ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন ভোগান্তি

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন ভোগান্তি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভুল ব্যাখ্যায় রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হওয়া অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন সুবিধা ক্ষুণœ হচ্ছে। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে পেনশনের অতিরিক্ত টাকা কেটে রাখা হচ্ছে। এ নিয়ে ভুক্তভোগীদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ। এ বিষয়ে বুধবার অর্থমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে ‘গবর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ’। এতে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০০৮ সালের ২৪ মার্চ অম/অবি(বাস্ত-৪)/বিবিধ-২০(উঃস্কেঃ)/০৭/৪৭ নং স্মারকে জারি করা আদেশ বাতিল এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০১১ সালের ১৮ অক্টোবর ইউ ও নোট নং-০৫.১২৩.০১৫.০০.০০.০২১.২০১০-৩৬৮ স্মারকের আদেশ প্রদান করা ব্যাখ্যা প্রদানের দাবি জানিয়েছে। বিধিমালা অনুযায়ী সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রকল্পের চাকরিকাল ধরেই বেতন, ছুটি, পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা নির্ধারণের কথা। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় সার্কুলার জারি করেছে- প্রকল্পের চাকরিকাল গণনা করে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড দেয়ার সুযোগ নেই। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তে ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন ২০ শতাংশ কমে গেছে, কমে গেছে বেতনও। একই সঙ্গে পেনশন নিষ্পত্তিতে জটিলতা দেখা দিয়েছে। তাই অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত দুটি সার্কুলার বাতিলের দাবি জানিয়েছে গবর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ। অর্থ বিভাগের সার্কুলার বাতিলের দাবি জানিয়ে বুধবার এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি অর্থমন্ত্রীর কাছে জমা দেয়া হয়েছে। এ্যাসোসিয়েশন মহাসচিব মোঃ নজরুল ইসলাম অন্য নেতাদের সঙ্গে নিয়ে এই এই স্মারকলিপি জমা দেন। স্মারকলিপিতে বলা হয়, ১৯৭২ সালের ৯ এপ্রিল থেকে ১৯৯৭ সালের ৩০ জুন তারিখের মধ্যে শুরু হওয়া উন্নয়ন প্রকল্প থেকে সহজ ও সরলীকরণ নীতি ও পদ্ধতি অনুসরণ করে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ‘উন্নয়ন প্রকল্প হইতে রাজস্ব বাজেটে স্থানান্তরিত পদের পদধারীদের নিয়মিতকরণ ও জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ বিধিমালা ২০০৫’ এ বলা হয়েছে, নিয়মিতকৃত কোন কর্মকর্তা/কর্মচারীর উন্নয়ন প্রকল্পে চাকরিকাল তার বেতন, ছুটি, পেনশন ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গণনা করা হবে। এতে বলা হয়, উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত পদধারীদের প্রকল্পের চাকরিকাল গণনা করে টাইম স্কেল এবং সিলেকশন গ্রেড প্রদান করার অবকাশ নেই বলে ২০০৮ সালের ২৪ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে এক চিঠিতে মতামত দেয় অর্থ বিভাগ। কিন্তু বিধিমালার সঙ্গে অর্থ বিভাগের এই মতামত সাংঘর্ষিক ও পরস্পরবিরোধী জানিয়ে এর সমাধানে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ধর্ণা দেন। পরে ২০১১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বিষয়টি স্পষ্ট করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অর্থ বিভাগ আরেকটি চিঠিতে জানান, ২০০৮ সালের ২৪ মার্চ অর্থ বিভাগ যে সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল তা ২০০৫ সালের বিধিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বা অসঙ্গতিপূর্ণ নয়। অর্থ বিভাগের ১৯৮৪ সালের ১ ডিসেম্বরের অফিস স্মারক অনুযায়ী, আত্তীকৃত বা দৈনিক মজুরিভিত্তিতে কর্মরতদের চাকরিকাল অনুসারে অর্থাৎ চাকরির ৮, ১২ ও ১৫ বছর পূর্তিতে পর পর তিনটি উচ্চতর স্কেল দেয়ার বিধান রয়েছে। ১৯৭২ সালের ৯ এপ্রিল থেকে ১৯৯৭ সালের ৩০ জুন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উচ্চতর স্কেল সুবিধা ভোগ করছিলেন। