ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক গবেষণা গ্রুপের রিপোর্ট

রোহিঙ্গাদের ৫৪০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিত

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

রোহিঙ্গাদের ৫৪০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিত

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আন্তর্জাতিক গবেষণা গ্রুপের গবেষণা রিপোর্টে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ৫৪০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিত বলে অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে। মিয়ানমার সামরিক জান্তার সীমাহীন অত্যাচার নির্যাতনে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৫৪০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে বলে গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা গ্রুপের উদ্যোগে সম্প্রতি ‘রোহিঙ্গাদের স্থায়ী প্রত্যাবাসনের জন্য নিরাপদ জোনের ব্যবস্থা করাসহ নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারী বিশিষ্টজনরা বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার ফলে পরিবেশ ও অবকাঠামো ক্ষতি এবং মানবিক ত্রাণ সহায়তার জন্য মিয়ানমার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশকে ২৬০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিত। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ সুইনবার্ন ইউনির্ভাসিটি অব টেকনোলজির নেতৃত্বে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর পরিচালিত গবেষণার তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য, এ গবেষণা কার্যক্রমে সহায়ক সংগঠন হিসেবে কানাডার লরেন্তিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, নরওয়ের নর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি), আশা ফিলিপিন্স ফাউন্ডেশন এবং অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ রিসার্চ ইনস্টিটিউট। এ গবেষণায় উঠে এসেছে যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রায় তিনশ’ রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে, আনুমানিক আড়াই হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে, ১৯ হাজার নারীকে ধর্ষণ করেছে, ৪৩ হাজার মানুষকে বন্দুক দ্বারা আঘাত করা হয়েছে ও ১ লাখ ১৬ হাজার জনকে মারাধর করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতে এসব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও ক্ষতি পূরণদানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দাবির প্রতি কোন কর্ণপাত করছে না। ওয়েবিনারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অস্ট্রেলিয়া সরকারের সহকারী মন্ত্রী এইচ ই জেসন উড এমপি এবং বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, অস্ট্রেলিয়াস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শফিউর রহমান। ওয়েবিনারে রোহিঙ্গা বিষয়ক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন এ্যাটর্নি জেনারেল পিলিফ রডাক এও, সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, অস্ট্রেলিয়ার অধ্যাপক ক্রিস্টিন যব, ড. মহসীন হাবিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণহত্যা স্টাডি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়নের মহাপরিচালক ড. ওয়াকার উদ্দিন, আইডিইবির সভাপতি প্রকৌশলী এ কে এম এ হামিদ প্রমুখ। ওয়েবিনারে অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয় বরং আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। অস্ট্রেলিয়ার সরকার বিভিন্নভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও বাংলাদেশকে মানবিক সহযোগিতা প্রদান করছে, যা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার বক্তব্যে বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ইতিপূর্বে মিয়ানমারের সঙ্গে কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু মিয়ানমার সরকার উক্ত চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসছে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে ৬ লাখ রোহিঙ্গা ফেরত নেয়ার জন্য তালিকা প্রেরণ করেছে কিন্তু একজনও ফেরত নেয় নাই। আলম রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করেন। উক্ত ওয়েবিনারে মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে অসেরেনলিয়ার অধ্যাপক ক্রিস্টিন যব, অস্ট্রেলিয়ার অধ্যাপক হেনরি পলার্ড, অস্ট্রেলিয়াস্থ বাংলাদেশ এর রাষ্ট্রদূত শফিউর রহমান। ওয়েবিনারে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আমেরিকা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইলেন্ড, মিয়ানমার, নরওয়ে, বেলজিয়াম, জার্মানি, সুইডেন, ফিলিপিন্স, নেদারল্যান্ডস, ব্রিটেন, নিউজিল্যান্ড, ভারত, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের ২৩ জন বক্তাসহ প্রায় দুইশতাধিক অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন। প্রকাশ থাকে যে, অস্ট্রেলিয়ার সুইনবার্ন ইউনির্ভাসিটি অব টেকনোলজির গবেষকদের নেতৃত্বে উল্লিখিত আন্তর্জাতিক গবেষকদল মাঝে মাঝে টেকনাফস্থ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করে উক্ত স্টাডি ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
×