ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সৌদিতে আকামার মেয়াদ বাড়ল ২৪ দিন

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

সৌদিতে আকামার মেয়াদ বাড়ল ২৪ দিন

আজাদ সুলায়মান ॥ টিকেট পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে সাউদিয়া এয়ারলাইন্স ঢাকায় তাদের সব কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে। এতে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁও হোটেল ও প্রবাসী কল্যাণ ভবনের সামনে বুধবার বিক্ষোভ করেন আটকেপড়া সৌদি প্রবাসীরা। এদিকে ঢাকার আবেদনের মুখে ২৪ দিন বাড়ানো হয়েছে আটকেপড়াদের আকামার (কর্ম ভিসা) মেয়াদ। ফলে পরিস্থিতির সাময়িক উন্নতি ঘটবে বলে আশ্বস্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, যাদের ভিসার মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে শুধু তাদের জন্য বাড়ানো হয়েছে এই চব্বিশ দিন। যাতে তারা এই সময়ের মধ্যে নিরাপদে টিকেট কেটে সৌদি যেতে পারেন। এ নিয়ে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা না করার জন্য বিক্ষোভরত প্রবাসীদের অনুরোধ জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী। তারা উভয়েই যাত্রীদের এ বিষয়ে আরও সতর্ক ও সংযত হওয়ার পরামর্শ দেন। যাতে সৌদির শ্রমবাজারে কোন ধরনের নেতিবাচক ধারণা দেখা না দেয়। দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আশ্বস্ত করা হয় ইতোমধ্যে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সৌদি আরবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তারই ফলস্বরূপ আপাতত ২৪ দিনের জন্য আকামার মেয়াদ বাড়িয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যাদের ভিসার শেষ হয়ে যাবে তাদেরই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সৌদিতে পাঠানোর সর্বাত্মক উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এদিকে মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে সাউদিয়া এয়ারের প্রথম সিডিউল ফ্লাইট শুরু করেছে। এ বিষয়ে ড. একে মোমেন বলেন, ঢাকা থেকে নিয়মিত সাউদিয়া ও বিমানের স্পেশাল ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। এনিয়ে কোন সঙ্কট নেই। এছাড়া করোনায় বন্ধ রাখা সাউদিয়ার সিডিউল ফ্লাইট আগামী ১ অক্টোবর থেকে নিয়মিত স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মফিদুর রহমান। পাশাপাশি আগামী ২৮ সেপ্টেম্বরেও একটি স্পেশাল ফ্লাইট পরিচালনা করবে সাউদিয়া। বিমানও প্রতি সপ্তাহ দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করবে। ২৪ দিনের হিসাব ॥ বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে সৌদি আরবে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের আকামার মেয়াদ বাড়িয়েছে দেশটির সরকার। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে এর মেয়াদ আরও ২৪ দিন বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ আরবী সফর মাসের শেষ দিন পর্যন্ত প্রবাসীদের আকামার মেয়াদ বাড়ানো হয়। গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার নিজ ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এক স্ট্যাটাসে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, সৌদি আরবে চারদিন বর্ধিত ছুটি ছিল। আজকেই খুলেছে। সৌদি আরবের যারা খোঁজ রাখেন তাদের এটা জানা উচিত (কোন ‘ছাত্র অধিকার আন্দোলন’ এটা জানার কথা নয়)। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও লেখেন, সৌদি সরকার আমাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে নিচের সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে-আকামার মেয়াদ আরবী সফর মাসের শেষ দিন পর্যন্ত (মানে আজ থেকে আরও ২৪ দিন) বর্ধিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ বিমানকে রিয়াদ এবং জেদ্দায় সপ্তাহে মোট চারটি ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়েছে। ঢাকাস্থ সৌদি আরব দূতাবাসের ভিসা অফিস রবিবার থেকে খোলা থাকবে। যেখানে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নতুন