ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ড্রাইভার মালেকের বিশাল সিন্ডিকেট

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

ড্রাইভার মালেকের বিশাল সিন্ডিকেট

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের গাড়ি চালক হয়ে আব্দুল মালেক বিশাল সিন্ডিকেট করে সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে অধিদফতরকে জিম্মি করে রেখেছিল। টেন্ডারবাজি, নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য ছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদফতরের যে কোন অনুষ্ঠানের আলোকসজ্জা বা অন্যান্য ডেকোরেশনের কাজও তার পছন্দমতো হতো। এভাবে অবৈধ পথে আয় করে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, দামী পাজেরো গাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ শত কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়েন। অবৈধ অস্ত্র ও জাল টাকা উদ্ধারের ঘটনায় করা পৃথক দুই মামলায় ১৪ দিনের রিমান্ডের প্রথম দিনে গ্রেফতারকৃত মালেক জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে মালেক স্বাস্থ্য অধিদফতরের দুষ্টচক্রের রাঘববোয়ালদের নাম প্রকাশ করেছে। সাবেক দুই ডিজির সঙ্গে তার সখ্যতা ছিল। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নানা অপকর্মের কথা ফাঁস করেছেন তিনি। মালেককে গ্রেফতারের সূত্র ধরে শীঘ্রই স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতারের জন্য মাঠে নামছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। ইতোমধ্যে তারা গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, রবিবার ভোরে র‌্যাব-১ এর একটি দল রাজধানীর তুরাগ কামারপাড়ার বামনেরটেক এলাকার ৪২ নম্বর হাজী কমপ্লেক্সে বিলাসবহুল সাততলা নিজ বাড়ির তৃতীয়তলা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। সেখানে তার কাছ থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দেড় লাখ বাংলাদেশী জালনোট, একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়। তাকে গ্রেফতারের পর আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। এরপর জানা যায়, বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রয়েছে তার। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, তৃতীয় শ্রেণীর সাধারণ কর্মচারী হয়েও মালেকের উত্থানের নেপথ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য খাতের মধুভোগীরা। গ্রেফতারের পর মালেক স্বাস্থ্য খাতের কয়েকজন দুর্নীতিবাজের নাম ফাঁস করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন স্বাস্থ্য অধিফতরের মহাপরিচালকের একান্ত সহকারী (পিএ)। বিভিন্ন সময় আরও একাধিক মহাপরিচালকের পিএ ছিলেন ফকির। নামে-বেনামে অনেক সম্পদ গড়েছেন তিনিও। তার দৃশ্যমান আয়ের সঙ্গে সম্পদের ফারাক অনেক। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। ফকিরের এত সম্পদ থাকার বিষয়ে বিশদ অনুসন্ধান চলছে। মালেক স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কবির হোসেন চৌধুরীর নাম ফাঁস করেছেন। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মজিবুল হক মুন্সি, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর তোফায়েল আহমেদ ভূঁইয়া ও প্রধান সহকারী সৈয়দ জালাল, অফিস সহকারী জাহাঙ্গীর আলমসহ পাঁচ-ছয়জনের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে মালেকের। সে সময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, স্বাচিপ ও বিএমএর বেশ কয়েকজন নেতার নাম ব্যবহার করে তিনি অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছেন। বছরের পর বছর স্বাস্থ্য খাতের কয়েকজন রাঘবোয়াল পুরো স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাদের মধ্যে টেন্ডারবাজি অন্যতম। এসব রাঘবোয়ালের ছত্রছায়ায় মালেক অধিফতরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাতে সফটওয়্যার নিয়ে টেন্ডার কল করা হলে ১৩জন এতে অংশগ্রহণ করেন। এদের সবাইকে ফোন করে মালেক তাদের টেন্ডারের অংশগ্রহণ করার জন্য নিষেধ করে। সে সময়ে তিনি বলেন, মিঠু ভাইয়ের লোক টেন্ডারে অংশ নিয়েছে। পরে বাধ্য হয়ে তারা টেন্ডার থেকে সরে যান। মালেকের এ রকম বহু অপকর্মের ঘটনা স্বাস্থ্য অধিফতরের সাক্ষী হয়ে আছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে মালেক জানিয়েছেন, তিনি নিয়োগ-বাণিজ্য করেই সবচেয়ে বেশি অর্থ কামিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মচারী সমিতি ও চালক সমিতির নিয়ন্ত্রণ তার হাতে ছিল। এ সময় স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং পরে গঠিত স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে নিয়োগ, বদলি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশনের টাকা তোলার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার সিন্ডিকেট গড়েন আব্দুল মালেক ওরফে মালেক ড্রাইভার ওরফে বাদল হাজী। তার সঙ্গে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কয়েকজন নেতারও রয়েছে গভীর সম্পর্ক। স্বাস্থ্য অধিদফতরে ড্রাইভার্স এ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন তৈরি করে নিজে সেই সংগঠনের সভাপতি হয়েছেন। এই পদের ক্ষমতাবলে তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতরের ড্রাইভারদের ওপর একছত্র আধিপত্য কায়েম করেছেন। ড্রাইভারদের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির নামে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করতেন। এছাড়া তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক প্রশাসনকে জিম্মি করে ডাক্তারদের বদলি ও পদোন্নতি এবং তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করেছেন। