যুরিজম নামে পশ্চিমবঙ্গের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বলছে : পর্যটনের এই সার্কিটে বছর কয়েক হয় চাহিদা বেড়েছে। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সকল স্থানেই ভ্রমণ পিয়াসীরা ঘুরতে পারে। যা সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন। এজন্য উভয় দেশের সরকারকে পর্যটকদের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে তার। একইসঙ্গে বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা সীমান্ত পয়েন্ট চার দেশের (বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান) পর্যটকদের মেল বন্ধন করে দিয়েছে। উত্তরাঞ্চলের সীমান্ত পথ ব্যবহার করে ভারতের সেভেন সিস্টার খ্যাত রাজ্যগুলোতেও পর্যটকরা ভ্রমণ করতে পারে। বিশে^র প্রতিটি দেশ পর্যটন খাতকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশে পর্যটনের ক্ষেত্রটি বিশাল। দেশের প্রতিটি স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পর্যটন স্পট। এই পরিচিতি বিশ্বের কাছে তুলে ধরলে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে দেশ। বাংলাদশে পর্যটকদের নিরাপদে ভ্রমণের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ গঠিত হয়েছে। শুধু প্রয়োজন পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুষ্ঠু পরিকল্পনা। বিশে^ করোনার ক্রান্তিকাল কেটে যাওয়ার পর বাংলাদেশ পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করার প্রস্তুতি নিতে পারে এখনই।
×