ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নেত্রকোনা বিসিক শিল্পনগরী

১৩ বছরেও চালু হয়নি বেশিরভাগ কারখানা

প্রকাশিত: ২১:৩৬, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

১৩ বছরেও চালু হয়নি বেশিরভাগ কারখানা

সঞ্জয় সরকার, নেত্রকোনা ॥ জেলা শহরের একমাত্র বিসিক শিল্পনগরীতে দীর্ঘ ১৩ বছরেও গ্যাস সরবরাহ চালু হয়নি। আর এ কারণে চালু করা যায়নি বেশিরভাগ শিল্পকারখানা। এর ফলে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও হাত গুটিয়ে বসে আছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। হারিয়ে ফেলছেন উৎসাহ। এদিকে ব্যবহারের অভাবে নষ্ট হচ্ছে অনেক দামী যন্ত্রপাতি। জানা গেছে, জেলা সদরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় ২০০৫-০৭ অর্থবছরে ছয় কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫ একর জমির ওপর বিসিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর ৭০টি প্রস্তাবিত শিল্প-প্রকল্পের জন্য ১০৩টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘ ১৩ বছরে মাত্র ২৬টি শিল্প-প্রকল্প চালু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: ছয়টি খাদ্য ও খাদ্যজাত, দুটি কেমিক্যাল, একটি বিকল্প জ¦ালানি, একটি জুতা, দুটি গার্মেন্টস, তিনটি পশুখাদ্য ও ওষুধ, একটি মশার কয়েল, তিনটি আয়রন ও এ্যালুমিনিয়াম, তিনটি প্লাস্টিক ক্যান, একটি মসলা, একটি খনিজ পানি উৎপাদন এবং দুটি প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানা। বাকি ৪৪টি বড় ধরনের শিল্প-প্রকল্প গ্যাস নির্ভর হওয়ায় আজও চালু করা সম্ভব হয়নি। চালু না হওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে বস্ত্র ও বস্ত্রজাত, প্রকৌশল, কেমিক্যাল এ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস্, প্লাস্টিক রাবার এ্যান্ড নন মেটাল, ইট তৈরি, খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত প্রভৃতি কারখানা রয়েছে। বিসিকের জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৭০ জন শিল্পোদ্যোক্তা এ পর্যন্ত ৭২ কোটি ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এদের মধ্যে যে ২৬ জন প্রকল্প চালু করেছেন- তারা গত এক বছরে (২০২৯-২০) ২৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করতে পেরেছেন। আর সরকার সেখান থেকে রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়েছে এক কোটি ২৯ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলেন, বড় শিল্প-কারখানা চালু হলে বিক্রয়মূল্য এবং রাজস্ব আদায় অন্তত দশগুণ বাড়বে। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চালু হওয়া ২৬টির মধ্যেও বেশকিছু কারখানা জ¦ালানিনির্ভর। গ্যাস সরবরাহ না থাকায় তারা বিকল্প জ¦ালানি ব্যবহার করছেন। কিন্তু এতে উৎপাদন খরচ বেশি হ”েচ্ছ- যা পণ্যের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ‘প্রিয়া ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ’ এর স্বত্বাধিকারী তপন পাল বলেন, ‘গ্যাস না থাকায় আমরা জ¦ালানি হিসেবে কাঠের ভুষি ব্যবহার করছি। ভুষির দাম বেশি। পাশাপাশি ভুষি সংগ্রহ এবং রোদে শুকানো বাবদ পাঁচ-ছয়জন বাড়তি শ্রমিক খাটাতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। অন্যদিকে প্রতিযোগিতার বাজারে উৎপাদিত পণ্য বেচতে গিয়ে চাহিদানুরূপ লাভ হচ্ছে না। গ্যাস সরবরাহ চালু হলে উৎপাদন খরচ অনেক কম হবে বলে জানান তিনি। ‘মেসার্স এ এল আকন্দ ফ্যাশন’ নামে একটি গার্মেন্টস কারখানার মালিক জহিরুল হাসান আকন্দ বলেন, ‘গ্যাস সরবরাহ না থাকায় আমরা ওয়াশিং সিস্টেম চালু করতে পারিনি। প্যান্ট, গেঞ্জি ইত্যাদি তৈরির পর গাজীপুরে পাঠিয়ে ওয়াশ করতে হয়। এতে পরিবহন ও ওয়াশিং বাবদ বাড়তি খরচ গুনতে হয়। অপচয় হয় সময়েরও।’ ব্যাংক থেকে বিপুল টাকা ঋণ নিয়ে ‘মাহিতাজ আয়রন ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামে একটি কারখানা চালু করেছিলেন আজিজুল হক তালুকদার নামে একজন। গ্যাস সরবরাহ না থাকায় তিনি জ¦ালানি হিসেবে লাকড়ি ব্যবহার করতেন। কিন্তু লাভের মুখ দেখতে পারেননি। নেত্রকোনা বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হাসান আকন্দ বলেন, ‘শুধুমাত্র গ্যাস না থাকায় ৪৪টি শিল্প-কারখানা এখনও চালু করা যায়নি। এসব প্রস্তাবিত শিল্প-কারখানার মালিকরা কোটি কোটি বিনিয়োগ করে এখন হতাশায় ভুগছেন। উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। অনেকে ব্যাংক ঋণের কিস্তি দিতে দিতে ফতুর হয়ে যাচ্ছেন। কারও কারও কারখানার যন্ত্রপাতি অচলাবস্থায় নষ্ট হচ্ছে।’ জেলা প্রশাসক কাজি মোঃ আব্দুর রহমান বলেন, ‘গ্যাস সরবরাহ না থাকায় শিল্পনগরীর অনেক কল-কারখানা চালু করা যাচ্ছে না- এটা সত্য। বিষয়টির দ্রুত সমাধানের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়, খনিজ সম্পদ বিভাগসহ বিসিক ও তিতাস গ্যাস কোম্পানির উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।’ বিসিকের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে শিল্পনগরীর ২৬টি কারখানায় ৬শ ৫০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। বাকি ৪৪টি বড় কারখানা চালু হলে সব মিলিয়ে সাড়ে ৪ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।
×