ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ড্রাইভার মালেককাণ্ডের সঙ্গে ডিজি সংশ্লিষ্ট নন-স্বাস্থ্য শিক্ষা দফতর

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

ড্রাইভার মালেককাণ্ডের সঙ্গে ডিজি সংশ্লিষ্ট নন-স্বাস্থ্য শিক্ষা দফতর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের বরখাস্তকৃত গাড়িচালক আব্দুল মালেকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সঙ্গে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। গাড়িচালককে ১৪ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রিমান্ডে তদ্বির বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল টাকার মালিক হওয়ার কাহিনী প্রকাশ পাচ্ছে। বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল। সেই বাণিজ্যে কারা কারা কিভাবে জড়িত তাও প্রকাশ করছে মালেক। প্রাপ্ত নামের একটি তালিকা তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘ সেই তালিকা মোতাবেক অভিযোগও লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। তালিকা মোতাবেক অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তাদের ডাকা অথবা গ্রেফতার করা হতে পারে। তালিকাভুক্তরা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে এ জন্য বিমানবন্দর ও সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে আগাম বার্তা দেয়া হয়েছে। বুধবার স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) ড. মোস্তফা খালেদ আহমেদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অধীনে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর গঠিত। অধ্যাপক ডাঃ এ এইচ এম এনায়েত হোসেন গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর মহাপরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। গাড়িচালক আব্দুল মালেককে গত ১ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রেষণে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরে ন্যস্ত করা হয়। প্রতিষ্ঠার সময় থেকে আজ পর্যন্ত নবগঠিত স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর কোন ধরনের কেনাকাটা, কর্মচারী নিয়োগ, পদায়ন বা পদোন্নতির কাজ করেনি। কাজেই গাড়িচালক আব্দুল মালেকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সঙ্গে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর বা স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের কোন পরিবহন পুল নেই। মালেকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের দায় তার ব্যক্তিগত। প্রসঙ্গত, গত ২১ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক প্রশাসন ডাঃ শেখ মোহাম্মদ হাসান ইমাম স্বাক্ষরিত এক আদেশে আব্দুল মালেককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। আদেশে বলা হয়, আব্দুল মালেককে গত ২০ সেপ্টেম্বর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার করেছে, সেহেতু তাকে বরখাস্ত করা হলো। গত ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকার তুরাগ থানাধীন কামারপাড়ার ৪২ নম্বর বামনেরটেক হাজী কমপ্লেক্সের বাড়ি থেকে মালেককে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি পৃথক মামলায় ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম। র‌্যাব সূত্র জানায়, মালেকের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, জাল টাকার ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আছে। এলাকায় সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শক্তির মহড়া ও দাপট প্রদর্শনের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছিল। জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। মালেক তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী। সে অষ্টম শ্রেণী পাস। ১৯৮২ সালে সর্বপ্রথম সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পে গাড়িচালক হিসেবে যোগ দেয়। ১৯৮৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের চালক হিসেবে কাজ শুরু করে। স্বাস্থ্য অধিদফতরে ড্রাইভার্স এ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন তৈরি করে নিজে সেই সংগঠনের সভাপতি হয়। এরপরই শুরু করে ড্রাইভারদের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির বাণিজ্য। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক প্রশাসনকে জিম্মি করে বিভিন্ন ডাক্তারের বদলি ও পদোন্নতি এবং তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করে। স্বাস্থ্য অধিদফতরে সিন্ডিকেট করে সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় ও বিদেশে পাচার করে। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের উপ-পরিচালক মোঃ সামছুল আলম গত বছরের ২২ অক্টোবর তাকে দুদকে তলব করেন। তবে তার বিরুদ্ধে দুদক এখনও অনুসন্ধান শেষ করতে পারেনি। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, মালেকের স্ত্রীর নামে দক্ষিণ কামারপাড়ায় দুটি সাততলা বিলাসবহুল ভবন, ধানম-ির হাতিরপুল এলাকায় সাড়ে চার কাঠা জমিতে একটি নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন, দক্ষিণ কামারপাড়ায় ১৫ কাঠা জমিতে একটি ডেইরি ফার্ম ও বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত আছে বলেও জানা গেছে। মালেকের প্রথম স্ত্রী নার্গিস আক্তারের নামে তুরাগ থানাধীন দক্ষিণ কামারপাড়ায় রমজান মার্কেটের উত্তর পাশে ছয় কাঠা জায়গায় সাততলার (হাজী কমপ্লেক্স) দুটি আবাসিক বিল্ডিং রয়েছে। সবমিলিয়ে মালেক অন্তত শত কোটি টাকার মালিক। র‌্যাব সূত্র বলছে, মালেক কার সঙ্গে কিভাবে আতাত বা যোগসাজশ করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, তার ফিরিস্তি দিচ্ছেন। পুরো চক্রটির সঙ্গে কারা কিভাবে জড়িত তাও প্রকাশ করছেন। চক্রের সদস্যদের একটি নামীয় তালিকা করা হচ্ছে। তালিকাভুক্তদের বিরুদ্ধে কি কি অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তা লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে। তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য অনেককে গ্রেফতার বা ডাকা হতে পারে। তালিকাভুক্তরা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে এজন্য বিমানবন্দর ও সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে আগাম বার্তা দেয়া হয়েছে।
×