ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্য

৮ বিভাগে ৭১ উপজেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ২৩:০২, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

৮ বিভাগে ৭১ উপজেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে

ফিরোজ মান্না ॥ সরকার দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য দেশের ৮ বিভাগে প্রথম পর্যায়ে ৭১ উপজেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করছে। সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে গণপূর্ত অধিদফতর। পর্যায়ক্রমে দেশের সব উপজেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ৭১ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ আগামী মাসেই শুরু হচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়েল প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সরকার এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পের বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে সরকার প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে। বিদেশে যাতে দক্ষ জনশক্তি রফতানি করা যায় তার জন্য দক্ষতা সবার আগে প্রয়োজন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পড়েছে গণপূর্ত বিভাগের হাতে। কাজটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। ৮ বিভাগের ৭১ উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে কাজ শুরু হবে। পরে পর্যায়ক্রমে দেশের সব উপজেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন হবে। বাকি উপজেলার কাজগুলোও আমরাই বাস্তবায়ন করব। প্রকল্পটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অভিবাসনে পিছিয়ে পড়া উপজেলাগুলোতে আগে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন হচ্ছে। তাছাড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করার জন্য মন্ত্রী এমপিরা ডিও লেটারও দিয়েছেন। মন্ত্রণালয় থেকে আগে কোন কোন উপজেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে সেই তালিকা আমাদের পাঠিয়েছে। সেই তালিকা ধরেই আমরা কাজটি করে যাচ্ছি। প্রধান প্রকৌশলী বলেন, বিভাগ ওয়ারী যে সব উপজেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে তা হচ্ছেÑঢাকা বিভাগের শরীয়তপুরের জাজিরা, ডামুড্যা ও নড়িয়া। গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর, রাজবাড়ীর পাংশা, মাদারীপুরের শিবচর, গাজীপুরের কালীগঞ্জ, নরসিংদীর পলাশ, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং ও ফরিদপুরের চর ভদ্রাসন। ময়মনসিংহ বিভাগে গফরগাঁও, ত্রিশাল, মুক্তাগাছা, নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা ও মোহনগঞ্জ, জামালপুর জেলার ইসলামপুর, টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর। চট্টগ্রাম বিভাগের হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, মীরসরাই, পটিয়া। কুমিল্লা জেলার বড়ুরা, লাকসাম। খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা, কক্সবাজারের চকরিয়া, নোয়াখালীর হাতিয়া, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর, ফেনীর সোনগাজী। রাজশাহীর বিভাগের রাজশাহী জেলার বাগমারা ও রাঘা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ ও কাজীপুর, পাবনার বেড়া, নওগাঁ জেলার পতœীতলা ও বদলগছি, নাটোরের বাগাতিপাড়া, জয়পুরহাটের পাঁচ বিবি। রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর, গাইবান্ধার সাঘাটা, নীলফামারীর জলঢাকা, পঞ্চগড়ের আটওয়ারী, দিনাজপুরের বিড়ল, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম। খুলনা বিভাগের খুলনা জেলার কয়রা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, ঝিনাইদহের মহেশপুর, কুষ্টিয়ার খোকশা, মাগুড়ার শালিখা, মেহেরপুরের মুজিবনগর, বাঘেরহাটের মোরেলগঞ্জ, নড়াইলের লোহাগড়া, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা। সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জের তাহেরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও জগন্নাতপুর। সিলেটের ছাতক, গোয়াইনঘাট ও জয়িন্তাপুর, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ। রবিশাল বিভাগের উড়িরপুর ও মেহেন্দিগঞ্জ, ভোলা জেলার চরফ্যাশন, পিরোজপুরের নেছারাবাদ ও নাজিরপুর, ঝালকাঠির রাজাপুর ও বরগুনার তালতলি। এদিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে ৪৭ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রয়েছে। এসব কেন্দ্রে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নতুন নতুন ট্রেড চালুর পরিকল্পনা করাও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দক্ষ জনশক্তি ছাড়া অদক্ষ আধাদক্ষ কর্মীর চাহিদা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ জন্য দেশের সব জেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। করোনা পরিস্থিতি শেষ হওয়ার পরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন হবে। এ কারণেই দক্ষ কর্মী তৈরির ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দেশের সব জেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এ বিষয় নিয়ে কাজও শুরু করেছে মন্ত্রণালয়। মানিকগঞ্জে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। বিদেশের শ্রমবাজারে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর লক্ষ্যে সরকার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে যুগোপযোগী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নতুন নতুন ট্রেড চালুর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। দক্ষ কর্মী তৈরির লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে একটি বিশেষায়িত বায়ো-মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হচ্ছে। দেশকে ভালবাসে বলেই প্রবাসী কর্মীরা দেশে বিপুল অংকের রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে অধিক সংখ্যক দক্ষ কর্মী বিদেশে পাঠাতে পারলে রেমিটেন্সের উর্ধগতি অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও যেসব জেলা থেকে কম সংখ্যক কর্মী বিদেশে যায়, সেসব জেলা থেকে সরকার অধিক সংখ্যক দক্ষ কর্মী বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
×