ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এনআইডি তৈরির দলিল কিভাবে পাচ্ছে খতিয়ে দেখা হচ্ছে

রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে নজরদারি বেড়েছে

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে নজরদারি বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গারা যাতে কোনভাবেই ভোটার হতে না পারে সেজন্য কাজ করছে ইসি গঠিত বিশেষ কমিটি। জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ সাইদুল ইসলাম বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ইসির কর্মকর্তাদেরও ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে যেসব দলিল প্রয়োজন সেগুলো রোহিঙ্গারা কিভাবে পাচ্ছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি জানান, ইতোমধ্যেই প্রায় ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক তথ্যসহ আলাদা রোহিঙ্গা ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। ভোটার তালিকায় অবৈধভাবে রোহিঙ্গা অন্তর্ভুক্তি অনুসন্ধানে একটি টিম পাঠানো হয়েছিল। টিমের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অধিকতর তদন্তের জন্য আট সদস্যের একটি কারিগরি কমিটি এবং একটি প্রশাসনিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের প্রতিনিধি রয়েছে। প্রশাসনিক কমিটি গঠন করা হয়েছে একজন যুগ্ম-সচিবের নেতৃত্বে। উভয় কমিটিতে বহির্সংস্থার সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা অন্তর্ভুক্তি রোধ করা কারও একার দায়িত্ব না। এ দায়িত্ব সবার ওপর বর্তায় বলেন তিনি উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি দ্বৈত্য ভোটার তালিকা বিষয় উল্লেখ করে বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতিতে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। ইতোমধ্যে এনআইডি জালিয়াতিতে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দ্বৈত ভোটার পাওয়া গেলে বিধি মোতাবক প্রথমটি রেখে পরবর্তী ভোটার তথ্য ব্লক করে দেয়া হয়। উদ্দেশ্যমূলকভাবে তথ্য গোপন করে দ্বৈত ভোটার হওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় ৯৩৭ জনের এনআইডি লক করাসহ আইন অনুসারে নির্বাচন কমিশন ফৌজদারি মামলা দায়ের করার নির্দেশনা দিয়েছে। এছাড়াও দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্বে অবহেলা অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে দুই লাখ সাত হাজার দ্বৈত ভোটার শনাক্ত করেছি। সবার বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে এসব দ্বৈত্য ভোটার হওয়ার উদ্দেশ্য কী ছিল। দ্বৈত্য ভোটার হওয়ায় সবার বিরুদ্ধেই মামলা করা হচ্ছে না। যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটি করেছে কেবল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মামলা করা হবে। তবে কেউ যদি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কমিশনে আবেদন করে, যাচাই-বাছাই করে কারণ জানা হবে কোন উদ্দেশে তারা এটি করেছে। যারা দ্বৈত হয়েছে তাদের নোটিফাইড করা হয়েছে। এসএমএসের মাধ্যমেও জানানো হচ্ছে। সবার মোবাইল নম্বর না থাকায় উপজেলা নির্বাচন অফিসের মাধ্যমে তাদের অবহিত করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি ঢাকায় এনআইডি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত আইডিইএ প্রকল্পের আউটসোর্সিং ডাটা এন্ট্রি অপারেটর দু’জনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ৮ বছরে সর্বমোট ৩৯ জনকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত ও কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কোন জালিয়াতকারীকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না। তথ্য গোপন করে দ্বৈত ভোটার হওয়ায় ডাঃ সাবরিনার বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তার দুইটি এনআইডি লক করা হয়েছে। একইসঙ্গে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০ এর ধারা ১৪ ও ১৫ অনুযায়ী ৩০ আগস্ট বাড্ডা থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ডাঃ সাবরিনা শারমিন হুসেন কীভাবে দু’বার ভোটার হয়েছেন এবং তার সঙ্গে কেউ জড়িত আছে কি না- তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্তের জন্য বিসিসি ও বুয়েট প্রতিনিধিসহ আইটি বিশেষজ্ঞ নিয়ে ৬ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কুষ্টিয়ায় এনআইডি জালিয়াতির বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপ প্রসঙ্গে এনআইডি ডিজি বলেন, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে এটি তদন্ত করে ৬ জন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র ব্লক করা হয়। একইসঙ্গে তদন্তের দোষী সাব্যস্ত হলে এর সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিশন নির্দেশনা প্রদান করেছে। তিনি বলেন, দেশব্যাপী এনআইডি কার্যক্রম তদারকিতে সাঁড়াশি অভিযান চলবে। ঢাকা জেলায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকার প্রত্যেক থানায় অভিযান চালানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী ১০টি টিমের মাধ্যমে সাঁড়াশি ও ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করা হবে। এই অভিযান নিয়মিত চলবে। প্রতি মাসে এই কমিটি জেলা উপজেলায় অভিযানে যাবে এবং সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করবে। কেউ অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×