ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা ওয়াসায় দুই সিবিএর মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব

প্রকাশিত: ২২:১৩, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

ঢাকা ওয়াসায় দুই সিবিএর মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব

ফিরোজ মান্না ॥ ঢাকা ওয়াসায় আওয়ামী পন্থী দুই সিবিএ’র মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। যে কোন সময় দুই গ্রুপের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে অস্বীকার করে সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য দিচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত থেকে আসা নব্য আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এই গ্রুপটি জাতীয় শ্রমিক লীগের সদস্যপদ পাওয়ার জন্য বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করে যাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, শ্রমিক লীগের উচ্চ পর্যায়ের এক নেতাকে জামায়াত থেকে আসা এক নেতা ৩৫ লাখ টাকা দামের একটি প্রাইভেট কার উপহার দিয়েছেন। দুই গ্রুপের একই রেজিস্ট্রেশন নম্বর। আসলে রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি কার তা কোন গ্রুপই প্রমাণ দিতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, ওয়াসায় শ্রমিক লীগের একটি অংশে বিভিন্ন দল থেকে আসা লোকজনের সংখ্যাই বেশি। কারও কারও পূর্ব পুরুষ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান ছিল। কেউ বন্দুকধারী রাজাকার আল-সামস বাহিনীর সদস্যও ছিলেন। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় ভোল পাল্টিয়ে এখন তারা আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে। শ্রমিক লীগের বড় বড় নেতার সঙ্গে তারা সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। এমন ঘটনাও রয়েছে শ্রমিক লীগের একজন নেতাকে ওয়াসা সিবিএ’র এক অংশের নেতা একটি প্রাইভেটকার উপহার দিয়েছে। যারা আওয়ামী পরিবারের সন্তান ওয়াসার সিবিএ করছেন তাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারও চালিয়ে যাচ্ছেন। যাতে তারা ওয়াসার বর্তমান প্রশাসনের কাছে খারাপ হিসেবে চিহ্নিত হন। বিএনপি-জামায়াত থেকে আসা গ্রুপটি অতি আওয়ামী লীগ হয়ে হরিলুটের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বর্তমান প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তার সহযোগিতায়। ঢাকা ওয়াসা শ্রমিক ইউনিয়ন (সিবিএ) সভাপতি মোঃ আনিসুজ্জামান শাহীন ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনোয়ার হোসেন খান জনকণ্ঠকে বলেন, তারাই প্রকৃত সিবিএ। তাদের নামেই রেজিস্ট্রেশন নম্বর ২৫২২। তারাই একমাত্র জাতীয় শ্রমিক লীগের অন্তর্ভুক্ত সংগঠন। আর যারা সিবিএ হিসেবে নিজেদের দাবি করছেন তারা বিএনপি-জামায়াত থেকে আসা লোকজন। তাদের অনেকের নাম ঠিকানা খুঁজে দেখলে বুঝতে পারবেন। জীবনে তাদের পূর্ব পুরুষ আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় রাতারাতি তারা আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে। ওই গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করা মোঃ আশকার ইবনে শায়েখ খাজা নিজেই জামায়াতপন্থী লোক। হঠাৎ করে তিনি ভোল পাল্টিয়ে শ্রমিক লীগের নেতা দাবি করছেন। ওই গ্রুপের আরও একাধিক কর্মকর্তার পিতা বন্দুকধারী রাজাকার ছিলেন। এখন তারা শ্রমিক লীগের রাজনীতিতে যোগ দিয়েছে। শ্রমিক লীগের একজন নেতাকে গাড়ি উপহার দিয়ে জাতীয় শ্রমিক লীগের সদস্য হওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমন অভিযোগ ওই গ্রুপের অনেকেই করেছেন। ওই প্রুপের সভাপতি মোঃ আজিজ অবসরে চলে গেছেন। তিনি কিভাবে সিবিএ’র সভাপতি হন। তার তো ওয়াসা ভবনে আসার কথা না। আমাদের তারা সিবিএ’র সভাপতি সম্পাদক তো দূরের কথা সদস্যই না বলে উল্লেখ করেছেন। আসলে ওই সিবিএ’র কোন সদস্য না। খাজার নেতেৃত্বে বেশ কয়েক বছর আগে বঙ্গবন্ধুর পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। তারা এখন শ্রমিক লীগের বড় নেতা সেজে গেছে। অন্যদিকে ঢাকা ওয়সার শ্রমিক ইউনিয়ন (সিবিএ) আরও একটি গ্রুপ রয়েছে। এই গ্রুপের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত মোঃ আজিজ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ আশকার ইবনে শায়েখ খাজা। খাজা জনকণ্ঠকে বলেন, মোঃ আনিসুজ্জামান শাহীন ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনোয়ার হোসেন খান সভাপতি সম্পাদক তো দূরের কথা তারা সাধারণ সদস্যও না। আমাদের রেজিঃ নং ২৫২২। দুই সিবিএ’র একই রেজিস্ট্রেশন নম্বর কিভাবে হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই রেজিস্ট্রেশন নম্বর তাদের। অন্য কোন কারও এই নম্বর না। তিনি জামায়াত থেকে আসা শ্রমিক লীগের সদস্য কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনি ওয়াসা ভবনে আসেন। ৫ শ’ মানুষ সাক্ষী দেবে আমি জামায়াত থেকে আসা না আওয়ামী লীগ থেকে আসা। আমি অনেক আগে থেকেই জাতীয় শ্রমিক লীগের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। তার রিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগের কথা বলতেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এই গ্রুপের সিবিএ নেতা গোলাপ জনকণ্ঠকে জানান, আমরা প্রয়াত হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে ওয়াসায় সিবিএ করে এসেছি। হাফিজ সাহেব ছিলেন ঢাকায় ওয়াসায় একমাত্র নেতা যিনি জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ছিলেন। আমাদের গ্রুপে কোন জামায়াত-বিএনপির লোকজন নেই। আমরাই আসল সিবিএ। আর যারা দাবি করছেন তারাই আসল সিবিএ তারা কোনদিন সিবিএ’র সঙ্গে জড়িতই ছিলেন না। পাল্টা একটি কমিটি করে সিবিএ হিসেবে একটা বিবাদ তৈরি করছেন। এই গ্রুপের জাকির হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা পরীক্ষিত সিবিএ। আমাদের নেতা হাফিজ সাহেব মারা গেছেন। কিন্তু আমরা তার আদর্শের রাজনীতিই করে যাচ্ছি। এখানে অন্য কোন সিবিএ নেই। এদিকে ঢাকা ওয়াসায় বিএনপিপন্থী আরও একটি সিবিএ গ্রুপ রয়েছে। এই গ্রুপের সভাপতি ছিলেন মিজানুর রহমান।
×