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন দফতরে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে নিয়মিত হওয়া শত শত অবসরমুখী ও পেনশনগামীদের পেনশন তোলায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ে ওই মতামত ও ব্যাখ্যা প্রত্যাহার কিংবা পরবর্তী সময়ে অর্থ বিভাগ কোন প্রশাসনিক আদেশ জারি না করায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দফতরগুলো পেনশনের আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করতে পারছে না। হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকেও পেনশনের আবেদনগুলো অহেতুক আটকে দেয়া হচ্ছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের পেনশনগামী ও অবসরমুখী কর্মচারীদের পেনশন থেকে অন্যায়ভাবে ২০ শতাংশ কেটে রাখা হচ্ছে জানিয়ে স্মারকলিপিতে বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু কর্মচারীদের বর্তমান জাতীয় বেতন স্কেলের আগে দেয়া তিনটি উচ্চতর বেতন স্কেল পাওয়ার সময় পার হলেও তা দেয়া হচ্ছে না। অধিকাংশ দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন নতুন করে সমন্বয় করে কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অবহেলায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আর্থিক সঙ্কট ও চরম ভোগান্তিতে দিন পার করতে হচ্ছে বলেও স্মারকলিপিতে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এসআরও-মূলে জারি করা বিধিমালাকে সরকারের অন্য কোন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের আদেশ, সার্কুলার, মতামত বা ব্যাখ্যার মাধ্যমে কখনই অতিক্রম করা যায় না বলে বিষয়টি প্রশাসনিকভাবে নিষ্পত্তি জরুরী হয়ে পড়েছে। ১৯৭২ সালের ৯ এপ্রিল থেকে ১৯৯৭ সালের ৩০ জুনের তারিখের মধ্যে শুরু হওয়া উন্নয়ন প্রকল্প থেকে যারা রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হয়েছেন তাদের উন্নয়ন ও রাজস্ব উভয় চাকরিকালের ভিত্তিতে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড দেয়া বন্ধ করা সংক্রান্ত অর্থ বিভাগের দুটি সার্কুলার বাতিলের দাবি জানানো হয় অর্থমন্ত্রীর কাছে দেয়া স্মারকলিপিতে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারের বিভিন্ন দফতর ও অফিসে অবসর গ্রহণের পাঁচ ছয় বছর অতিক্রম হলেও পেনশন ভোগ করতে পারছে না কর্মচারীরা। বিধিমালা মোতাবেক পেনশন মঞ্জুর করছে না সংস্থা প্রধানরা। চরম ভোগান্তিতে অচল ও অসুস্থ পেনশনমুখী কর্মচারীদের পরিবার। বিধিমালা অনুযায়ী প্রকল্পে যোগদানের তারিখ থেকে চাকরিকাল গণনার বিধান রয়েছে। এ বিধিমালার বিধি-৬ এ নিয়মিতকৃত কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের উন্নয়ন প্রকল্পের চাকরিকাল তার বেতন, ছুটি, পেনশন ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গণনা করার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও অর্থ বিভাগ তা গ্রাহ্য করছে না। আবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ও উক্ত বিধিতে আনুষঙ্গিক সুবিধাদির ব্যাখ্যা প্রদানের ক্ষেত্রে গড়িমসি করছে। এর ফলে বিপাকে পড়েছে হাজার হাজার সরকারী কর্মচারী। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও বিষয়টি নিরসনে কোন কর্তৃপক্ষই আশানুরূপ সাড়া দিচ্ছে না। অথচ বিধি প্রণয়নকারী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধিমালার কোন ধারা ও উপধারাকে অন্য কোন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক আদেশ, মতামত, ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্ত দ্বারা অতিক্রম করার কোন সুযোগ নেই জেনে অহেতুক জটিলতা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এক অবসরগ্রহণকারী কর্মচারীর সন্তান বলেন, ‘বাবা মারা গেছেন এখনও পেনশন পাননি। সারা জীবন পরিবারকে সময় না দিয়ে দেশ ও জাতির সেবা করে গেছেন। এখন আমরা কি পেনশনের টাকা আদৌ পাব না।’
×