ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

২০৩০ সালে ছয়টি মেট্রো রেলের ১২৮ কিলোমিটারের মধ্যে উড়াল ৬৭ ও পাতাল ৬১

প্রকাশিত: ১৭:৩৪, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

২০৩০ সালে ছয়টি মেট্রো রেলের ১২৮ কিলোমিটারের মধ্যে উড়াল ৬৭ ও পাতাল ৬১

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসন এবং গণপরিবহনের সক্ষমতা বাড়াতে ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার ছয়টি মেট্রোরেল রুট নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ছয়টি প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হবে ১২৮ কিলোমিটার রুট। যার ৬৭ কিলোমিটার হবে উড়াল পথে এবং ৬১ কিলোমিটার হবে পাতাল পথে। বুধবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী তার সরকারী বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মেট্রোরেল প্রকল্পের উদ্যোগে নির্মিত ফিল্ড হাসপাতাল উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন। রাজধানীর গাবতলী ও উত্তরায় নির্মিত দুটি আইসোলেশন সেন্টার তথা ফিল্ড হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নের মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রায় পঞ্চাশ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এরই মাঝে উড়ালপথে তিন কিলোমিটার রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। চলছে বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপন। এসময় মন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারির শুরু থেকে মেট্রোরেল প্রকল্পে কর্মরত জনবলের মাঝে সংক্রমণ রোধে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। দুটি আইসোলেশন সেন্টার তথা ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণের ফলে কর্মরত দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী, পরামর্শকসহ অন্যান্য জনবলের মানসিক সাহস বাড়ার পাশাপাশি প্রকল্পের কাজে নবগতি সঞ্চার হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। মন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেলের উত্তরা হতে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম অংশের এগারো কিলোমিটার উড়ালপথ ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। তিনি জনভোগান্তি কমাতে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের ভিত্তির কাজ দ্রুত এগিয়ে নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ফার্মগেট হতে মতিঝিল পর্যন্ত সড়ক অত্যন্ত ব্যস্ত ও যানবাহনের চাপ অত্যধিক। এসময় মন্ত্রী জানান, ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম মহানগরীতে মেট্রোরেল চালু এবং চট্টগ্রামের জন্য একটি পরিবহন মাস্টার প্ল্যান তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিবহন পরিকল্পনা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। উল্লেখ্য, মেট্রোরেল প্রকল্পের আওতায় উত্তরার পঞ্চবটি এবং গাবতলী কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে চব্বিশ শয্যার দুটি আইসোলেশন সেন্টার তথা ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন নিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে কার্ডিয়াক মনিটর, অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। ভিডিও কনফারেন্সে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক সচিব এমএএন ছিদ্দিক, ডিটিসিএ’র নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান, মেট্রোরেল রুট-৬ এর প্রকল্প পরিচালক আফতাব উদ্দিন তালুকদারসহ ডিএমটিসিএল-এর কর্মকর্তাগণ সংযুক্ত ছিলেন। মহামারি করোনাভাইরাস মানুষের জীবনের মতো মেট্রোরেলেরও সবকিছু ওলট-পালট করে দিয়েছে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, নতুন নতুন সংকট শুরু হয় এ প্রকল্পে, সমাধানের জন্যও পথ খোঁজা হয়। এই মহামারিতে মেট্রোরেলের সাথে সংশ্লিষ্টদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় হাসপাতাল নির্মাণসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পে অধিকাংশ জাপান ও থাইল্যান্ডের প্রকৌশলী পরামর্শকরাই কাজ করছেন। তিনি আরও বলেন, সংশ্লিষ্টদের করোনা শনাক্ত হলে কিংবা উপসর্গ থাকলে প্রকল্প এলাকায় কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি করোনাকালে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের প্রকল্প এলাকায় আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনা দীর্ঘায়িত হতে পারে এমন বিবেচনায় মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ কর্মীদের জন্য দুটি ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণ করেছে। উত্তরার পঞ্চবটী কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ১৪ শয্যাবিশিষ্ট এবং গাবতলীর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ১০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। আইসিইউ সুবিধাসহ সব সুবিধাই রাখা হয়েছে। দেশে কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হাসপাতাল নির্মাণের নজির এই প্রথম। প্রকল্পের জনশক্তিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনায় আক্রান্ত হলে নিজেদের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলার অংশ হিসেবে ফিল্ড হাসপাতাল দুটি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পে যারা কাজ করছেন এতে তাদের মনোবল বৃদ্ধি পাবে এবং কাজের গতিও বাড়বে। প্রায় ২১ কিলোমিটারের বেশি চলমান মেট্রো রেল প্রকল্প আগামী বছরের ২১ ডিসেম্বর স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উপক্ষে উদ্বোধন হওয়ার কথা। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার কারণে প্রথমে প্রকল্পটি ছয়মাস পিছিয়ে যায়। করোনার কারণে কাজ পুরোপুরি বন্ধ না হলেও সীমিত পর্যায়ে চলেছে প্রায় পাঁচ মাস। সম্প্রতি প্রকল্পের গতি বাড়লেও সময়মতো কাজ শেষ হওয়া নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হলি আর্টিজানের ঘটনার পর ফের কাজ শুরু হলে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে। এখন সময়মতো প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া নির্ভর করবে করোনার ভবিষ্যত বিস্তারের ওপর। ইতোমধ্যে ১৭০জনের বেশি প্রকল্পে নিয়োজিত ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যদি করোনার ব্যাপকতা সামনের দিনগুলোতে বাড়ে তবে সময়মতো কাজ শেষ করা হবে মহা চ্যালেঞ্জ। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ পিছিয়েছে।
×