ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এর কি শেষ নেই!

প্রকাশিত: ২০:৫০, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

এর কি শেষ নেই!

রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনে ট্রাকের ধাক্কায় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এমন মৃত্যু, অর্থাৎ অপমৃত্যুর কি শেষ নেই। ট্রাক কবে তার যন্ত্রদানব পরিচিতি থেকে বের হয়ে আসবে? শুধু ট্রাক নয়, সড়ক-মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহনের বেপরোয়া চালকরা একেকজন ট্রাফিক আইন-ভাঙ্গা মৃত্যুদূতে পরিণত হয়েছে। এদের কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না। প্রতি মাসেই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ছে। এসব দুর্ঘটনার কারণ হলো চালকদের বেপরোয়া গাড়িচালনা। এই তো সে দিনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ছিল একটি বাস পরপর তিনটি যানবাহনকে চাপা দেয়ায় ছয়জন মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু। দুর্ঘটনাকবলিত যানগুলো হলো মোটরসাইকেল, আলমসাধু ও রিক্সাভ্যান। বেশির ভাগ মহাসড়কে এখনও ডিভাইডার নেই। এ অবস্থায় চালকদের সড়কের এক পাশে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালাতে হয়। কিন্তু অনেক চালকই তা মানেন না। সড়কে বেপরোয়া যানবাহন চলাচলের কারণে যে প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে তার প্রতিকার কি? ২০১৮ সালে বিমানবন্দর সড়কে দুই কলেজশিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তাদের দাবির মুখে সরকার সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন করে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন তার মধ্যে একটি ছিল দূরপাল্লার বাসযাত্রায় বিকল্প চালক রাখা এবং পাঁচ ঘণ্টা পরপর চালক পরিবর্তন করা। চালক ও সাহকারীদের প্রশিক্ষণ, চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধা বাধ্যতামূলক, মহাসড়কের পাশে চালকদের জন্য বিশ্রামাগার, সর্বোপরি সিগন্যাল মেনে চলার কথাও বলেছিলেন তিনি। চালকের বেপরোয়া গাড়ি চালানো, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ট্রাফিক আইন অমান্য করাই মুখ্যত সড়ক দুর্ঘটনার কারণ। সড়ক-মহাসড়কগুলো যেন মৃত্যুফাঁদ। কোন কিছুতেই এর রাশ টানা যাচ্ছে না, দিন দিন বেড়েই চলেছে। করোনা মহামারীকালে সড়ক দুর্ঘটনা যেন আরেক ‘মহামারী’ আকার ধারণ করেছে। একটি ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটি ঘটনা ঘটছে। আমরা জানি, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু শুধু একটি পরিবারে গভীর শোকই সৃষ্টি করে না, আর্থিক পঙ্গুত্বও বরণ করতে হয়। গত বছরের শেষ দিকে এক সমীক্ষায় প্রকাশ- বিগত ১৫ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫৫ হাজার মানুষ। আর দুর্ঘটনাজনিত মামলা হয়েছে ৭৭ হাজার। এতদিনে এই সংখ্যাটি আরও স্ফীত হয়েছে। আর এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনার ফলে বছরে গড়ে বাংলাদেশের জিডিপির শতকরা দেড় ভাগ নষ্ট হয়, যার পরিমাণ পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এসব কারণে সড়ক দুর্ঘটনা অন্যতম জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে যেসব বিষয় অন্যতম অন্তরায়, সেগুলো দূর করার দায় যাদের, তাদের নির্বিকার উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতারও নেই কোন দৃষ্টান্তযোগ্য প্রতিকার। দেশে সড়ক যোগাযোগ অনেক বিস্তৃত হয়েছে, কিন্তু অনাকাক্সিক্ষত হলেও সত্য- নিরাপত্তাহীনতাও বেড়েছে। অব্যাহত সড়ক দুর্ঘটনার জন্য যা-ই দায়ী হোক না কেন এর প্রতিরোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আমরা সড়ক নিরাপত্তায় সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি নিরাপদ চলাচলের বিষয়টি পরিবহন সংশ্নিষ্ট সবার উপলব্ধিতে আনতেই হবে। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সবাই একনিষ্ঠ হলে সড়ক দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনা মোটেও দুরূহ নয়। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের যথাযথ আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল প্রত্যেকটি বিভাগের অসাধুদেরও চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
×