ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোঃ শফিকুল ইসলাম

মানবিকতা ও উন্নয়নের রূপকার শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ২১:০৫, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

মানবিকতা ও উন্নয়নের রূপকার শেখ হাসিনা

আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, আমাদের মানবিক প্রধানমন্ত্রী। আপনার জন্য শুভ কামনা। আল্লাহ যেন আপনাকে দীর্ঘায়ু দান করেন, এটাই আমাদের কামনা। আমার চোখে একজন মানবিক এবং অসাধারণ মানুষ তিনি। মানুষের দুঃখ-কষ্টে পাশে দাঁড়াতে কখনও পিছপা হননি, দেশ কাল সীমানার গ-ি পেরিয়ে মানবতাই তাঁর কাজের পুণ্যভূমি হয়ে ওঠে। অগণিত ঘটনার উল্লেখে এ কথা প্রমাণ করা সম্ভব। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী কোথাও আশ্রয় না পেয়ে পালিয়ে আসে এদেশে। তাদের আশ্রয় হয় বাংলাদেশে এবং সেই আশ্রয় দিয়েছিলেন আমাদের মানবিক প্রধানমন্ত্রী। তিনি কোন চাপে তাদের আশ্রয় দেননি, দিয়েছেন তাঁর উদারতা এবং মানবতার কারণে। এজন্যই তিনি ব্যতিক্রম। বিশ্ব দরবারে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন এবং ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। কিছু দিন পূর্বে শেরপুরের একজন দরিদ্র মানুষকে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ উপহার হিসেবে বসতবাড়ি করে দেন। ‘আল্লাহ তাঁরে শত বছর বাঁচাইয়া রাখুন’ প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে মন্তব্য করেন আনন্দে আপ্লুত ওই ব্যক্তি। উল্লেখ্য, তার নাম নাজিম উদ্দিন যিনি নিজের ঘর মেরামত করার জন্য ২ বছরে ভিক্ষা করে ১০ হাজার টাকা জমিয়েছিলেন। সেই টাকা ২১ এপ্রিল তিনি করোনায় কর্মহীন ব্যক্তিদের খাদ্য সহায়তার জন্য শেরপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট মানুষের সেবার জন্য দান করতে চান। যখন ঘটনাটি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে তখন তিনি নাজিম উদ্দিনকে একটি বসতঘর উপহার দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। যা পরে বাস্তবায়িত হয়। এছাড়াও কক্সবাজার জেলায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়কেন্দ্র খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২০টি ভবন করে দিচ্ছেন বর্তমান সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেনÑ জাতির পিতার জন্মশতবর্ষে আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহারা থাকবে না। সম্প্রতি মামিজা রহমান রায়া নামের একজন বিশেষ শিশু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তার ভালবাসা ব্যক্ত করে সে জানায় যে প্রধানমন্ত্রীর হাসি তার সব থেকে প্রিয়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী তার দাফতরিক ব্যস্ততার কোন এক ফাঁকে রায়ার ইচ্ছা পূরণ করেন। এই ঘটনা আরও শত সহস্র শিশুর কাছে প্রেরণা হয়ে তাদের উজ্জীবিত করবে। এখানে উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গত দশ বছরে ১৩০টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় ৭৬ লাখ ৩২ হাজার ব্যক্তি বা পরিবারকে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। খালেদা জিয়া সরকারের আমলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা চেষ্টায় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। রাজনীতিতে এমন হিংসাপরায়ণ নজির খুঁজে পাওয়া ভার। তবুও আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী সমবেদনা জানাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বাসায় যান, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার বাসায় প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি এবং খালেদা জিয়া তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎও করেননি। এটাই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অপরাপর রাজনৈতিক নেতৃত্বের পার্থক্য। হিংসার বিপরীতে প্রতিহিংসা শেখ হাসিনার পথ নয়। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এবং স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে খালেদা জিয়াকে দুইবার ছয় মাস করে মোট ১ বছরের জন্য বিশেষ বিবেচনায় কারামুক্তি প্রদান করা হয়। বিগত কয়েক বছরে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত লাভ করছে। আমার লেখায় কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করছি। যেমন প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য ৮টি বৃহৎ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। তার মধ্যে প্রধান প্রকল্প হল পদ্মা সেতু প্রকল্প এবং মেট্রোরেল প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী গণবিরোধী শক্তির শত বাধা-বিপত্তি শক্ত হাতে মোকাবেলা করে দেশের নিজস্ব অর্থায়নে বহু প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর কাজ এখন প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ সমাপ্ত করেছেন। যুবকদের জন্য ১১টি জেলায় নতুন যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। যা তাদের কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। প্রত্যেক উপজেলায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার এবং গত ১০ বছরে এর মাধ্যমে ২৪ লাখ তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে অনন্য অবদানের জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেপ্টেম্বর ২০১৬-এ ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ এবং ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ এ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারে ভূষিত হন। সম্প্রতি গ্লোবাল উইমেনস সামিট-২০১৮-তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ এ্যাওয়ার্ড’ এ ভূষিত করা হয়। মৎস্য খাতের উন্নয়নে দেশ অনেক উন্নতি সাধন করছে। বিগত কয়েক বছরে মাছের উৎপাদন ২৭.০১ লাখ মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪১.৩৪ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। এছাড়াও বিদ্যুত খাতে বর্তমানে বিদ্যুত সরবরাহের ক্ষমতা ২০,৪০০ মেগাওয়াট, যার মধ্যে নিজস্ব উৎপাদন ক্ষমতা ১৯,২৪০ মেগাওয়াট এবং ভারত থেকে আমাদের চেয়ে কম মূল্যে আমদানিকৃত বিদ্যুত ১,১৬০ মেগাওয়াট, যার মানে বিদ্যুত খাতে আমাদের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যতকেন্দ্র স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। শিক্ষা খাতে বর্তমান সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্বে এবং কর্ম পরিকল্পনায় প্রাথমিক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা প্রদান এবং সহকারী শিক্ষকদের বেতন দুই ধাপ উন্নীতকরণ করা হয়েছে। স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদানের লক্ষ্যে ‘প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট’ নামে একটি ট্রাস্ট গঠন করে ১ হাজার কোটি টাকা সিড মানি প্রদান এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ২৬ হাজার ৬৫৫টি মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ এবং ৩৫০টি আইটি ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও উচ্চ শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের মেয়াদে অনেকগুলো নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৫০টির বেশি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যে খাতে আন্তর্জাতিক মানের ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি এ্যান্ড হসপিটাল নির্মাণ এবং সারাদেশে আধুনিক কল সেন্টার ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন’ চালু করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে ও অনলাইনে চিকিৎসাসেবা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আরও উন্নত করার প্রচেষ্টা নেয়া হচ্ছে। ৬০টি হাসপাতালে টেলিমেডিসিনসেবা চালু করা হয়েছে। এছাড়াও যোগাযোগ খাতে ১০টি নতুন বিমান ক্রয় করা হয়েছে এবং আরও ৫টি কেনার চুক্তি হয়েছে। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর দুটিকে আধুনিকায়নসহ পটুয়াখালীতে পায়রা সমুদ্রবন্দর স্থাপন করার কাজ চলছে। যাতে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরের ওপর নির্ভরতা কমানো এবং চাপ কমানো সম্ভব হবে। পায়রা বন্দরের মাধ্যমে ২০১৬ সালে প্রাথমিকভাবে মালামাল উঠানো-নামানো শুরু হয়েছে। মেট্রোরেল স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। সঙ্গে সঙ্গে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দরের উন্নয়ন বর্তমান সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। প্রযুক্তি খাতে থ্রি-জি মোবাইল প্রযুক্তির পর দেশে ফোর-জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালু করা হয়েছে। মোবাইল প্রযুক্তিকে আরও সুরক্ষিত করতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধিত হচ্ছে। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে মহাকাশ বিজ্ঞানের যুগে। শিশুদের মানসিক শক্তি বিকাশে শিশু অধিকার ও নিরাপত্তা বিধান করার লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে ‘বিশ্ব শিশু দিবস’ এবং ‘শিশু অধিকার সপ্তাহ’ পালন করা হচ্ছে। এই সরকারের আমলে ‘জাতীয় শিশুনীতি-২০১১’ এবং ‘শিশু আইন-২০১৩’ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং তা বাস্তবায়িত হচ্ছে। যা আমাদের শিশুদের সামাজিক অধিকার আদায়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। উপরে বর্ণিত সকল অর্জনই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ ও যোগ্য নেতৃত্বে। বাংলাদেশের অগ্রগতির নিশান সমুন্নত রাখতে আরও অনেক বছর জীবিত থাকুন তিনি, এটাই পরম করুণাময়ের নিকট আমাদের প্রার্থনা। লেখক : শিক্ষক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় mail: [email protected]
×