ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অনেক সমস্যার সমাধান

বিনা খরচে আইনী সহায়তা পেলেন ৫ লাখের বেশি দরিদ্র অসচ্ছল মানুষ

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

বিনা খরচে আইনী সহায়তা পেলেন ৫ লাখের বেশি দরিদ্র অসচ্ছল মানুষ

বিকাশ দত্ত ॥ আয়েশা বেগম। ৩ বছর আগে এলাকায় সালিশ করে ব্যর্থ হয়ে ১৬৪৩০-এ ফোন করে তার মেয়ের পারিবারিক সমস্যা সমাধানে জেলা লিগ্যাল এইড অফিস কুমিল্লায় যান। আপোস মীমাংসার মাধ্যমে মেয়ে তার দেনা পাওনা বুঝে পেয়েছে এবং অন্যত্র বিবাহ করে সুখে শান্তিতে বসবাস করছে। একইভাবে এক মহিলার বয়স আশি বছরেরও ওপরে। স্বামী হারিয়েছেন বহু আগেই। চার কন্যা দুই পুত্রের জননী। জীবনী শক্তির সবটাই সন্তান সংসারের জন্য দিয়েছেন। তবুও জীবন সায়াহ্নে এসে প্রাপ্তির খাতা শূন্য। এক পুত্র সন্তান মারা গেছে। তার পরিবার দ্বারা তিনি নিগৃহীত। আরেক পুত্র ও চার কন্যার কেউই কোন খোঁজ নেয় না, ভরণপোষণও দেয় না। ভাশুর দেবরদের দ্বারা হয়েছেন বাস্তুহারা। নিঃস্ব রিক্ত এই মা এখন ভিক্ষাকেই বেছে নিয়েছেন বেঁচে থাকার উপায় হিসেবে। সম্পদ উদ্ধারের জন্য মামলার খরচ বহন করার আর্থিক ক্ষমতা বা আদালত প্রাঙ্গণে দৌড়ঝাঁপ করার শারীরিক শক্তি কোনটাই নেই। তাই সম্বলহীন এই মায়ের পাশে শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে লক্ষ্মীপুর জেলা লিগ্যাল এইড অফিস। সরকারী আইনগত সহায়তা সেবার মাধ্যমে এই মার আইনী অধিকার ও ভরণপোষণ নিশ্চিত করার আইনী পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে। লক্ষ্মীপুর জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের উদ্যোগে এই মায়ের জন্য ব্যক্তিগত পর্যায়ে সামান্য আর্থিক সাহায্যেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার আইনী ও সামাজিক অধিকার, মর্যাদা ফিরে পাক। এ উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। শুধু লক্ষ্মীপুর লিগ্যাল এইড অফিস নয়, দেশের ৬৪ লিগ্যাল অফিস গত দশ বছরে পাঁচ লাখ ২৫ হাজার ৩০ জন দরিদ্র-অসচ্ছল মানুষকে বিনা খরচে আইনগত সহায়তা প্রদান করেছে । আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত দশ বছরে পাঁচ লাখের বেশি দরিদ্র অসচ্ছল মানুষকে বিনা খরচে আইনগত সহায়তা প্রদান করেছে সরকার। এই দশ বছরে হতদরিদ্র মানুষের ক্ষতি পূরণ বাবদ ৩৮ কোটি ৫৪ লাখ ৫৪ হাজার ২৩৬ টাকা আদায় করেছে। আইনী পরামর্শ সেবা দিয়েছেন ১৩ হাজার ৮১৪ জন। মামলায় সহায়তা করেছে ২ হাজার ৮৪৪ জন। এই সময়ের মধ্যে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি করেছে ২ হাজার ৩০টি। এছাড়া জেলা লিগ্যাল এইড অফিস নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা ১ লাখ ২৮ হাজার ৭৩৩টি। শ্রমিক আইন সহায়তা সেল ২৭৫ এবং সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড অফিস ১ হাজার ৯শ’ ৮টি মামলা নিষ্পত্তি করেছে। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, ২০১০-২০২০ অর্থবছরে ৬৪ জেলায় ২৫ হাজার ৫১৩ জনকে আইনী সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। যার মধ্যে নারী ১২ হাজার ৬০, পুরুষ ১৩ হাজার ২১৩ এবং শিশু ২৪০ জন রয়েছে। আইনগত সহায়তা প্রাপ্ত মামলাগুলোর মধ্যে ফৌজদারি ছিল ১৮ হাজার ১৭৪টি, দেওয়ানী ২ হাজার ২০২ ,পারিবারিক ৫ হাজার ৪৩ এবং অন্যান্য ৯৪টি মামলা। এছাড়া ৬৪ জেলার কারাগারে আটক ৯ হাজার ৫৩০ জনকে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এই বছরে মোট মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ২০ হাজার ৫৫৭টি। বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গরিব ও অসহায়দের জন্য কাজ করছেন সরকারী জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার কর্মীরা। দিন-রাত একাধারে ২৪ ঘণ্টা আইনী সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন সংস্থা। বিনা খরচে আইনী সহায়তা দিয়ে শহর থেকে গ্রামের তৃণমূল অসহায় ও গরিব মানুষের দুঃখ-দুর্দশা মুছে দেয়ার সেবায় নিয়োজিত লিগ্যাল এইড কর্মীরা। ২০১০ সালে বিনা খরচে অসহায় মানুষদের আইনী সেবা দিয়ে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সরকারী আইনগত প্রদান সংস্থা (লিগ্যাল এইড)। রাজধানীর বেইলী রোডে অবস্থিত জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার অফিসসহ ৬৪ জেলা কার্যালয়ে দিন দিনই বাড়ছে এ কর্মসূচীর সফলতা ও সুফল ভোগী মানুষের সংখ্যা। আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ আইনের আওতায় সরকার জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে এবং দরিদ্র, অসহায় মানুষের আইনের আশ্রয় ও বিচার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এ সংস্থার অধীনে প্রত্যেক জেলার জজকোর্ট প্রাঙ্গণে জেলা লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপন করেছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে সরকারী আাইনী সেবা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হয়েছে সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড অফিস। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা লিগ্যাল এইড কমিটি এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করা হয়েছে। চৌকি আদালতে ও শ্রম আদালতে গঠিত হয়েছে বিশেষ কমিটি। সরকার আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার তত্ত্বাবধানে এসব কমিটি ও লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায় সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থসামাজিক কারণে বিচার পেতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী ও শ্রমজীবী জনগণকে সরকারী খরচে আইনগত সহায়তা প্রদান করছে। রাজধানীর বেইলী রোডে অবস্থিত জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার অফিসসহ ৬৪ জেলা কার্যালয়ে দিন দিনই বাড়ছে এ কর্মসূচীর সফলতা ও সুফল ভোগী মানুষের সংখ্যা। ফলে বিনা খরচে আইনী সহায়তা নিতে প্রতিদিন জাতীয় হেল্পলাইন কল সেন্টারের ‘১৬৪৩০’ নম্বরে বা সরাসরি যোগাযোগ করছেন বিচার প্রার্থীরা। গ্রামের অসহায় দরিদ্র নারী-পুরুষ আইনী সহায়তা পেয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন। অসহায় নারীরা পুনর্বাসিত হয়ে ফিরে পাচ্ছেন তাদের সুখের দাম্পত্য জীবন ও সংসার।
×