স্টাফ রিপোর্টার ॥ হিন্দি ফিল্ম দেখেই এ্যাকশন বয় হওয়ার স্বপ্ন জাগে তাদের। অথচ বয়স তাদের সদ্য কুড়ি পেরিয়েছে। এ বয়সেই মাহবুব ইসলাম ওরফে কাটার রাসেল (২০) ও হৃদয় (২২) গড়ে তুলেছে কিশোর গ্যাং। তারা নিজেদের নিরাপত্তায় কোমরে রাখত বিদেশী পিস্তল। গ্যাংয়ের সদস্যদের নিয়ে এলাকায় দাপট দেখিয়ে চলত তারা। এলাকার মানুষও ভয়ে প্রতিবাদ করত না। সম্প্রতি সোহাগ নামের এক কলেজছাত্রকে খুনের পর ফিল্মি স্টাইলে গা ঢাকা দিয়েছিল তারা; বলছিলেন র্যাব-১’র অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল।
রাজধানীর উত্তরখানে কলেজছাত্র খুনের ঘটনায় কিশোর গ্যাংয়ের দুজনকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য পায় র্যাব। মঙ্গলবার কাওরানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা তুলে ধরেন র্যাব-১ -এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল। তিনি বলেন, উত্তরা এলাকায় কাটার রাসেল ‘দি বস’ নামের একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল। এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখার জন্য ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল গড়ে তুলেছে সে। তাদের এমন চলাফেরার কারণে স্থানীয়রা তাদের এড়িয়ে চলত। এতে নিজেদের ক্ষমতাবান মনে করত তারা। কলেজছাত্রকে ছুরিকাঘাত করে যেদিন খুন করা হয় সেদিন রিক্সার চাকা থেকে ময়লা পানি শরীরে লেগেছিল কাটার রাসেলের। এর জের ধরে সে রিক্সাচালককে মারধর করছিল। এ সময় কলেজছাত্র সোহাগ ওই রিক্সার যাত্রী ছিল। সাধারণ বিষয় নিয়ে রিক্সাচালককে মারধর করায় প্রতিবাদ করেন সোহাগ। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে রাসেল তার গ্রুপের নাদিম, সানি, মেহেদী, সাদ, সাব্বিরকে ডেকে নিয়ে এসে সোহাগকে মারধর করে এবং এক পর্যায়ে তার পেটে ছুরিকাঘাত করে। পরে স্থানীরা সোহাগকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, এই ঘটনার পরে রাসেল ও হৃদয় নিজেরা আত্মগোপনে যাওয়ার পাশাপাশি দলের অন্য সদস্যদের আত্মগোপনে যেতে সহায়তা করে। এছাড়া পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে হৃদয় ও রাসেল দেশ ছাড়ার পরিকল্পনাও করছিল। কাটার রাসেল ও হৃদয় অত্যন্ত ধুরন্ধর। তারা বিদেশী অপরাধবিষয়ক টিভি সিরিয়াল দেখে পুলিশের হাত থেকে গ্রেফতার এড়ানোর নানা কৌশল অবলম্বন করছিল। এমনকি তারা মোবাইল বা অন্য প্রযুক্তি ব্যবহার থেকে বিরত ছিল। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় তারা বারবার স্থান পরিবর্তন করছিল। ফলে তাদের ধরতে র্যাবের গোয়েন্দা সদস্যদের বেগ পেতে হয়। এমনকি তাদের গ্রেফতারে ম্যানুয়াল পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হই আমরা। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি বিদেশী পিস্তলসহ আট রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা কীভাবে বিদেশী পিস্তল সংগ্রহ করেছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাব অধিনায়ক শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, ওই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, কোন বড় সন্ত্রাসী গ্রুপ তাদের এসব অস্ত্র সরবরাহ করেছে। শীঘ্রই গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব বিষয়ে জানতে পারব। তবে আমরা প্রাথমিকভাবে যেটি জানতে পেরেছি তা তদন্তের স্বার্থে এখনই বলা সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য, গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে আটটার দিকে ছুরিকাঘাতে নিহত হয় সোহাগ। ঘটনার পরদিন নিহতের বড়ভাই মেহেদী হাসান সাগর বাদী হয়ে উত্তরখান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় মাহবুবুল ইসলাম রাসেল ওরফে কাটার রাসেল, হৃদয়, সাদ, সাব্বির হোসেন ও সানির নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করা হয়। এরপর তাদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে র্যাব।