নিয়মাবলি মেনে কনসুলার সেবা প্রদান করা হবে। জানা যায়, গত ক’দিনের টানা বিক্ষোভ আন্দোলনের মুখে গতকাল বুধবার সকাল থেকেই তালাবদ্ধ করে দেয়া হয় সোনারগাঁও হোটেলে অবস্থিত সাউদিয়ার এয়ারের বাণিজ্যিক অফিসটি। টিকেট পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে এবং হোটেলের সামনে আটকেপড়া যাত্রীদের বিক্ষোভের মুখে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয় এয়ারলাইন্সটি। এতে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন প্রবাসীরা। এক পর্যায়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিক্ষোভ থেকে ঘোষণা আসে, তারা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জনকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে দাবি-দাওয়া নিয়ে যাবেন। ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গে সাড়ে ৯টার দিকে তারা কাজী নজরল ইসলাম এভিনিউ ধরে মন্ত্রণালয়গুলোর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। ঘোষণার সময় মাইক হাতে প্রবাসীদের প্রতিনিধি বলেন, আমাদের প্রতিনিধি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে গিয়েছে কিন্তু সেখান থেকে কোন সুরাহা আসেনি। আমরা আজ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশে সবাই রওনা দেব। সেখানে যদি কোন ফয়সালা না করা হয়Ñ আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে অবস্থান নেব। আমরা এখন পররাষ্ট্র, জনকল্যাণ এবং প্রবাসী কল্যাণ এই মন্ত্রণালয়গুলোয় সুষ্ঠুভাবে যাব এবং কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা করব না। উল্লেখ্য, করোনার আগে যারা দেশে এসেছিলেন, তারা যেতে না পেরে ইতোমধ্যে অনেকের ভিসা ও আকামার মেয়াদ শেষ হয়েছে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অনেকের ভিসা, আকামার মেয়াদ শেষ হবে। ফলে পাঁচ শতাধিক সৌদি প্রবাসী সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের সামনে কাওরান বাজার মোড়ে বিক্ষোভ করছেন। সৌদি অ্যারাবিয়া এয়ারলাইন্স টিকেট বিক্রি সংক্রান্ত সব কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করায় বুধবার সকালেও কারওয়ান বাজারে সাউদিয়া কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ শুরু করেন প্রবাসীরা। সেখান থেকেই বিক্ষোভকারীদের একাংশ ইস্কাটন গার্ডেনের প্রবাসী কল্যাণ ভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নেয়। এ সময় ভবনের বাইরে অবস্থান নেয়া সৌদি প্রবাসী বগুড়ার ফরহাদ বলেন- আমি গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ছুটিতে দেশে ফিরি। লকডাউনের কারণে যেতে পারিনি। আমার ভিসার মেয়াদ, আকামা ও কোম্পানির ছুটি শেষ হয়ে গেছে। গত ১ মাস ধরে টিকেটের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কেউই টিকেট দিতে পারছে না। সাভার থেকে আসা মাইনুল ইসলাম বলেন- আমি এ বছরের ২৮ জানুয়ারি দেশে ফিরেছি। আমার সৌদির রিটার্ন টিকেট কাটা ছিল। তবে লকডাউনের কারণে যেতে পারিনি। এখন টিকেটের তারিখ পরিবর্তনের জন্য অতিরিক্ত টাকা চাচ্ছে এজেন্সি। এগুলো সমাধানের জন্যই এখানে অবস্থান করেছি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত তারা প্রবাসী কল্যাণ ভবনের বাইরে অবস্থান করেন। তাদের দাবি, অবিলম্বে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে তাদের বিমানের টিকেটের ব্যবস্থা করা। তখন ভবনের ভেতরে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ইতোমধ্যে ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলকে পাঠানো হয়। একই দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাব ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাইরে বিক্ষোভ করেছে প্রবাসীরা। