ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আছি বলেই সুফল পাচ্ছে জনগণ

প্রকাশিত: ২২:০১, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আছি বলেই সুফল পাচ্ছে জনগণ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি ‘মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ’ মোকাবেলা করে তার সরকারের ওপর দেশের জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের কথা তুলে ধরে বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যে ঘাতকরা জাতির পিতাকে হত্যা করেছিল, তার দোসর যারা, তারা এদেশে কোন স্থিতিশীল সরকার থাকুক তা কখনই চায়নি। সেজন্য মাঝে মাঝেই চেষ্টা করে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করে দীর্ঘসময় একটু ক্ষমতায় থাকতে পেরেছি বলেই উন্নয়নগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে এবং উন্নয়নগুলো করতে পারছি, যার সুফল জনগণ ভোগ করছে। রাজনৈতিক নয়, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য জোরদারে অর্থনৈতিক কূটনীতির ওপর জোর দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বিশ্বে কূটনৈতিক মিশনের দায়িত্বও অনেক বদলে গেছে। এখন শুধু রাজনৈতিক কূটনীতি না, দরকার হয় অর্থনৈতিক কূটনীতি। ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার ঘটানো, সকলের সঙ্গে মিশে কীভাবে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জন করা যায়, উন্নয়ন করা যায়, একে অপরকে কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, একে অপরের সহযোগিতার মধ্য দিয়ে বিশ্বে শান্তি কীভাবে নিয়ে আসা যায়- সেভাবেই আমাদের ডিপ্লোমেসি এখন চালাতে হবে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধুর বাংলা ভাষণের ৪৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা এবং ফরেন সার্ভিস একাডেমির নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দেশে যেন দুর্ভিক্ষের প্রভাব না পড়ে, সে জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ভেবেছি, করোনাভাইরাসের কারণে হয়তো বিশ্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। তাই সতর্ক ছিলাম বাংলাদেশে যেন কোনভাবেই সেই দুর্ভিক্ষের প্রভাব না পড়ে। যতটুকু পারি খাদ্য উৎপাদন করা, খাদ্য বিতরণ করা, দরিদ্র মানুষকে বিনা পয়সায় খাদ্য দেয়া এবং খাদ্যের নিশ্চয়তা দেয়া- সেই প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। সারাবিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে বাংলাদেশ সব সময় প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় পুরো বিশ্বকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সব সময় চায় সারাবিশ্বে একটা শান্তি বজায় থাকুক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেখানে নানা ধরনের কনফ্লিক্ট আছে, সেখানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, প্রত্যেকে সেখানে বিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করতে গিয়ে জীবন দেয়া বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তিনি বলেন, এই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ সব সময় প্রস্তুত। আমরা চাই সারাবিশ্বে শান্তি থাকুক। করোনাভাইরাস মহামারী থেকে বিশ্বের মানুষের মুক্তি কামনা করে সরকারপ্রধান বলেন, আবারও অর্থনীতির চাকা সচল হোক, সকল মানুষ সুন্দরভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারুক, সেটাই আমরা চাই। সেজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সারাবিশ্বকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। দেশের উন্নয়ন ও মানুষের সুন্দর জীবন নিশ্চিতে সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সব থেকে গুরুত্ব দিয়েছি আমাদের খাদ্যের ওপর। কারণ আমি জানি, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বে হয়তো দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে যেন কোনমতে সেই দুর্ভিক্ষের ছোঁয়া না লাগে। তাই আমরা যতটুকু পারি খাদ্য উৎপাদন করা, খাদ্য বিতরণ করা, দরিদ্র মানুষকে বিনা পয়সায় খাদ্য দেয়া এবং খাদ্য নিশ্চয়তা দেয়ার চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। করোনাভাইরাসের কারণে স্থবির হওয়া অর্থনীতির চাকা সচল এবং দেশের মানুষকে রক্ষায় তার সরকারের দেয়া ৩১ দফা দিক-নির্দেশনার কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি, পুষ্টির নিশ্চয়তার ব্যবস্থা করেছি। বৈশ্বিক মহামারী করোনা মোকাবেলার জন্য আমরা প্রায় ৩১টি দিকনির্দেশনা দিয়েছি। পাশাপাশি আমরা বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছিলাম অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। আমরা যে প্রণোদনা