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, আবদুল মালেকের দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী নার্গিস আক্তার গৃহিণী। এই পরিবারে আবদুল মালেকের তিন মেয়ে ও এক ছেলে আছে। এই সংসারে তার মেয়ে নৌরিন সুলতানা বেলিকে অফিস সহকারী পদে, ভাই আব্দুল খালেককে অফিস সহায়ক পদে, ভাতিজা আব্দুল হাকিমকে অফিস সহায়ক পদে, বড় মেয়ে বেবির স্বামী রতনকে ক্যান্টিন ম্যানেজার হিসেবে, ভাগ্নে সোহেল শিকারীকে ড্রাইভার পদে, ভায়রা মাহবুবকে ড্রাইভার পদে, নিকট আত্মীয় কামাল পাশাকে অফিস সহায়ক পদে ও আবদুল মালেকের দ্বিতীয় স্ত্রী রাবেয়া খাতুন স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইব্রেরিতে বুক সর্টার পদে কর্মরত আছেন। নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য ছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদফতরের যে কোন অনুষ্ঠানের আলোকসজ্জা বা অন্যান্য ডেকোরেশনের কাজও তার পছন্দমতো হতো। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করেছিল টাস্কফোর্স। ওই সময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের দুর্নীতিবাজদের তালিকায় মালেকের নাম ছিল। তখন কিছুদিনের জন্য তিনি গা-ঢাকাও দেন। র‌্যাব, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক সূত্র জানায়, অষ্টম শ্রেণী পাস মালেক ১৯৮২ সালে সাভারে একটি স্বাস্থ্য প্রকল্পে গাড়িচালক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিবহন পুলে তার চাকরি স্থায়ী হয়। এরপর তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি এবং পরে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের ডিজির গাড়িচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে ২০১০ সালের ১১ নবেম্বর পর্যন্ত সাবেক ডিজি অধ্যাপক ডাঃ শাহ মনির হোসেনের আমলে অন্তত ১০০ জন স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগে তদবির করেছেন মালেক। সেই দুই বছরে দেশজুড়ে তদবির বাণিজ্যে অন্তত ১০০ জন স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ দিতে সক্ষম হয়েছেন মালেক। দুই অধিদফতরের প্রশাসন ও পেনশন বিভাগে মালেকের পাঁচ-ছয়জনের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। যারা তার পক্ষে কাজ করে। মালেকের তদবির না শুনলে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের পড়তে হতো মহাবিপদে। স্বাস্থ্য বিভাগ ঘিরে রয়েছে মালেকের নিজস্ব ‘সাংবাদিক’ সিন্ডিকেট। অখ্যাত কিছু সংবাদপত্রে সম্পাদক ও সাংবাদিকরা মালেকের কথার বাইরে চলত না। কোন কর্মকর্তা মালেকের কথা না শুনলে ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফলাও করে সংবাদ ছাপা হতো। কথিত সাংবাদিক সিন্ডিকেটের কারণে অনেক কর্মকর্তা তাকে ভয় পেতেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক ডিজি শাহ মনির হোসেন তা অস্বীকার করে বলেন, আমার সময় কমিটির মাধ্যমে সব নিয়োগ হতো। তৎকালীন মন্ত্রীসহ সবাই এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ফলে সে সময় নিয়োগ বাণিজ্যের সুযোগ ছিল না বলে মনে করি। বর্তমানে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের ডিজি এ এফ এম এনায়েত হোসেনের গাড়িচালক হিসেবে তার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ ছিলেন মালেক। এমন অভিযোগের বিষয়ে ডিজি বলেন, তার এসব কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের গাড়িচালক হলেও তার ক্ষমতা ছিল অনেক। তার বিরুদ্ধে মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাস জালিয়াতির তথ্যও পেয়েছেন তদন্তকারীরা। সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) একটি চক্রকে শনাক্ত করেছে, যে চক্রে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের প্রেসের কর্মী আব্দুস সালাম অন্যতম হোতা। এই সালামের সঙ্গে মালেকের রয়েছে ভাল সম্পর্ক। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রশ্ন ফাঁসের সিন্ডিকেটও মালেক ॥ সম্প্রতি সিআইডি ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মেডিক্যাল ও ডেন্টালের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে ভর্তি জালিয়াতির অভিযোগে ৯ জনকে গ্রেফতার করে। এ চক্রের অন্যতম হোতা জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া ওরফে মুন্নু গাড়িচালক মালেকের খালাত ভাই এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের প্রেসের কর্মী আব্দুস সালামের সহায়তায় জালিয়াতি করেছে। এই চক্রে জড়িত জেড এম এ সালেহীন শোভন নামে এক চিকিৎসক। প্রেসকর্মী সালামসহ সিন্ডিকেটের কয়েকজনের সঙ্গে মালেকের যোগাযোগ ছিল বলে তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বাস্থ্য শিক্ষার তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর নেতা মালেক। ফলে সম্পর্ক থাকতে পারে। বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছে। বাবার নামে মাজার বসিয়ে বিশাল জায়গা দখল ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়িচালক মোঃ আবদুল মালেক ওরফে বাদলের বাবার নাম আবদুল বারী। তিনি পেশাগত জীবনে ছিলেন সচিবালয়ের পিয়ন। ২০০৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর আবদুল বারী মারা যান। এরপর তার নামে টঙ্গীর কামারপাড়া এলাকায় একটি মাজার গড়ে তোলেন তারই সন্তান আব্দুল মালেক। মাজার শরীফের নাম দিয়েছেন শাহ সুফী আলহাজ আবদুল বারী মাইজভা-ারি। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললে তারা অভিযোগ করেন, জায়গাটি দখল করে মাজার বানানো হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, আবদুল বারী মাইজভা-ারি নামে কাউকে চিনতেন না তারা। আগে এখানে একটি ডেইরি ফার্ম ছিল। এটির দেখাশোনা করতেন আবদুল বারী নামে একজন। তিনি সচিবালয়ে পিয়নের চাকরি করতেন। তিনি মারা যাওয়ার পর হঠাৎ করেই এখানে গড়ে উঠেছে মাজার। প্রথম দিকে কয়েকজন প্রতিবাদ করলেও পরবর্তী সময়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করায় আর কেউ কথা বলেননি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, শুধু বাবার নামেই নয়, বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন জায়গা দখল করার জন্য নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করতেন আবদুল মালেক। তার সন্তান ইমন পড়াশোনা করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা মেট্রো-ল ২০-৯৫৪৪ নম্বর প্লেটের একটি গাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়ি ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করত সে। র‌্যাব জানায়, অভিযানের সময় মালেকের ছেলের ঘর থেকে ইয়াবা সেবনের আনুষঙ্গিক জিনিস পাওয়া যায়। গত ২০ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হওয়া আবদুল মালেক জিজ্ঞাসাবাদে নানা অপকর্মের কথা স্বীকার করেছেন। এদিকে সূত্রগুলো জানায়, গত বছরের ১৬ অক্টোবর জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মালেককে চিঠি দিয়ে তলব করে। মালেকের অর্থ পাচারের তথ্য পেয়ে তা খতিয়ে দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এরই মধ্যে উত্তরার গরিবে নেওয়াজ এ্যাভিনিউর প্রাইম ব্যাংকের শাখায় তার চারটি ব্যাংক এ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়িচালক মোঃ আবদুল মালেকের ঢাকায় সাতটি ফ্ল্যাট, চারটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন দুদক সচিব দিলোয়ার বখত। তিনি জানান, কারও বিরুদ্ধে যদি জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ পাওয়া যায। তাহলে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মালেকের স্ত্রীর নামে দক্ষিণ কামারপাড়ায় ২টি সাততলা বিলাসবহুল ভবন আছে। ধানম-ির হাতিরপুল এলাকায় ৪.৫ কাঠা জমিতে একটি নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন আছে এবং দক্ষিণ কামারপাড়ায় ১৫ কাঠা জমিতে একটি ডেইরি ফার্ম আছে। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকে নামে- বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত আছে বলেও জানা যায়। জানা গেছে, মালেক ড্রাইভার দুটি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী নার্গিস আক্তারের নামে তুরাগ থানাধীন দক্ষিণ কামারপাড়া রমজান মার্কেটের উত্তর পাশে ছয় কাঠা জায়গার ওপর সাততলার (হাজী কমপ্লেক্স) দুটি আবাসিক বিল্ডিং রয়েছে। যাতে মোট ২৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া আনুমানিক আরও ১০/১২ কাঠার প্লট কয়েকটি রয়েছে। বর্তমানে সপরিবারে এই ভবনেরই তৃতীয়তলায় বসবাস করেন মালেক। বাকি ফ্ল্যাটগুলোর কয়েকটি ভাড়া দেয়া রয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ড্রাইভার মালেকের মেয়ে বেবির নামে দক্ষিণ কামারপাড়া, ৭০ নম্বর রাজাবাড়ী হোল্ডিংয়ে প্রায় ১৫ কাঠা জায়গার ওপর ‘ইমন ডেইরি ফার্ম’ নামে একটি গরুর খামার রয়েছে। সেখানে প্রায় ৫০টি বাছুরসহ গাভী রয়েছে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, প্রাথমিকভাবে আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বিপুল সম্পদ রক্ষায় অবৈধ অস্ত্র বহন করতেন ড্রাইভার মালেক। অনেক টাকা লেনদেনের সময় জাল টাকা ব্যবহার করতেন। তার ফৌজদারি অপরাধের তথ্য পেয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। এরপর তার অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়ে অবাক হয়েছি। এরই মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন তাকে তলব করেছে। এ ছাড়া মানি লন্ডারিংয়ের তদন্তে সিআইডি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখবেন বলে আমরা মনে করি। র‌্যাব তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করবে তাদের।
×