ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে চান

প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছেন খালেদা

প্রকাশিত: ২২:০৭, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছেন খালেদা

শরীফুল ইসলাম ॥ অবশেষে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তার একগুঁয়ে মনোভাব পরিবর্তন করে সরকারের সঙ্গে আপোস করেই চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান। এ জন্য শীঘ্রই তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করবেন বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে গুঞ্জন। তবে আবেদন মঞ্জুর করার আগে বিদেশে গিয়েও রাজনীতি করবেন না এবং বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে বিভিন্ন মহলে এমন আশ্বাস দিতে হবে। এমনকি আদালতে শাস্তি পাওয়া খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে দলের পদ ছাড়ার শর্তও আসতে পারে। তবে তার এভাবে বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে দলের একটি অংশ নারাজ। এদিকে খালেদা জিয়া কবে যাবেন সেজন্য লন্ডনে অপেক্ষা করছেন স্বজনরা। সূত্র মতে, স্বজনরা দীর্ঘদিন ধরেই খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি দেশের বাইরে যেতে রাজি হচ্ছিলেন না। দেশে করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর ২৫ মার্চ স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার নির্বাহী আদেশে তাকে ৬ মাসের জন্য মুক্তি দেয়ার পর গুলশানের বাসায় অবস্থান করছেন। এ সময় স্বজনরা ঘন ঘন বাসায় গিয়ে তার চিকিৎসাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। এক পর্যায়ে তারা খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার প্রস্তাব দেন। স্বজনদের এ প্রস্তাবে খালেদা জিয়া প্রথমে নারাজ থাকলেও এক পর্যায়ে তিনি সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ বিষয়ে নমনীয় হন। ততদিনে খালেদা জিয়ার ৬ মাসের মুক্তির মেয়াদ প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে আসে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বিদেশে গিয়ে চিকিৎসার বিষয়ে নমনীয় হওয়ার পর তার স্বজনরা আবারও মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে। এক পর্যায়ে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করে। এরই মধ্যে স্বজনরা খালেদা জিয়াকে রাজি করাতে সক্ষম হন মুক্তির মেয়াদ বাড়লে তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাবেন। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ দ্বিতীয় দফায় বাড়ানোর কথা জানানো হয়। কিন্তু প্রথম দফার মতো দ্বিতীয় দফায়ও বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং বিদেশে যাওয়া যাবে না- এই দুই শর্তে তার সাজার মেয়াদ ৬ মাসের জন্য স্থগিত রেখে এই ৬ মাসের জন্য মুক্তি দেয়া হয়। স্বজনরা মনে করেছিলেন, খালেদা জিয়াকে দ্বিতীয় দফায় কমপক্ষে এক বছরের জন্য মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হবে। তবে স্বজনরা বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যেতে হলে নিজের স্বাক্ষর করা একটি আবেদন করতে হবে প্রধানমন্ত্রী বরাবর। প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিলে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া সম্ভব। এ বিষয়টি খালেদা জিয়াকে জানানোর পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করতে রাজি হন। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কাছে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য সুযোগ চেয়ে আবেদনের বিষয়ে বিভিন্ন মহলের কাছে খোঁজখবর নেন তার স্বজনরা। তখন তাদের বিভিন্ন মহল থেকে জানানো হয় কিছু বিষয়ে সরকারের সঙ্গে খালেদা জিয়াকে আপোস করতে হবে। এদিকে লন্ডন থেকে খালেদা জিয়ার স্বজনরাও তাকে যে কোনভাবে হোক চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নিতে বলা হয়। এ পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াও সরকারের সঙ্গে আপোস করে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে সম্মতি প্রকাশ করেন। চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়ার সুযোগ নিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খালেদা জিয়া আবেদনের বিষয়ে ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে আবেদন করলেই বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পাবেন এমন আশ্বাস এখনও পাননি। আশ্বাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করবেন বলে জানা গেছে। আর এ বিষয়ে তার স্বজনরাই দৌড়ঝাঁপ করে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করার পাশাপাশি খালেদা জিয়াকে বিভিন্ন মহলকে আশ্বস্ত করতে হবে তিনি বিদেশে গিয়েও রাজনীতি করবেন না এবং বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করবে। এছাড়া আদালতে শাস্তি পাওয়া খালেদা জিয়া ও তার লন্ডন প্রবাসী ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দলের পদ ছাড়ার শর্তও আসতে পারে। তাই এভাবে কঠোর শর্ত মেনে খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে দলের একটি অংশ নারাজ। যদিও দলের বড় অংশটির খালেদা জিয়ার যে কোনভাবে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার বিষয়ে কোন আপত্তি নেই। জানা যায়, খালেদা জিয়া বিদেশে গিয়ে চিকিৎসার বিষয়ে সম্মত হওয়ার পর থেকেই লন্ডনে তার ছেলে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডাঃ জোবায়দা রহমান যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। কোথায় চিকিৎসা নেবেন এবং বাসায় তার আরামে থাকার জন্য কি কি দরকার সে ব্যবস্থাও করে রাখা হচ্ছে। খালেদা জিয়া কবে যাবেন সেজন্য লন্ডনে অন্য স্বজনরাও অপেক্ষা করছেন। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। তাই সরকারের উচিত তাকে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ করে দেয়া। তিনি যেন বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারেন সে সুযোগ তিনি পেতে চান। তাই সরকার খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেবেন বলে আমরা আশাবাদী। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আশা করছি সরকার খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেবেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ার পর করোনা পরিস্থিতির কারণে উন্নত চিকিৎসা নিতে পারেননি। তিনি এখন গুরুতর অসুস্থ। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেয়া প্রয়োজন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, সরকার ইচ্ছে করলে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিতে পারেন। আশা করছি গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য সরকার বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিতে তার স্বজনরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন। দলের নেতাকর্মীরাও মনে করছেন সরকার খালেদা জিয়াকে মানবিক কারণে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেবেন। এ জন্য প্রয়োজনে খালেদা জিয়ার স্বজনরা সরকারের কাছে আবেদন করবেন। সূত্র মতে, প্রথম দফায় খালেদা জিয়ার মুক্তির সময় তার স্বজনরা যেভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন প্রয়োজনে আবারও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খালেদা জিয়ার লেখা আবেদন পৌঁছে দেবেন। এ ছাড়া দ্বিতীয় দফায় ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে আরও ৬ মাসের জন্য মুক্তি দেয়ায় খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হবে। তবে এ বিষয়ে স্পষ্ট করে বিএনপির কোন নেতা বা খালেদা জিয়ার স্বজনরা এখনও কিছু বলছেন না। আগাম কিছু বললে কোথাও কোন সমস্যা সৃষ্টি হয় কিনা এমন ভাবনা থেকেই তারা এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সরাসরি আবেদন করলে অসুস্থতা ও মানবিক বিবেচনায় তাকে বিদেশ যেতে দিতে সরকারের হাইকমান্ডের মনোভাব ইতিবাচক। খালেদা জিয়ার স্বজনরা নিয়মিত যোগাযোগ রেখে এমন আশ্বাস পেয়েছেন। তবে এখনই তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে নারাজ। সূত্র মতে, চিকিৎসার জন্য লন্ডন যেতে হলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খালেদা জিয়ার আবেদন করা ছাড়াও কিছু শর্ত মানতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা না দিলেও লন্ডনে রাজনৈতিক কোন বক্তব্য রাখবেন না। এমনকি চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া তিনি কোথাও যেতে পারবেন না। রাজনীতি ও দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা সাক্ষাত করা থেকে বিরত থেকে তিনি যেভাবে ২৫ মার্চ থেকে গুলশানের বাসা ফিরোজায় অবস্থান করছেন, লন্ডনে ছেলের বাসায় থেকেও সেভাবেই অবস্থান করবেন। এমনকি বিদেশে অবস্থানকালে দেশের বা বিদেশের কোন লোকের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন না। এমনকি বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গেও কোন মতবিনিময় করবেন না। দ্বিতীয় মেয়াদে খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে ২৫ আগস্ট তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ দ্বিতীয় দফায় আরও ৬ মাস বাড়ানোর কথা জানানো হয়। তবে মুক্তির মেয়াদ আবার বাড়লেও তেমন খুশি হতে পারেননি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। কারণ তিনি আশা করেছিলেন মুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির পাশাপাশি তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হবে। কিন্তু মুক্তির শর্তে সে সুযোগ না থাকায় তিনি হতাশ হন। তবে স্বজনদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়ার বিষয়ে সম্মত হন। যদিও এক সময় তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে না যাওয়ার জন্য অনড় অবস্থানে ছিলেন। পরে স্বজনদের চেষ্টায় ও শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে লন্ডনে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার পাশাপাশি ছেলের বাসায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভালভাবে সময় কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন। এ জন্য তিনি মানসিকভাবেও প্রস্তুতি নেন। সরকারের অনুমতি নিয়েই খালেদা জিয়া লন্ডনে চিকিৎসার জন্য যেতে পারবেন ধরে নিয়ে সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন ছেলে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডাঃ জোবায়দা রহমান। নাতনি জায়মা রহমানও দাদির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। এছাড়া বর্তমানে লন্ডনে থাকা খালেদা জিয়ার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান এবং তার দুই মেয়ে জাসিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানও দাদির জন্য প্রহর গুনছে। বিভিন্ন মাধ্যমে তারা নিয়মিত খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের অপেক্ষার প্রহর গুনার কথা বলছেন। সম্প্রতি খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ ৬ মাস বাড়ানোর কথা জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও খালেদা জিয়ার স্বজনদের আবেদনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর কথা জানান। আইনমন্ত্রী বলেন, নির্বাহী আদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে ফৌজদারি কার্যবিধির ক্ষমতাবলে এর আগে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ৬ মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছেন। আগের শর্তের ভিত্তিতে তার দন্ডাদেশ ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে আরও ৬ মাস স্থগিত রেখে মুক্তির আদেশ দেয়া হয়েছে। শর্ত হচ্ছে তিনি আগে যে শর্তে মুক্তি পেয়েছিলেন অর্থাৎ বাসা ও দেশে থেকে চিকিৎসা নেবেন। করোনা পরিস্থিতির পুরোপুরি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে যেন ফের কারাগারে যেতে না হয় সে জন্য স্বজনদের চেষ্টা ছিল বিরামহীন। সেই সঙ্গে মুক্তির মেয়াদ ফের বৃদ্ধির পর তিনি যেন চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারেন সে চেষ্টাও অব্যাহত রেখেছিলেন তারা। কিন্তু মুক্তির মেয়াদ বাড়লেও বিদেশে যেতে না পারার শর্ত থাকায় খালেদা জিয়া হতাশ হন। তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা মনে করেন, সরকার ইচ্ছে করলে যে কোন সময় অসুস্থ খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন হলে তার পক্ষ থেকে আবারও একটি আবেদন করবেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজা নিয়ে কারাবাস শুরু করেন। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও তার সাজা হয়। তার বিরুদ্ধে আরও ৩৪ মামলা রয়েছে। ৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া এখন আর্থারাইটিসের ব্যথা, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন। কারাবন্দী হওয়ার পর থেকেই অসুস্থ খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা দাবি করতে থাকে বিএনপি। এক পর্যায়ে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসারও দাবি করে দলটি। গত বছর ১ এপ্রিল পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগার থেকে খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলের কেবিনে নেয়া হয়। সেখানে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু তারপরও খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে তাকে মুক্তির দাবি জানানো হয়। ৮ মার্চ দেশে হানা দেয় করোনাভাইরাস। পরে তা ক্রমেই অবনতির দিকে যেতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে বয়স ও মানবিক বিবেচনায় মুক্তি দিতে সরকারের কাছে আবেদন করে খালেদা জিয়ার স্বজনরা। খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার, বোন সেলিমা ইসলাম ও তার স্বামী রফিকুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। এর পর ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে মুক্তি দেয়া হয় খালেদা জিয়াকে। তার মুক্তির ২ শর্ত ছিল বাসায় অবস্থান করে চিকিৎসা নিতে হবে এবং বিদেশে যাওয়া যাবে না। মুক্তির এই ২ শর্ত মেনে এখনও গুলশানের বাসা ফিরোজায় অবস্থান করছেন খালেদা জিয়া। করোনা পরিস্থিতির কারণে কারণে তাকে সুচিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয়নি বলে স্বজনরা জানিয়েছেন। মুক্তি পেয়ে ২৫ মার্চ বিকেলে বাসায় অবস্থান নেয়ার পর এখনও এক মুহূর্তের জন্যও খালেদা জিয়া বাসার বাইরে যাননি। রাজনীতি থেকেও রয়েছেন বিরত। ঘনিষ্ঠ কজন আত্মীয়স্বজন, চিকিৎসক ও দলের ক’জন নেতা ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে তিনি দেখাই দেননি। এমনকি বিদেশে কিংবা ঢাকার কোন হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসার চেষ্টাও করেননি। ব্যাক্তিগত চিকিৎসকদের পরামর্শে ও লন্ডন প্রবাসী ছেলের বউ ডাঃ জোবায়দা রহমানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাসায় থেকেই তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাকে চিকিৎসা সহায়তা দিতে বাসায় সার্বক্ষণিকভাবে রয়েছেন একজন নার্স। বাসায় বিভিন্ন যন্ত্রপাতির মাধ্যমে এই নার্সই খালেদা জিয়ার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। শরীরিক অসুস্থতা ও মামলাজনিত কারণে আপাতত রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া জিয়া। সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেই তিনি এ কৌশল নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। দীর্ঘ সোয়া ২ বছর পর ২৫ মার্চ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়ে সরাসরি গুলশানের বাসা ফিরোজায় অবস্থান নেন। পরদিন ২৬ মার্চ থেকে তিনি নিজ বাসার দ্বিতীয় তলায় স্বেচ্ছায় হোমকোয়ারেন্টাইন শুরু হরেন। প্রায় দেড়মাস তিনি হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। এরপরও তার বাসায় স্বজনদের ছাড়া সচরাচর কাউকে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না খালেদা জিয়ার নির্দেশেই। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সেজ বোন সেলিমা ইসলাম সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, ২৫ মার্চ মুক্তির পর তিনি এখন পর্যন্ত সরকারের দেয়া কোন শর্ত ভঙ্গ করেননি। আশা করছি খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে সরকার সুযোগ করে দেবে। কারণ, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। তিনি এখন হাঁটা-চলা করতে পারছেন না। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেয়া প্রয়োজন।
×