ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গাজীপুরে আদম ব্যবসায়ীদের উদ্ধার করতে গিয়ে হামলা, এসআইসহ আহত ৮, গ্রেফতার ৫

প্রকাশিত: ১৯:১২, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

গাজীপুরে আদম ব্যবসায়ীদের উদ্ধার করতে গিয়ে হামলা, এসআইসহ আহত ৮, গ্রেফতার ৫

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরের শ্রীপুরে মুক্তিপণের দাবিতে আটক আদম ব্যবসায়ীদের উদ্ধার করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হামলায় এসআই সহ পুলিশ ও আনসার বাহিনীর ৩ সদস্য আহত হয়েছেন। এসময় হামলাকারীরা পুলিশের কাছ থেকে ১টি সর্টগান ও ৮রাউন্ড গুলি ভর্তি পিস্তলের ম্যাগজিন ছিনিয়ে নেয়। হামলাকারীদের মারধরে আদম ব্যবসায়ী ৫জন আহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ নারীসহ ৫জনকে গ্রেফতার এবং লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গুলিসহ ম্যাগজিন উদ্ধার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো- গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ী ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের মেয়ে রৌশনী (৪০), নাজমুল হকের স্ত্রী মনীষা মনি (২৫), গাজীপুর সদর উপজেলার নয়নপুর (দিঘলা) গ্রামের আফসার উদ্দিনের ছেলে ফরহাদ (১৮), নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার লাহোড়া গ্রামের জাফর মোল্লার ছেলে তাজুল ইসলাম (২৪) ও ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার হাজারীগঞ্জ গ্রামের সোলায়মানের ছেলে আব্দুর রহমান (২০)। শ্রীপুর থানার ওসি খোন্দকার ইমাম হোসেন ও আহত ব্যবসায়ীরা জানান, ঢাকার পুরানা পল্টন এলাকার “রাখা ইন্টারন্যাশনাল”এর মার্কেটিং অফিসার হিসেবে কাজ করেন কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার নবিয়াত গ্রামের আয়াত আলীর ছেলে আবুল হোসেন রনি। গত ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি নোয়াগাঁও গ্রামের কসাইপট্টি এলাকার ইসমাইল হোসেন ও শাহাদত হোসেন নামের দুইজনকে দুবাই পাঠানো জন্য তাদের কাছ থেকে দুই লাখ ৬০হাজার টাকা নেন রনি। কিন্তু করোনাকালীন লকডাউনের কারনে ওই দু’জনকে বিদশে পাঠাতে ব্যার্থ হওয়ায় ইসমাইল ও শাহাদতের পরিবার তাদের টাকা ফেরত চান। রনি গত এপ্রিলে ইসমাইলের কিছু টাকা ফেরত দেন। অবশিষ্ট টাকা ফেরত দিতে দেরী হওয়ায় তাদের উপর ক্ষুব্ধ হয় রনি ও তার স্বজনরা। আরও লোক পাঠানোর কথা বলে আলোচনার জন্য রনিকে গাজীপুরে শ্রীপুরের নোয়াগাঁও গ্রামের রৌশনীর স্বামী মৃত আব্দুর রহমানের বাড়িতে আসতে বলেন ইসমাইল। আহত ব্যবসায়ীরা জানান, আমন্ত্রণ পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে বন্ধু মো. ফয়সাল আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে রনি শ্রীপুরে ইসমাইলের বাসায় আসেন। এসময় বাড়ির লোকজন রনি ও ফয়সালকে একটি কক্ষে আটকে রেখে মারধর করে এবং ৫লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। আটককৃতদের কাছ থেকে সাদা স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়া হয়। মুক্তিপণের টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দেয়া হলে আটককৃতরা তাদের সহকর্মী ও স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কথাবার্তার একপর্যায়ে বিষয়টি মীমামংসার জন্য রনির সহকর্মী ফয়সাল, ওমর বেপারী, মো. কালাম ও মাসুম শুক্রবার কুমিল্লা হতে শ্রীপুরে ইসমাইলের বাড়িতে আসেন। এসময় মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে তাদেরকেও আটক করে বেধড়ক মারধর করে ইসমাইল ও তার লোকজন। মারধরের একপর্যায়ে মালেক কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। তিনি সহকর্মীদের উদ্ধারের জন্য জাতীয় সেবা নাম্বার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানান। শ্রীপুর থানার ওসি খোন্দকার ইমাম হোসেন আরো জানান, খবর পেয়ে রাত ১০টার দিকে শ্রীপুর থানার এসআই মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম ঘটনাস্থলে যায়। এসময় ইসমাইল ও তার লোকজন পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে এবং পুলিশের কাছ থেকে একটি সর্টগান ও পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি ম্যাগজিন ছিনিয়ে নেয়। হামলায় এসআই রফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল খোরশেদ আলম ও আনসারের এক সদস্য আহত হন। এ খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশের তিনজন ও ৫ ব্যবসায়ীকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করে। এসময় এঘটনায় জড়িত থাকায় দুই নারীসহ ৫ জনকে আটক করা হয়। পরে আটককৃতদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গুলি ভর্তি ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে ঘটনার মূল আসামি ইমাইলকে আটক করা সম্ভব হয়নি। গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) একেএম জহিরুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে মুক্তিপণের দাবিতে আটক করে মারধর, সরকারী কাজে বাধা ও পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে শ্রীপুর থানায় পৃথক দুইটি মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনার ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
×