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন জানান- বাংলাদেশের অনেকের সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য ভিসা ও আকামা রয়েছে। কিন্তু যেতে পারছেন না। এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হয়েছে বুধবার। মন্ত্রী বলেন, আমাদের বৈঠকে সৌদি আরবে লোক পাঠানো প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল। প্রবাসীদের দাবি ছিল তারা যদি এখন না যেতে পারে তবে তাদের ভিসা বাতিল হয়ে যাবে। আমরা সৌদি সরকারের কাছে মঙ্গলবার অনুরোধ করেছি, তিন মাস তাদের ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য এবং যাতে এই সুবিধা বিনা খরচে পায়। সৌদি এয়ারলাইন্স যতগুলো অনুমতি চেয়েছে সব অনুমতি দিয়েছি যাতে করে সহজে যেতে পারে। এছাড়া বিমান তৈরি আছে। যে মুহূর্তে ল্যান্ডিং রাইট পাবে, তখনই ফ্লাইট চলাচল শুরু করবে। এদিকে প্রবাসীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে মোমেন বলেন- সৌদি সরকার আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে অত্যন্ত কড়া। যদি আইনশৃঙ্খলা বিরোধী কাজ বা জটলা দেখানো হয় তবে এটি তারা বরদাস্ত করে না। তারা এখানকার বিষয়গুলো অবলোকন করছে। টেলিভিশন মিডিয়াতে যা দেখানো হচ্ছে সেটি স্টাডি করছে। আমাদের ভয় হলো, তারা যদি দেখে আন্দোলনকারীরা জটলা করছে, তবে হয়তো তাদের ভিসা বাতিল করে দেবে কিংবা কাজ বাতিল করে দেবে। এ বিষয়ে তারা খুব শক্ত। তারা যদি বাতিল করে তবে আমাদের কিছু করার নাই। প্রবাসীরাই তখন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আগেও এ ধরনের ঘটনা হয়েছে। সাত বছর পরে সৌদি আরব আবার লোক নেয়া শুরু করেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এই অবস্থায় আমাদের প্রতি তারা বিরূপ ধারণা পেলে প্রবাসীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এদিকে করোনার কারণে ৬ মাস বন্ধ থাকার পর প্রথম একটি ফ্লাইট গত রাতে ঢাকা ছেড়েছে। সৌদি সময় মঙ্গলবার রাত ৩টা ২০ মিনিটে বিমানবন্দরে অবতরণ করে ফ্লাইটটি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর প্রায় ২৫২ জন প্রবাসীকে নিয়ে সৌদি আরবের রিয়াদের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছে সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের প্রথম ফ্লাইট। মঙ্গলবার রাত পৌনে তিনটার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে ফ্লাইটটি। ওই ফ্লাইটের যাত্রী আতিকুর রহমান বলেন, ছুটিতে এসে ১০ মাস ধরে আটকে ছিলাম। আমার ভিসার মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ, দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। রিটার্ন টিকেট নিয়ে এলেও বাংলাদেশে কিছু করতে পারিনি। পরে সৌদি আরবে থাকা বন্ধুদের মাধ্যমে সেখান থেকে টিকেট রি-ইস্যু করে নিয়েছি। করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট করে এত দ্রুত ফ্লাইট ধরা অনেক কষ্ট হয়েছে। তবুও অবশেষে যেতে পারছি। জানা গেছে গতকাল বুধবার থেকে ফ্লাইট শুরু করেছে সাউদিয়া এয়ারলাইন্স। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চারটি ফ্লাইট রয়েছে এয়ারলাইন্সটির। স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতি ফ্লাইটে সর্বোচ্চ ২৬০ জন যাত্রী নিতে পারবে তারা। যদিও বিমান ১ অক্টোবরের আগে ফ্লাইট শুরু করার অনুমতি পায়নি। ফলে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সৌদি আরব ফিরতে পারছেন না ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়া সব প্রবাসীরা। এদিকে সাউদিয়া এয়ারের একজন কর্মকর্তা বলেন, এ সঙ্কট সহজে কাটার নয়। যদি সাউদিয়া ও বিমান নিয়মিত প্রতিদিন ফ্লাইট চালায় তবেই সম্ভব হবে আটকেপড়াদের পাঠানো। আটকেপড়া ২০ হাজার লোক ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সৌদি যেতে চায় তাহলে কমপক্ষে ৭০টি ফ্লাইটের প্রয়োজন। কিন্তু আমরা সপ্তাহে মাত্র ২টি ফ্লাইট পরিচালনা করছি এখন। আমাদের পক্ষে এত লোককে টিকেট দেয়া তো সম্ভব না। কিন্তু এটাই কাউকে বোঝানো যাচ্ছে না। এখানে সমস্যা সমাধানের জন্য যাদের ভিসা মেয়াদ শেষ হয়েছে, তাদের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি বেশি জরুরী। একইসঙ্গে ফ্লাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। কিন্তু সৌদি আরব ও বাংলাদেশ অনুমতি না দিলে এয়ারলাইন্সের পক্ষে ফ্লাইট বাড়ানো সম্ভব না।
×