ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পঞ্চগড়-ভাউলাগঞ্জ সড়ক জুড়ে সারি সারি গর্ত

প্রকাশিত: ১৬:৪২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

পঞ্চগড়-ভাউলাগঞ্জ সড়ক জুড়ে সারি সারি গর্ত

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় ॥ সড়কতো নয় যেন মরন ফাঁদ। পুরো সড়কজুড়ে সারি সারি গর্ত। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে মানুষজন ও যানবাহন। বৃষ্টি হলেই খানাখন্দে পানি জমে কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। ব্যাস্ততম সড়কের বেহাল এই অবস্থায় ক্ষুব্ধ পথচারীসহ লাখো মানুষ। একবছর ধরেই চলছে খোড়াখুঁড়ি আর সংস্কার কাজ। যেন শেষ হবারই নয়। চলছে ধীরগতিতে নিম্নমানের কাজ। একদিকে সংস্কার হচ্ছে আবার অন্যদিকে পুণরায় খানাখন্দে ভরে যাচ্ছে। প্রায়শই ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনা। অথচ এসব দেখার কেউ আছে বলে মনে হয়না। পঞ্চগড়-ভাউলাগঞ্জ পাকা সড়কটিতে এভাবেই প্রতিদিন যানবাহনসহ লাখো মানুষ যাতায়াত করছেন । স্থানীয়দের দাবি সংস্কার কাজে অনিয়ম ও ধীরগতির কারণেই কাজ শেষ হতে না হতেই আবারো খানাখন্দে ভরে যাচ্ছে। স্থানীয়রা জানায়, ২০১৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধিনে পঞ্চগড়ের ভাউলাগঞ্জ সড়কের বোদা জিসি টু ভাউলাগঞ্জ জিসি সড়কের সাড়ে তিন কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করা হয়। প্রায় ১ কোটি ১২ লাখ টাকায় কাজটি করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রইনকো ট্রেডার্স। দায়সারাভাবে কাজ শেষ করায় সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই আবারো খানাখন্দে ভরে যায় সড়কটির ওই অংশ। তারপর থেকেই পঞ্চগড়ের অন্যতম ব্যস্তময় এই সড়কটিতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহনগুলো। প্রায়ই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। ইজিবাইক উল্টে যাওয়ার ঘটনা নিত্য দিনের। প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ নিয়ে প্রায় লাখো মানুষে এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করছেন। সড়কটিতে এখন পাঁয়ে হেঁটে চলাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। সড়কের কাঁদা পানিতে জামা-কাপড়ও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাতে চলাচল করা আরও বিপজ্জনক। স্থানীয়দের অভিযোগ সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রি দিয়ে কাজ করায় সড়কটি টিকছে না। এছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানেরও তেমন কোন নজরদারি নেই। তাই এক বছর ধরে এভাবেই পড়ে আছে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি। এদিকে গত বছরের আগস্টে ওই সড়কটির কালিয়াগঞ্জ থেকে বড়শশী পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার কাজ শুরু হয়। ৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমএইচ কর্পোরেশন এন্ড মীম ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। এক বছর ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। চলছি বছরের আগস্টে কাজটি শেষ করার কথা থাকলেও কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি তারা। এছাড়া ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রি দিয়ে দায়সারাভাবে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। সড়কটির একাধিক স্থানে পিচ ঢালাইয়ে পর ফাঁটলের সৃষ্টি হয়েছে। এই অংশটুকুর সংস্কার কাজের ধীরগতির কারণে পথচারীদের দুর্ভোগের পাল্লা আরও ভারি হয়েছে। ভাইলাগঞ্জ থেকে জেলা সদরের হাট বাজার অফিস আদালতে যেতে গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। সময় লাগছে দ্বিগুণ। তারপরও ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করছেন তারা। সড়কটি দ্রুত সংস্কার করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। একই সাথে কাজে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তাদের। স্থানীয়রা জানায়, সড়কটি কখনো আমরা ঠিক পেলাম না। এক পাশে কাজ হচ্ছে আরেক পাশে গর্তের সারি। এক বছর ধরে ঠিকাদার গোজামিল দিয়ে কাজ করছে। তাদের অভিযোগ, যেটুকু অংশ কার্পেটিং করা হচ্ছে তা কিছুদিন পরেই ফেটে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে সড়কটি যে অংশ সংস্কার করা হয়েছিল তাতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যেই সড়কটি নষ্ট হয়ে যায়। এখন পুরো সড়ক জুড়ে সারি সারি গর্ত। সড়কে কাজের সময় তদারকি জোরদারসহ অনিয়মে জড়িত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তোলেন তারা। পথচারী আবু তাহের বলেন, পঞ্চগড় থেকে এই সড়ক ধরে আমি নিয়মিত যাতায়াত করি। সড়কটি সংস্কারের কয়েক মাসের মধ্যেই আবারো আগের মতো হয়ে যায়। কিভাবে সংস্কার করে বুঝতে পারি না। খানাখন্দ থাকায় আমার চোখের সামনেই অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। অনেকের হাত পা ভেঙে গেছে। রাতের বেলা এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা বিপজ্জনক। এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাউকে পাওয়া যায়নি। ফলে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। পঞ্চগড় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামছুজামান কাজে অনিয়মের কথা অস্বীকার করে বলেন, এবছর করোনা ভাইরাসের কারণে কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকার পর পুণরায় কাজ শুরু হলে অধিক বৃষ্টিপাত হওয়ায় আমরাই ঠিকাদারকে কাজ বন্ধ রাখতে বলেছিলাম। এছাড়া ওভারলোড নিয়ে যানবাহন চলাচল করায় সড়কটি অল্পতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে সড়কটির খানাখন্দে ভরা অংশটুকু এ বছরেই মেরামত করে দেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
×