ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সঠিক উচ্চতা বজায় রেখেই পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগের সুপারিশ

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

সঠিক উচ্চতা বজায় রেখেই পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগের সুপারিশ

মশিউর রহমান খান ॥ আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সঠিক উচ্চতা বজায় রেখেই গার্ডার স্থাপন করে পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ স্থাপনের জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে সেতু মন্ত্রণালয়। বর্তমান উচ্চতা থাকলে পরিবহন চলাচল মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। ফলে পদ্মা সেতুর বহুমুখী ব্যবহার করা অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই এ থেকে পরিত্রাণের জন্য নতুন ‘তিন পদ্ধতিতে’ বর্তমান ডিজাইন ঠিক রেখে সমস্যার সমাধান করার সুপারিশ করেছে সেতু মন্ত্রণালয়। তিনটির যে কোন একটি পদ্ধতিতে এই সমস্যার সমাধান করা হবে। এর মাধ্যমে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ স্থাপনের কাজ অতি দ্রুত করা সম্ভব বলে মতামত দিয়ে রেল মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানোর জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে গার্ডার তৈরি করায় ও পদ্মা সেতুতে বড় যানবাহন ও লড়ি, কাভার্ড ভ্যানসহ উচ্চতার যানবাহন চলাচল করতে বাধা ও নানা সমস্যার সৃষ্টি হবে। তাই সেতু মন্ত্রণালয়ের মতামত দেয়া ডিজাইন অনুযায়ী রেল রিংক প্রকল্পের কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এরই অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ সরেজমিনে পরিদর্শন করতে ঢাকা থেকে যশোরে যাচ্ছেন রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এমপি। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত সোমবার সেতু মন্ত্রণালয় তাদের দেয়া তিন বিকল্প ডিজাইন ও সমস্যা সমাধানের পথ নির্ণয় করে দেয়া ব্যাখ্যাসহ মতামত রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। মন্ত্রণালয় তা যাচাই-বাছাই করে কোন পদ্ধতিতে অতি দ্রুত সমাধান করা যাবে ও কম খরচে কিভাবে গার্ডার স্থাপন করে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী উচ্চতা ঠিক করা যায় তার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। জানা গেছে, সেতু মন্ত্রণালয়ে পদ্মা রেল সেতু নির্মাণের কাজে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর একটি টিম ও পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক সেতু প্রকল্পের পরিচালকের সঙ্গে তিনটি ডিজাইন নিয়ে কিভাবে সমাধান করা যায় তা আলোচনা করেন। তিনটি ডিজাইন প্রণয়নে কাজ করেন বিখ্যাত ডিজাইনার শামীম জেড বসুনিয়ার নেতৃত্বে পরিচালিত টিম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শামীম জেড বসুনিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, আন্তর্জাতিক মানের উচ্চতা ঠিক না রেখে গার্ডার নির্মাণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে পরিবহন চলাচলে বেশ সমস্যার সৃষ্টি করবে। ফলে মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয় আগে থেকেই সেতু নির্মাণ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বা সমন্বয় করে গার্ডার তৈরি না করত তাহলে বর্তমান অবস্থায় পড়তে হতো না। ফলে সমন্বয়হীনতার কারণে রেল সংযোগ এলাকায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, এটি বিশাল কোন সমস্যা নয়। আমরা এ সমস্যার সমাধান করতে তিনটি পথ বাতলে দিয়েছি। প্রথম পথে যে ডিজাইন দেয়া হয়েছে তাতে অত্যন্ত তম সময়ে তার সমাধান করা হবে। দ্বিতীয় ডিজাইন অনুযায়ী অনেক বেশি ব্যয় হবে ফলে প্রকল্পের কাজে নতুন বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি হবে ও অনেক কাজ করতে হবে। এছাড়া তৃতীয় পদ্ধতিতে ডিজাইন তুলনামূলকভাবে কম চেইঞ্জ করলেও বেশ কিছু গার্ডার নির্মাণ করতে হবে। প্রশস্ততা ও উচ্চতা বাড়াতেও বিকল্প তিনটি পথ দেয়া হয়েছে। তবে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানের উচ্চতা ঠিক রেখেই সকল কাজ করতে হবে। ডিজাইনে কোন কোন স্থানে প্রশস্ততা অনেকটা বাড়িয়ে দিয়ে কাজ করতে হবে। তার বিস্তারিত কত ফুট হবে বা কয়টি গার্ডার স্থাপন করতে হবে তাও তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, তবে কম সময়ে পদ্মা সেতুর রেল লিংক সংযোগের কাজ শেষ করতে চাইলে তিনটি ডিজাইনের যেটি পছন্দ হয় সেটিই করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প নতুন করে নক্সা (রি-ডিজাইন) তৈরি করার নির্দেশ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে গার্ডার তৈরি করায় ও পদ্মা সেতুতে বড় যানবাহন ও লড়ি, কাভার্ড ভ্যানসহ উচ্চতার যানবাহন চলাচল করতে বাধা ও নানা সমস্যার সৃষ্টি হবে বিধায় ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে দ্রুত রি-ডিজাইন করে তা জমা দিতে ও নতুন ডিজাইন অনুযায়ী কাজ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের মাধ্যমে এ নির্দেশ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপরই সমন্বিতভাবে মাঠে নামে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও সেতু বিভাগ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গত শুক্রবার বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সরেজমিনে দেখতে যান। এ সময় তারা বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকার মাওয়া প্রান্তে দোগাছি এলাকার সার্ভিস এরিয়া ১ এর সভাকক্ষে এ নিয়ে রেলপথ সচিব সেলিম রেজা ও সেতু সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মেজর জেনারেল জাহিদ, চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানির প্রতিনিধি ও রেল সংযোগ প্রকল্পের ঠিকাদার কোম্পানি চায়না রেলওয়ে গ্রুপের কর্মকর্তাবৃন্দ ও প্রকৌশলীগণ উপস্থিত ছিলেন। নতুন ডিজাইন অনুযায়ী রেলের তৈরি পুরনো গার্ডার সরিয়ে ফেলতে হবে। সড়কের সঙ্গে রেললাইনের হেডরুম উচ্চতা কমপক্ষে ৫ দশমিক ৭ মিটার থাকতে হয় বর্তমানে হেডরুম উচ্চতা রয়েছে ৪ দশমিক ৮ মিটার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী আমরা বিকল্প পথে কিভাবে কম সময়ে ও কম খরচে রি-ডিজাইন করে চলমান উচ্চতার সমস্যা নিরূপণ করতে পারি সেজন্য বিকল্প তিনটি রি-ডিজাইন তৈরি করে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। ডিজাইন অনুযায়ী যে কোন একটি গ্রহণ করে রেলপথ মন্ত্রণালয় চলমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবেন। আশা করি কম সময়েই এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভভ হবে। প্রস্তাবিত ডিজাইন অনুযায়ী প্রকল্পে বাড়তি তেমন বেশি অর্থের প্রয়োজন হবে না। পদ্মা সেতুতে রেল লিংক প্রকল্পে রেল সেতুর কারণে যাতে কোন প্রকার সমস্যার সৃষ্টি না হয় সেদিকটি অতি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের ত্রুটিগুলোর সঠিক সমাধানকল্পে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা হচ্ছে। তবে অবশ্যই হেরুমের উচ্চতা আন্তর্জাতিক মানের উচ্চতাকে বজায় রেখেই সকল নির্মাণ কাজ করতে হবে। বর্তমানে তা কম রয়েছে। পদ্মা সেতু সূত্র জানায়, সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। দুই পাশের কিছু অংশে রেললাইন ওপর দিয়ে গেছে। এসব জায়গায় হেডরুম যে উচ্চতায় দেয়ার কথা, সেটি দেয়নি রেলওয়ে। এ অবস্থায় সেতুতে ওঠানামা করতে পারবে না বড় ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানগুলো। হরাইজন্টাল ও ভার্টিক্যাল দুটো দিকেই রেলওয়ের কাজে আপত্তি রয়েছে। দেশের সড়কপথের হেডরুম স্ট্যান্ডার্ড হচ্ছে হরাইজন্টাল ১৫ মিটার, ভার্টিক্যাল ৫ দশমিক ৭ মিটার, যা এই সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে মানা হয়নি। এ অবস্থায় সেতুতে ট্রাক কাভার্ড ভ্যানও দুই তলা বাস যেতে পারবে না।
×