ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এক শারীরিক প্রতিবন্ধী টিটি খেলোয়াড়ের স্বপ্ন ...

প্রকাশিত: ১৯:৫১, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

এক শারীরিক প্রতিবন্ধী টিটি খেলোয়াড়ের স্বপ্ন ...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া সৌমিক নড়াইলের ক্রীড়ামোদীদের কাছে বেশ পরিচিত। গত দুই বছরে সে বিভিন্ন টিটি টুর্নামেন্ট খেলে এ পর্যন্ত ৬টিতে চ্যাম্পিয়ন, ৩টিতে রানারআপ এবং ১টিতে তৃতীয় স্থান অধিকার করে লাভ করেছে অসংখ্য পুরস্কার। সর্বশেষ সে রানারআপ হয়েছে গত ২১-২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নড়াইলে অনুষ্ঠিত ‘মোস্তাক স্মৃতি টিটি টুর্নামেন্ট’-এর প্রথম আসরে। অ-১৪ জুনিয়র বিভাগে সে ফাইনালে প্রতিপক্ষের কাছে হেরে গেলেও তার আক্রমণাত্নক এবং চিত্তাকর্ষক খেলা সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে। শুনলে অবাক হবেন, সৌমিক একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী! অথচ তার সঙ্গেই কুলিয়ে উঠতে পারে না শারীরিকভাবে সুস্থরা! ঠিকাদারী ব্যবসায়ী বাবা তুষার মণ্ডল টিটু এবং গৃহিণী মা রূপা মণ্ডলের প্রথম সন্তান ছিল কন্যা। এরপর তাদের আশা ছিল একটি পূত্র সন্তানের। যখন তাদের একটি ছেলে হলো, তখন এই খবর পেয়ে তারা স্বাভাবিকভাবেই আনন্দিত হয়েছিলেন। কিন্তু পরমুহূর্তেই গভীর বিষাদে ছেয়ে যায় তাদের মন। অদৃষ্টের কি নির্মম পরিহাস, জন্ম থেকেই তাদের ফুটফুটে শিশু ছেলের বাম হাতে সমস্যা। কনুইয়ের একটু নিচ থেকে এবং কবজির একটু ওপর থেকে তার হাত নেই! শারীরিক প্রতিবন্ধী এই ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে যারপরনাই উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন তারা। কিন্তু এখন তারা সেই ছেলেকে নিয়ে রীতিমতো গর্ব করেন। কারণ তাদের ছেলে হাতের এই সমস্যা নিয়েও দুর্দান্ত টেবিল টেনিস (টিটি) খেলে। টিটি খেলোয়াড়দের উর্ববরভূমি বলা হয় নড়াইলকে। আর সেই নড়াইলেই আজ থেকে ১৩ বছর আগে জন্ম নেয়া সেই টিটি খেলোয়াড়টির নাম সৌমিক মণ্ডল। জনকন্ঠকে সৌমিক জানায়, ‘টিটি খেলে আমি অনেক বড় খেলোয়াড় হতে চাই। জাতীয় পর্যায়ে খেলার স্বপ্ন দেখি।’ ১১ বছর বয়সে প্রতিবেশী বন্ধুদের টিটি খেলতে দেখে খেলাটির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে সৌমিক। তারপর নড়াইল টিটি ক্লাবে যাতায়াত শুরু। ওখানেই জাহিদ সুলতান বিপ্লব এবং মোহাম্মদ ইসমাইলের কাছে টিটিতে হাতেঘড়ি। খুব দ্রুতই শিখে ফেলে সব কলাকৌশল। এর আগে শখের বসে ক্রিকেট খেলতো সৌমিক। কয়েকমাস আগে নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থা টিটি টুর্নামেন্টে খেলে বালক এককে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সৌমিক। প্রধান অতিথি হিসেবে সৌমিককে পুরস্কৃত করেছিলেন মোহাম্মদ আলী, যিনি বাংলাদেশ জাতীয় টিটি দলের কোচ এবং সোনাম সুলতানা সোমার স্বামী। তিনি সৌমিকের খেলা দেখে এতটাই মুগ্ধ হন, তাকে প্রস্তাব দেন ঢাকায় এসে প্রথম বিভাগ টিটি লিগে তার গঠিত নতুন ক্লাবের হয়ে খেলতে। সৌমিক ও তার পরিবার রাজিও হয়েছিল। কিন্তু করোনার কারণে দেশের সব খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেলে সৌমিকের লিগে খেলার স্বপ্ন থমকে যায়। তবে আলী বলেন, ‘আমি আশাবাদী, তাকে অবশ্যই লিগে খেলাতে। সৌমিক প্রমিজিং প্লেয়ার। তার খেলা আমার অনেক ভাল লেগেছে। তার হাতে সব ধরনের শটস আছে। তার ভবিষ্যত উজ্জ্বল। ঠিকমতো প্রশিক্ষণ পেলে তার প্যারা অলিম্পিকেও খেলার যোগ্যতা আছে।’ আবুধাবী স্পেশাল অলিম্পিক গেমসের টিটিতে জোড়া স্বর্ণপদকজয়ী খেলোয়াড় সাজ্জাদ হোসেন মোস্তাক দীর্ঘদিন কিডনি রোগে ভুগে ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইন্তেকাল করেন। তারই বোন হচ্ছেন মহিলা টিটিতে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন সোনাম সুলতানা সোমা। পৃষ্ঠাপোষক হিসেবে তিনি মোস্তাকের নামে নড়াইলে এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করেন। আর সেখানেই খেলে সবার দৃষ্টি কাড়ে সৌমিক। সৌমিকের বাবা জনকণ্ঠকে জানান, ‘আমরা সৌমিককে ভাল খেলতে সবসময়ই উৎসাহ দেই। তাকে নিয়ে আর দুশ্চিন্তাও করি না। কারণ সে এক হাত না থাকলেও দৈনন্দিন জীবনের সব কাজই একা একা করতে পারে।’ আগামী দিনগুলোতে সৌমিক নিজেকে টিটি খেলোয়াড় হিসেবে কোন্ পর্যায়ে নিয়ে যাবে, সেটা বলে দেবে সময়ই।
×