দিয়েছি সেটি আমাদের জিডিপির প্রায় চার শতাংশের কাছাকাছি। যার ফলে আমাদের কৃষক, আমাদের শ্রমিক, আমাদের ছাত্র-শিক্ষক, ব্যবসায়ী হতে শুরু করে সকলেই এই প্রণোদনা থেকে সুবিধা গ্রহণ করেছে। সেইসঙ্গে একেবারে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমরা খাদ্য পৌঁছে দেয়ার মতো কাজ করে যাচ্ছি এবং একই সঙ্গে আমরা খাদ্যের মজুদের ওপর জোর দিয়েছি। দেশের অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সীমিত আকারে অব্যাহত রাখার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের জিডিপি যেটা টার্গেট ছিল যে ৮ দশমিক ২ শতাংশের ওপরে যাব, সেটা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। আমরা এবার ৫ দশমিক ২৪ শতাংশের মতো অর্জন করতে পেরেছি। কিন্তু আমরা আশা করি আগামীতে আমাদের প্রবৃদ্ধি আমরা আরও বেশি অর্জন করতে সক্ষম হব। আর সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। মুজিববর্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার সঙ্কল্পের কথা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, প্রায় ৪০ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠী ছিল, এই দারিদ্র্যের হার আমরা কমিয়ে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে এনেছি। আমরা আরও কমাতে চাই। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষকে একটা সুন্দর জীবন আমরা উপহার দিতে চাই। আর সেজন্য বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, এই বিশ্বে কেউ একা চলতে পারে না। তাই সকলের সহযোগিতা আমাদের কাম্য। পাশাপাশি কাউকে কোন ধরনের সহযোগিতা যদি করতে হয়, আমরা সেটা করতেও প্রস্তুত। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে স্বাধীন দেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলায় ভাষণের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সেই ভাষণে জাতির পিতা বলেছিলেন- ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়।’ এখনও সেটাই যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল চালিকা শক্তি সে কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আরও বলেন, জাতিসংঘে দেয়া প্রথম বাংলায় জাতির পিতা তার ভাষণে এদেশের দুঃখী মানুষের কথা বলেছিলেন, এদেশের সার্বিক উন্নয়নের কথাই বলেছিলেন। সেই সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বব্যাপী বঞ্চিত মানুষের কথা তিনি বরেছেন। আমরা সেটা বিশ্বাস করি। তাই আমাদের উন্নয়নের মূল লক্ষ্যটাই হচ্ছে তৃণমূলের মানুষ। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এবার জাতিসংঘ অধিবেশনে সরাসরি যোগ দিতে না পারার ‘দুঃখের’ কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এ সময় সাধারণত জাতিসংঘের অধিবেশনে থাকার কথা কিন্তু এবার যেতে পারিনি কারোনার কারণে। এটা সত্যি আমাদের জন্য খুব দুঃখজনক। বিশেষ করে আমার জন্য বেশি। আমি ১৬ বার জাতিসংঘে গিয়ে ভাষণ দিয়েছি এবং আমার ১৭তম ভাষণ দিতে আমি যেতে পারছি না। এটা সত্যিই খুব দুঃখের। কারণ সেখানে বিশ্বের সব দেশের নেতাদের সঙ্গে দেখা হওয়ার একটা সুন্দর সুযোগ হয়, মতবিনিময় করার সুযোগ হয়, একে অপরের অভিজ্ঞতা আমরা শেয়ার করতে পারি। সেই সুযোগটা করোনাভাইরাসের কারণে হলো না। তবুও আমরা আশা করি এই মহাদুর্যোগ থেকে বিশ্ববাসী রক্ষা পাবে। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজকের বিশ্বে কূটনৈতিক মিশনের দায়িত্বও অনেক বদলে গেছে। এখন শুধু রাজনৈতিক কূটনীতি না, দরকার হয় অর্থনৈতিক কূটনীতি। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো, সকলে মিশে কীভাবে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জন করা যায়, দেশের উন্নয়ন করা যায়- সেইভাবেই আমাদের ডিপ্লোমেসি এখন চালাতে হবে। বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি ‘মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের’ মোকাবেলা করতে হয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে ঘাতকরা জাতির পিতাকে হত্যা করেছিল তাদের দোসর যারা, তারা এদেশে কোন স্থিতিশীল সরকার থাকুক তারা কখনই চায়নি। সে জন্য মাঝে মাঝেই চেষ্টা করে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে। এই অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা যখন চালায়, তখন আমরা দেখি অগ্নিসংযোগ করে জীবন্ত মানুষকে হত্যা করা অথবা মানুষকে খুন করা। নানা ধরনের ঘটনা ঘটানোর। আমাদের সব অবস্থারই মোকাবেলা করতে হয়। আওয়ামী লীগ তা মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে বলেই জনগণের ‘আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছে মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জনগণ বারবার আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে বলেই আমরা সরকার গঠন করে তাদের সেবা করতে পেরেছি। আর দীর্ঘসময় একটু ক্ষমতায় থাকতে পেরেছি বলেই উন্নয়নগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে এবং উন্নয়নগুলো করতে পারছি, যার সুফল দেশের জনগণ ভোগ করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে লক্ষ্য নিয়ে জাতির পিতা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন, এখন আমাদের কাজ হচ্ছে জাতির পিতার সেই লক্ষ্য অর্জন করা। জাতির পিতা ক্ষমতায় হাতে সময় পেয়েছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। বাঙালী জাতিকে নিয়ে তার একটি স্বপ্ন ছিল। একটা আকাক্সক্ষা ছিল। এ বাংলাদেশের মানুষ ছিল শোষিত-বঞ্চিত, নিপীড়িত-নির্যাতিত। তাদের বাসস্থান ছিল না, খাবার ছিল না, চিকিৎসা ছিল না। শিক্ষার মতো জ্ঞান অর্জনের সুযোগ ছিল না। সম্পূর্ণ সুযোগ বঞ্চিত ছিল একটা জাতি। সেই জাতিকেই বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, আত্মমর্যাদায় নিজেদের গড়ে তোলার সুযোগ। বঞ্চিত মানুষদের বঞ্চনা থেকে মুক্তি দেয়ার জন্যই তিনি স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরে জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে যেভাবে গড়ে তুলেছিলেন, আমরা যদি সে সমস্ত ঘটনাবলী দেখি এবং তাঁর গৃহীত পদক্ষেপগুলো পর্যালোচনা করি- আমাদের সত্যিই বিস্মিত হতে হয় যে, এত স্বল্প সময়ে তিনি এত কাজ কীভাবে করে গেলেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্য প্রাপ্তিটা তার (বঙ্গবন্ধু) একটি ডিপ্লোমেসি। তার একটি সাফল্যে অর্জন। তার এ অর্জনে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হলো যখন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেলেন, এ মাটিতে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। ১৫ আগস্ট শুধু যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে তা নয়। আমাদের পরিবারের সকল সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। আমাদের দশ বছরের ছোট ভাইটিকেও (শেখ রাসেল) তারা ছাড়েনি। শুধু আমরা দুটি বোন আমি ও রেহানা আমরা বিদেশে ছিলাম। যে কারণে নির্মম হত্যাকা- থেকে আমরা বেঁচে গিয়েছিলাম। এই কারণে রিফিউজি হিসেবে আমাদের থাকতে হয়েছিল ৬ বছর বিদেশের মাটিতে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখন আমার অবর্তমানে আমাকে দলের সভাপতি করল, তখন আমি দেশে ফিরে এসেছি। ফিরে এসে আমার একটাই লক্ষ্য ছিল, যে কাজ আমার বাবা করতে চেয়েছিলেন তার সেসব কাজ পূরণ করা। অর্থাৎ বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা। ২১ বছর পর সুযোগ পেল আওয়ামী লীগ জনগণের স্বপ্ন পূরণের। কারণ পঁচাত্তরের পর দেশে কার্যত গণতন্ত্র ছিল না, মুখে গণতন্ত্র ছিল। কিন্তু কাক্সিক্ষত কোন গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না। এই জাতি যে শোষিত-বঞ্চিত, সেই শোষিত-বঞ্চিত থেকে গিয়েছিল। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে তার অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এখন লক্ষ্য জাতির পিতা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ, আমরা সেটি বাস্তবায়ন করব। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষকে আমরা একটি সুন্দর জীবন উপহার দিতে চাই। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রতিটি মানুষকে, যারা গৃহহীন তাদের গৃহ নির্মাণ করে দেব। যারা ভূমিহীন, তাদের ভূমির ব্যবস্থা করে দেব। মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না। মুজিববর্ষে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই। আগে ৪০ শতাংশ দারিদ্র্য ছিল। সেই হার আমরা ২০ শতাংশে এনেছি, আমরা আরও কমাতে চাই। সুগন্ধা চত্বরে ফরেন সার্ভিস একাডেমি প্রান্তে অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টর সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ খন্দকার নবনির্মিত ভবন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম বাংলায় ভাষণ এবং সুগন্ধায় বঙ্গবন্ধুর প্রথম কার্যালয়ের দুটি অডিও-ভিজুয়াল প্রেজেন্টেশন প্রদর্শিত হয়। এতে বাংলাদেশ সরকারের প্রথম দিকের চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ফরেন সার্ভিস ভবন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা এ্যান্ড দ্য ইউনাইটেড ন্যাশনস : বাংলা এ্যাট দ্য ওয়ার্ল্ড স্টেজ’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু, দ্য পিপলস হিরো’- এই দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে কূটনৈতিক কোরের প্রধানসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা যোগ দেন। অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×